জেনে নিন ইসলামে কবর পাকা করা কি জায়েজ

আমাদের মুসলিম সমাজে একটি অত্যন্ত প্রচলিত প্রশ্ন হচ্ছে কবর পাকা করার বিধান কি? মানুষের জীবনের সবচাইতে বড় সত্য হচ্ছে এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। তবুও প্রিয়জন হারানোর কষ্ট কারোরই সহ্য হতে চায় না। তারপর আস্তে আস্তে হয়তোবা তাকে ছাড়া বেঁচে থাকা যায় কিন্তু মাঝে মাঝেই কষ্ট অনুভব হয়। মুসলমানদের মৃত্যুর পর বিধান হচ্ছে তাকে কবর দেওয়া। এটুকু পর্যন্ত বিষয় নিয়ে কারো মধ্যে কোন মতভেদ নেই।

কিন্তু কবর এবং দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে সেটির দেয়াল উঠানো, টাইলস লাগানো কিংবা পাকা করা নিয়ে বেশ আলোচনা হয় আমাদের সমাজে। কেউ কেউ আছেন যারা কিনা নিজের আত্মীয়-স্বজনদের কবরের অংশটুকুই চারপাশ দিয়ে পাকা করেন এবং দেয়াল উঠিয়ে দেন। আবার অনেকেই অলি আউলিয়ার কবরস্থানে মাজার স্থাপন করেন এবং তার আশেপাশে মসজিদ নির্মাণ করাকে অনেক সওয়াবের কাজ মনে করেন। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন কবর পাকা করা জায়েজ কিনা। আপনার মনের মধ্যেও যদি এ ধরনের কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচের পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

কবর পাকা করা নিয়ে হাদিস কি

আমাদের প্রিয় নবী আল্লাহর রাসূল (সা.) এর আদর্শে কোন কবর পাকা করার বিধান নেই। এমনকি সাহাবায়ে কেরামগণও কোনদিন এই ধরনের কাজ করেননি।

কিন্তু সেই যুগে কারো কবর চিহ্নিত করার জন্য রাসূল (সা.) কবরের মাঝখানের অংশটিতে উটের পিঠের কুজের মত করে কিছুটা উঁচু করে দিতেন। সেই সাথে মাথার দিকে একটি পাথর রেখে দিতেন সেটির চেনার জন্য।

কবর পাকা করা কি জায়েজ

আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (সা.) কবর পাকা করার বিষয়ে নিষেধ করেছেন। এ ব্যাপারে একটি হাদিস বর্ণিত আছে জাবির (রা.) থেকে – সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, রাসুল (সা.) কোন মৃত ব্যক্তির কবরে চুনকাম করতে এবং সেটির উপরে কোন ধরনের বাড়ি কিংবা গৃহ নির্মাণ করতে এবং সেটির উপরে বসতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস: ৯৭০)

আবুল হাইয়াজ আসাদী হতে আরেকটি কবর পাকা করা নিয়ে হাদিসে বর্ণিত আছে য, একবার হযরত আলী (রা.) বললেন, আমি কি তোমাকে সেই সকল কাজে পাঠাবো না, যে সকল কাজ গুলি প্রিয় রাসূল (সা.) আমাকে পাঠিয়েছিলেন? সেই সকল কাজ গুলি এই যে, যদি কোন মূর্তি দেখো তাহলে সেদিন নষ্ট করে ফেলবে এবং যদি কোন উঁচু কবর দেখা তাহলে সেটির সমান করে দিবে।
(মুসলিম, হাদিস:৯৬৯)

বুজুর্গ, গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের কবর পাকা করা কি জায়েজ

আমরা অনেক সময় পূর্ববর্তী সময়ের পীর আউলিয়া এবং বুজুর্গ ব্যক্তিদের কবর গুলো পাকা করা অবস্থায় দেখতে পাই। এমনকি হযরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ (রহ.) এর সময়ও অনেক আলেমের কবর পাকা হয়েছে। এমনকি বিখ্যাত অনেক আউলিয়া আছেন যাদের কবর পাকা এবং টাইলস করা অবস্থায় রয়েছে। উপরোক্ত হাদিসগু লোর মাধ্যমে আমরা ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছে যে আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) এ ধরনের কাজ করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি সাহাবারাও কখনোই এমন কাজ করেননি।

সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রখ্যাত ফিকাহাবিদ এবং হাদিস গবেষকগণ কবর পাকা করা কে জায়েজ বলেননি। বরং মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন।

সুতরাং বড়ো কিংবা ছোট যে কোন ধরনের ব্যক্তি হোক না কেন কবর পাকা করার বিধান সবার জন্য একই। এখানে বিধান বলতে কোনভাবেই টাইলস লাগানো কিংবা সিমেন্ট দিয়ে উত্তর দেয়াল অথবা পাকা করা যাবে না। এ ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্ট ভাবে নির্দেশনা রয়েছে। সেই সাথে ফিকাকবিদ ওলামায়ে কেরামরাও যুগে যুগে এই নিয়মকে বা পদ্ধতিকে মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন।

এব্যাপারে আরো একটি বড় বিষয় হচ্ছে যে সকল আলেম কিংবা বুজুর্গ ব্যক্তিদের কবর পাকা করে হয়েছে তারা কি পূর্বে একই কাজ করেছে? কিংবা তারা কি মৃত্যুর আগে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছে। মৃত ব্যক্তির পর কেউ যদি এই ধরনের কাজ করে তাহলে সেটি এই সেটি সেই বুজুর্গ ব্যক্তির কাজ বলেই সাব্যস্ত করা যাবে না। তাই সকল কবর পাকার বিষয়ে হাদিসে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে।

আবার আমাদের আশেপাশে কবরের পাশে মসজিদ নির্মাণ করার ব্যাপারেও দেখা যায়। এ ব্যাপারে শর্ত হচ্ছে যদি সে কবরস্থানে পরবর্তীতে আর কোন কবর না দেয়া হয় তাহলে সেটার উপর মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ। দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে সকল লাশ দাফন করা হয়েছে সেগুলো যদি মাটির সাথে মিশে গিয়ে থাকে। যদি উভয় শর্তে পালিত হয় তাহলে কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা যাবে। যদিও এটি অনুচিত একটি কাজ। (উমাতুল কারী: ৩/৪৩৫)

প্রিয়জন হারানোর শোক সবারই থাকে। অনেকেই বাসার আশেপাশে কোন ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হলে সেটি টাইলস দিয়ে বেশ উঁচু করে দেয়। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে এবং শহর এলাকায় এই ধরনের দৃশ্য অহরহ হয় দেখা যায়। আদতে এটি সঠিক নিয়ম নয়।

আশা করি কবর পাকা করা নিয়ে হাদিস এবং বিধান সম্পর্কে আপনাদেরকে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পেরেছে। কিন্তু আপনি যদি এই সকল বিষয়ে আরো জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে বিভিন্ন ধরনের হাদিসের বই পড়তে পারেন কিংবা কোন আলেমের শরণাপন্ন হতে পারেন।

Leave a Comment