জেনে নিন চাশতের নামাজের নিয়ম এবং ফজিলত সম্পর্কে

আমাদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরজ। কিন্তু এর পাশাপাশি আরো কিছু সালাত এবং ইবাদত রয়েছে যেগুলো বিশেষ বিশেষ কারণে করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম চাশতের নামাজের নিয়ম এবং ফজিলত সম্পর্কে আজকে আলোচনা করব। এছাড়াও রয়েছে তাহাজ্জুতের সালাত, ইস্তেগফারের সালাত ইত্যাদি।

তবে চাশতের নামাজের নিয়ম গুলি জানার আগে অবশ্যই আমাদের এর সময় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সেই সাথে জানতে হবে পড়ার নিয়মাবলী এবং ফজিলত সম্পর্কে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

চাশতের নামাজের সময় কোনটি

সূর্যোদয়ের পর দুই বা চার রাকাত যে নফল নামাজটি আদায় করা হয় তাকে বলা হয় ইশরাকের নামাজ। কেউ যদি এই সালাত আদায় করে তাহলে এর মাধ্যমে একটি হজ এবং ওমরাহ সোয়াব পাওয়া যায়।

এই ইশরাকের নামাজ পড়ার পর এবং তার পরের সময় থেকে শুরু করে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত পড়া যায় চাশতের সালাত। এর মানে হচ্ছে সূর্য যখন এক মিটার উপর পর্যন্ত উঠে যায় এবং তার পরবর্তী সময় ইশরাকের নামাজ আদায় করার পর কিছুক্ষণ জিকির করে চাশতের নামাজ পড়তে হয়। অর্থাৎ সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করে তৎন চাশতের নামাজ আদায় করতে হয়।

চাশতের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়

আমাদের প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাশতের ৪ রাকাত রাস্তার নামাজ আদায় করতেন। তাই আমরাও ৪ রাকাত করে আদায় করি। তবে বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা অনুসারে এই নামাজের সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৪,৮ এবং ১২ রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়।

চাশতের নামাজের নিয়ত কি জেনে নিন

বাংলায় বললে “আমি ২ রাকআত চাশতের নামাজ আদায় করছি” পাঠ করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। আপনি যে কোন সূরা দিয়ে এই সালাত টি আদায় করতে পারবেন। নামাজের সময় সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে অন্য যে কোন সূরা মিলাতে হবে এবং শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ এবং দোয়ায়ে মাসূরা পাঠ করে সর্বশেষ সালাম ফেরাতে হবে।

চাশতের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন

হযরত বুরাইদা (রাজি.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা.) বলেছেন,

মানুষের শরীরে সর্বমোট জোড়া আছে ৩৬০ টি। তাই মানুষের একান্ত কর্তব্য হচ্ছে প্রত্যেকটি জোড়ার জন্য জন্য সদগা প্রদান করা।

এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কার শক্তি আছে যে এই কাজ করবে? উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, তোমরা যদি মসজিদের কোথাও কোন থুতু দেখো তাহলে সেটি ঢেকে দাও, রাস্তায় মানুষের জন্য ক্ষতিকর কোন কিছু দেখলে সেটা সরিয়ে দাও, আর যদি এমন কিছু না পাও তাহলে চাশতের ২ রাকাত নামাজই যথেষ্ট।

উক্ত হাদিস দ্বারা এটি বোঝা যায় যে মানুষের শরীরের ৩৬০ টি জোড়ার সাদকার বিনিময়স্বরূপ চাশতের নামাজ আদাই যথেষ্ট। (আবু দাউদ শরীফ, প্রথম খন্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা)

এছাড়াও আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ৩ টি বিষয়ের আমল করার জন্য উপদেশ প্রদান করেছেন। যার মধ্যে একটি হচ্ছে প্রতিটি মাসের প্রথম তিন দিন রোজা পালন করা, চাশতের নামাজ আদায় করা এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিতরের সালাত আদায় করা। (বুখারী, হাদিস নং – ২৭৪)

দুনিয়ার জীবনে আসক্ত না হয়ে আমাদের সব সময় আখেরাতের কথা চিন্তা করা উচিত। কারণ দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত সময়ের ভোগ-বিলাসের জন্য পরকালে চিরস্থায়ী জাহান্নামের সাজা ভোগ করতে হতে পারে।

তাইতো প্রতিটি মুসলমানের উচিত নির্ধারিত ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য এবাদত গুলো সম্পর্কেও যথাযথ মনোযোগ হওয়া। এতে করে জীবনের প্রতি মোহ যে রকম কমে যায় ঠিক তেমনিভাবে পরকালের জন্য বেশ সওয়াব অর্জন করা যায়।

আমরা যতটুকু সময় মোবাইল ব্যবহার করে কিংবা অকারণের সময় নষ্ট করি সেগুলো বাদ দিয়ে এই ধরনের ইবাদত গুলো পালন করলে একদিকে যেমন আখিরাতে লাগে লাভবান হবেন ঠিক অপরদিকে দুনিয়ার আসক্তি কমে যাবে। আশা করি চাশতের নামাজের সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের যথাযথ ধরা দিতে পেরেছি।

Leave a Comment