উপদেষ্টাদের বেতন কত এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা

বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের বেতন সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। প্রথমবারের মতো উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার বেতন পেয়েছেন। ইতিমধ্যেও সেই পুরো টাকাটাই প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে প্রদান করেছেন বলে জানা গিয়েছে। বিগত ৬ অক্টোবর নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট করে তিনি এই তথ্যটি জানান।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে একটি ছবিও যুক্ত করেছেন। যেই ছবিতে দেখা গিয়েছে সর্বমোট ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা তিনি ত্রাণ তহবিলে ট্রান্সফার করেছেন। তিনি ওই পোষ্টের মাধ্যমে আরো মত প্রকাশ করেন যে আজই আমি প্রথমবারের মতো উপদেষ্টা পদের বেতন পেয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ত্রাণ-তহবিলে জমাও করেছে। সেই সাথে তিনি বাংলাদেশের চলমান ফেনীর ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মোকাবেলার সম্পর্কে মতপ্রকাশ করেন।

৫ই আগস্ট দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর ৮ ই আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে দায়িত্ব নেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস এবং সাথে আরো ১৬ জন উপদেষ্টা। যাদের মধ্যেও ২ জন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন।

উপদেষ্টাদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা

বাংলাদেশ সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মূলত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। সে হিসেবে মন্ত্রীগণের দায়িত্ব পালন করবেন উপদেষ্টারা।

এরপরই প্রেক্ষিতে একজন প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন প্রধান উপদেষ্টার সুযোগ সুবিধা একই রকমের হবে। অন্যান্য উপদেষ্টাদের বেতনের সুযোগ সুবিধা হবে মন্ত্রীদের মতোই। তবে দায়িত্ব পালন শেষে পথ হতে অব্যাহতি নেয়ার পর সবাই সাধারণ নাগরিক হিসেবেই বিবেচিত হবেন। কিন্তু এসরকারের প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব হতে অব্যাহতি নেওয়ার পর পরবর্তী দুই বছর সরকারি সুবিধায় আবাসন ফ্যাসিলিটিস পাবেন। বঙ্গভবনের বিভিন্ন সূত্রে সকল তথ্য গুলি জানা গিয়েছে।

২০১৬ সালের নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রী বেতন হচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এই অর্থ ছাড়াও বাড়ি ভাড়া বাবদ প্রদান করা হয় ১ লাখ টাকা এবং দৈনিক ভাতা প্রদান করা হয় ৩ হাজার টাকা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বেতন ঠিক একই নিয়মে হবে।

তবে শুধুমাত্র বেতনের টাকা ছাড়াও বিভিন্ন রকম সুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ট্রান্সপোর্ট এলাউন্স, বাসা ভাড়া, দৈনিক ভাতা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট সুবিধা ইত্যাদি। এছাড়া চিকিৎসা সহ নিজের দপ্তরের টেলিফোন এবং অন্যান্য বিল গুলো সরকারি খরচেই বহন করা হয়।

বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রী সরকারি ভাবে একটি বসবাসের ভবন পেয়ে থাকেন। কিন্তু সে ভবনের বিভিন্ন রক্ষণাবেক্ষণের খরচ, সাজানো গোছানোর কাজ ইত্যাদি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। তবে দায়িত্বরত কেউ চাইলে সেটি থেকে আলাদা হয়ে নিজের ভাড়া করা কিংবা নিজের বাড়িতেও থাকতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে চাইলে রাষ্ট্রের টাকায় বাড়িটি সুন্দরভাবে সাজানো গোছানোর কাজ করিয়ে দেওয়ার নিয়ম আছে।

রাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা ভাতার প্রদান করে থাকে। আর বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্ব থাকে স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালের সরকারের উপদেষ্টা একই ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবে বলে জানা গিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা

সরকার প্রধানমন্ত্রীর মতোই প্রধান উপদেষ্টাকেউ সকল ধরনের ভাতা এবং সুবিধা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রদান করা হবে। শুধু দেশের অভ্যন্তরীই নয় দেশের বাইরেও যে কোন ধরনের ভ্রমণের জন্য যে টাকা খরচ হয় তাও বহন করবে রাষ্ট্র। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার জন্য ট্রেনের বিলাসবহুল কামড়া, পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ সুবিধা, বিমান ভ্রমণের খরচ ইত্যাদি রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হয়। তাছাড়া প্রতিবছরে ২৫ লক্ষ টাকার জীবন বীমা কভারেজ সুবিধা রয়েছে। এসকল সুবিধাই পাবেন প্রধান উপদেষ্টা।

মন্ত্রী এবং উপদেষ্টাদের বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধা

বাংলাদেশ সরকারের একজন নির্বাচিত মন্ত্রী প্রতিদিন ভাতা পান ২ হাজার টাকা করে। সেই সাথে মাসে ১০ হাজার টাকা করে পান নিয়ামক ভাতা। তার বিভিন্ন কার্যলয়ের খরচের জন্য একটি তহবিলে জমা থাকে ১০ লক্ষ টাকা।

ব্যবহারের জন্য মোবাইল ফোন কেনার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে অর্থ পান ৭৫ হাজার টাকা। সকল ধরনের কার্য সম্পাদন করার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা পাবেন। এর সকল কিছুই উপদেষ্টারাও পাবেন।

উপদেষ্টাদের বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের সুবিধা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র। প্রধান উপদেষ্টের মতই বিভিন্ন রকমের ভাতার পাশাপাশি প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়া বাবদ পাবেন ৮০ হাজার টাকা। সেই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় খরচও রাষ্ট্র বহন করবে। বিমান ভ্রমণের জন্য বীমা সুবিধা রয়েছে ৮ লাখ টাকা। সেই সাথে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি ব্যবস্থা।

Leave a Comment