আপনি কি জানেন মরিচা এবং মরীচিকার মধ্যে পার্থক্য কি

বিজ্ঞান বইয়ের দুটি অন্যতম আলোচিত বিষয় মরিচা এবং মরীচিকার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ে আমরা অনেক সময় ভুল করে থাকি। নামের মধ্য অনেকটা মিল থাকলেও কাজে দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। বিশেষ করে হাই স্কুলের বিজ্ঞান পরীক্ষায় অনেক সময়ই এই টপিকস থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। আবার বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায়ও লিখিত পরীক্ষায় এ সম্পর্কিত প্রশ্ন থাকে।

মরিচা এবং মরীচিকার মধ্যে পার্থক্য কি

ছোটবেলায় আমরা বইয়ে পড়েছি মরুভূমিতে মরীচিকা দেখা যায়। আবার একটা কথা প্রচলিত আছে মরীচিকার পিছনে ছুটো না। এটি হচ্ছে এমন একটি জিনিস যেটি শুধুমাত্র দেখা যায় কিন্তু ধরা বা স্পর্শ করা যায় না।

অনেক সময় রান্নার চুলা কিংবা চিমনির উপর দিয়ে ধোঁয়া উঠতে রেখেছেন। সেই ধাঁয়ার উপরে মনে হয় অনেকটুকু পানি ভাসছে। আবার পিচ রাস্তায় চলার সময় গাড়িতে বসে একটু দূরে লক্ষ্য করলে দেখবেন রাস্তাটিকে সম্পূর্ণভাবে ভেজা মনে হচ্ছে। কিন্তু যতই পথ আগাতে থাকেন না কেনো রাস্তা পুরোপুরি শুকনোই থাকে।

ঠিক তেমনি ভাবে মরুভূমিতে একজন পথচারী সামনে দেখতে পায় পানির পুকুর কিংবা বিশাল জলাধার। কিন্তু সে যতই এগিয়ে যাক না কেন কখনোই পানি পায় না শুধু বালু আর বালু ছাড়া।

উপরে এতক্ষণ আমি যে বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম তার সবই হচ্ছে মরীচিকা। এটি তৈরি হয় আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের কারণে। আমরা জানি আলো বিভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়। সূর্যের আলো যখন পিচ রাস্তায় কিংবা মরুভূমির বালুতে পতিত হয় তখন সেখানকার বাতাস গরম এবং হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। যেটি একটি কাঁচের ন্যায় কাজ করে। আর সেখানেই আলোর একটি বিশেষ প্রতিফলনের প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় এই মরীচিকা।

আশা করি মরীচিকা সম্পর্কে আপনাদের ধারণা হয়েছে। এবার আপনাদের মরিচা ও মরীচিকার মধ্যে মূল পার্থক্যটি তুলে ধরব।

বাসা বাড়িতে অনেক সময় লোহার একটি জিনিস দীর্ঘ দিনে ফেলে দিলে সেটির উপর জং যায়। আর এই জং ধরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় মরিচা। প্রায় সব ধরনেরই লোহার যন্ত্রপাতিতে মরিচা পড়ে যায় যদি এটিকে দীর্ঘদিন বাতাসে ফেলে রাখা হয়। মূলত এর রাসায়নিক নাম হচ্ছে আয়রন অক্সাইড। যেকোনো লোহার জিনিসকে বাইরে রেখে দিলে বাতাসের জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে এক ধরনের পদার্থ উৎপন্ন করে। যেটি কে বাংলায় আমরা জং ধরা বলে থাকি।

মূলত লোহা পানির সংস্পর্শে আসার কারণেই এই ধরনের বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বাতাসে জ্বলীয় বাষ্প থাকে যেটি মূলত পানি। আর একারণেই যে কোন লোহা দীর্ঘদিন বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে আস্তে আস্তে এর সাথে জলীয় বাষ্প বা পানি মিশ্রিত হয় এবং তৈরি করে মরিচা।

আশা করি মরিচা এবং মরীচিকার মধ্যেও পার্থক্য আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নাম একই রকম হলেও কাজের বেলায় আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে। একটি হচ্ছে আলোর প্রতিফলন এবং অপর একটি হচ্ছে লোহার সাথে পানির বিক্রিয়া। মরীচিকাকে ধরা, ছোঁয়া কিংবা স্পর্শ করা না গেলেও আপনি সহজেই মরিচা ধরতে পারবেন।

Leave a Comment