বিশ্বজুড়ে প্রচলিত আছে নানাজাতের মাশরুম চাষ পদ্ধতি। এটি এক দিকে যেমন অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার অপরদিকে এটি চাষ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। বিশেষত যারা ডায়েট করেন কিংবা কোন অসুখে ভুগছেন তাদের জন্য ডাক্তাররা রীতিমতো এটি খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আবার যারা নতুন উদ্যোক্তা রয়েছেন নতুন নতুন বিজনেস আইডিয়া খুঁজছেন কিংবা চাষাবাদের প্রতি ঝোঁক আছে তারাও মাশরুমের উপকারিতার কথা জানার পর এটি চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
যেকোনো ব্যক্তি অল্প একটু জায়গা নিয়ে শুরু করতে পারেন ওয়েস্টার, মিল্কি, প্যাডি স্ট্র জাতীয় মাশরুম চাষ পদ্ধতি। ওয়েস্টার মাশরুম গুলো চাষ করার জন্য সবচাইতে উপযোগী সময় হচ্ছে শীতকাল। বাকি জাতের মাশরুম গুলো মূলত মার্চের পর থেকে অর্থাৎ যখন ঠান্ডা কমতে থাকে তখন থেকেই চাষ করা যায়।
বাসায় মাশরুম চাষ পদ্ধতিতে লাগবে না কোন বাড়তি
এর জন্য আপনার প্রয়োজন স্পন বা মাশরুমের বীজ কিছু পরিমানে খড় এবং বেশ কিছু পলিথিনের ব্যাগ। এই কয়েকটি উপাদান আপনি যদি জোগাড় করতে পারেন তাহলে ঘরের মধ্য কিংবা বাড়িতে অল্প কিছু জায়গায় শুরু করতে পারেন মাশরুম চাষ পদ্ধতি এবং অর্থ লাভ করতে পারেন অনেক।
পলিথিন এবং খড় আমাদের আশেপাশে পেয়ে থাকি। কিন্তু মাশরুমের বীজ কোথায় থেকে পাবেন? আপনার এলাকার কৃষি অফিস, কৃষি দোকান কিংবা উপজেলা শহর গুলোতেই মাশরুমের বীজ পেয়ে যাবেন। আর বর্তমানে ইন্টারনেটে কিংবা অনলাইনে অর্ডার করেও যেকোনো ধরনের মাশরুমের বীজ ক্রয় করা যায়।
কিভাবে বাসায় চাষ করবেন মাশরুম?
প্রথমে খড় গুলোকে ১ থেকে আধা ইঞ্চি সাইজ করে কেটে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবনের মুক্ত করার জন্য গরম পানিতে প্রায় ২০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে দিতে পারেন। এমনকি ব্লিচিং পাউডার এবং চুন মেশানো পানিতে যদ ২৪ ঘন্টা রেখে দিতে পারেন তাহলেও এটি পুরোপুরি ভাবে জীবাণু মুক্ত হয়ে যাবেন।
তারপর খড় গুলোকে একবার জীবাণু মুক্ত করার পর এটি এমনভাবে পানি ঝরাতে হবে যেন খালি হাত দিয়ে খড় ধরলে হাতে একটি ভেজা ভেজা ভাব থাকে কিন্তু ঘর থেকে কোন পানি না পড়ে।
তারপর মোটামুটি সাইজের একটি পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ২ ইঞ্চির পুরো করে খড় বিছিয়ে দিন। তার উপর কিছু পরিমাণে মাশরুমের বীজ ছড়িয়ে দিন। এটা খুব সহজ একটি মাশরুম চাষ পদ্ধতি।
এভাবে একবার মাশরুমের ভিতর তার উপর আবার ২ ইঞ্চি পুরু করে পরদিন এবং তার ওপরে আবার বীজ ছড়িয়ে দিন। এভাবে মাশরুমের বীজ এবং খড়ের স্বাদ থেকে ৮টি স্তর তৈরি করুন। সব প্রক্রিয়া শেষ হলে পলিথিনটিকে ভালোভাবে বন্ধ করে দিন এবং অবশ্যই চাপ দিয়ে ঘর এবং মাশরুমের বীজ গুলোকে সেট করবেন। এতে করে ভিতরে হাওয়া প্রবেশ করার সুযোগ থাকবে না।
এরপরে আসে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পলিথিনে ১০ থেকে ১২ টি ছোট ছোট ছিদ্র করে তুলা দিয়ে সেই ছিদ্র গুলোর মুখ বন্ধ করে দিন। এতে করে ভিতরে বাইরের হাওয়া বাতাস ঠিকভাবে ঢুকি কিন্তু তুলোর কারণে ভিতরে ধুলাবালে প্রবেশ করতে পারবে না এমনকি পোকামাকড়ও প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ পোকামাকড় মাশরুম চাষ পদ্ধতির জন্য বেশ ক্ষতিকর।
মাশরুমের বীজ কিংবা মাশরুম কখন গজাবে
এই প্রক্রিয়াতে রেখে দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই আপনি প্যাকেটের গায়ে সাদা আস্তরণ দেখতে পারবেন যেটাকে বলা হয় মাইসেলিয়াম। যখন পুরো পলিথিন এই সাদা মাইসেলিয়ামে ভরে যাবে তখন সেটাকে বাইরে আলোর মধ্যে রাখতে হবে। তবে পুরোপুরি রৌদ্রে রাখা যাবে না ঘরের মধ্যে যে জায়গায় সবচাইতে বেশি আলো প্রবেশ করে সেখানে রাখতে পারেন।
আর প্রয়োজনীয়তা বুঝে মাঝে মাঝে এর উপরে পানি ছিটে দিতে পারেন কিংবা স্প্রে করতে পারেন। মাশরুম চাষ পদ্ধতির এই উপায়টি অনুসরণ করলে আপনি ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী মাশরুম পাবেন। আরেকটি ব্যাগ থেকে মোটামুটি ৩বার ফলানো পাবেন।
মাশরুম এর উপকারিতা কি কি
এতক্ষণ তো আমরা মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম। এবার তো এর উপকারিতা সম্পর্কেও জানা উচিত।
• মাশরুমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন উপাদান যেমন ভিটামিন বি, সি, ডি থাকায় এটি আমাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমায়।
• পুষ্টিকর এই খাদ্যটিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ফসফরাস এবং ভিটামিন ডি আছে। যেটা কিনা ছোট বাচ্চাদের দাঁত এবং হাড় গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• ক্যান্সার এবং টিউমার জাতীয় অসুখ প্রতিরোধ করতে ও মাশরুম বেশ উপকারী।
• এমনকি হেপাটাইটিস বি এবং জন্ডিস প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা থেকে রেহাই পাওয়া যায় নিয়মিত মাশরুম খেলে।
• মাশরুম এর উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এটি খাদ্য হজমের সহায়তা করে।
• আমাদের ত্বককে কোমল এবং ভেতর থেকে নরম রাখার ক্ষেত্রেও এটি ভূমিকা রয়েছে।
• যাদের কিডনী কিংবা এলার্জির রোগ রয়েছে তাদেরকে চিকিৎসকরা অনেক সময় মাশরুম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ এতে রয়েছে নিউক্লিক এসিড এবং এন্টি অ্যালার্জেন।
• বেঁচে থাকার খনিজ লবণ আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মাশরুম কত টাকা কেজি ২০২৫
আমরা ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছি মাশরুম চাষ পদ্ধতি এবং মাশরুম এর উপকারিতা। চলুন এবারের দাম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক। বর্তমান বাজারে ওয়েস্টার মাশরুম বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩০০ টাকা করে। তাজা বোতাম মাশরুম কিনতে পারবেন ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি পর্যন্ত। বিভিন্ন ই-কমার্স এবং অনলাইন প্লাটফর্ম গুলোতে কেন অথবা প্যাকেজিং মাসে পাওয়া যায়।
তবে এর ক্যাটাগরি এবং জাত ভেদে মোটামুটি ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজির মধ্য পাওয়া যায়। একেকজনের একেক ধরনের মাশরুম খেতে পছন্দ। বর্তমানে তো শুটকির মতো করে শুকনো মাশরুমও পাওয়া যায়।
তবে মাশরুমের উপকারিতা অনেক এবং মাশরুম চাষ পদ্ধতি অনেক সহজ। আপনি দৈনন্দিন জীবনের পুষ্টি চাহিদা মিটানোর জন্য কিংবা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এই অসাধারণ খাদ্য ও দ্রব্যটি নিয়ে কাজ করতে পারেন।