আধুনিক ও পূর্ববর্তী সময়ে থেকে সেলসের চাকরি চাহিদা ব্যাপক। কারণ এতে রয়েছে অধিক বেতন এবং ক্যারিয়ারে উন্নতি করার নানা ধরনের সুযোগ। যারা সেলস ম্যানেজার পদে চাকরি করবেন তাদের আগে থেকেই কিছু বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। এর কারণ হচ্ছে অন্যান্য জবের তুলনায় এই পদের দায়িত্ব গুলো বেশ চ্যালেঞ্জিং।
একজন সেলস ম্যানেজার সাধারণত বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন। এটি হতে পারে যে কোন ধরনের পণ্য কিংবা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। অনেকেই আবার মনে থাকেন শুধুমাত্র বাজারে বিভিন্ন ধরনের তেল, সাবান, শ্যাম্পু, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, মোবাইল ইত্যাদি বিক্রয় করায় শুধুমাত্র এই পদের কাজ। বর্তমানে অনেক ডিজিটাল সার্ভিস, ক্লিনিক, অনলাইন সার্ভিস ইত্যাদি বিক্রি করার জন্য সেলস ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। তাই আপনি কোন ধরনের ডিপার্টমেন্টের যোগদান করতে চান সেটাও আগের থেকে নির্ধারণ করতে হবে।
একজন সেলস ম্যানেজারের দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলি কি কি
• কোম্পানির সকল পণ্য কিংবা সার্ভিসের অর্ডার বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ। যেহেতু এক্সেকিউটিভ কিংবা অফিসার পদে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হওয়ার পর ম্যানেজার হয় তাই পরিকল্পনা গুলো আগেই করতে হয়।
• পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অধীনস্থ কর্মকর্তা এবং অফিসারদেরকে যথাযথ নির্দেশনা প্রদান।
• অধিক পণ্য বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ডিলার এবং অন্যান্য কোম্পানির সাথে চুক্তি বাস্তবায়ন।
• প্রতিদিন কি পরিমান পণ্য বিক্রয় হচ্ছে সেই অনুসারে বার্ষিক মাসিক ইতাদের রিপোর্ট করে প্রতিষ্ঠানের কাছে সাবমিট করা।
• প্রতিযোগিতা করার মতো বাজারে অন্যান্য কি ধরনের পণ্য এসেছে এবং তাদের সাথে নিজেদের তুলনামূলক রিপোর্ট তৈরি।
• যারা সরাসরি বিক্রয়ের সাথে জড়িত তাদের সমগ্রিক কাজে তদারকি করা।
• পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি, গ্রাহকের চাহিদা ইত্যাদি এনালাইসিস করা এবং নতুন নতুন পলিসি গ্রহণ করা।
• নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এবং বিক্রয় কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান।
• নতুন নতুন গ্রাহকদের কে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করার জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় সার্ভিস দেওয়া।
সেলস ম্যানেজারের চাকরির জন্য কি ধরনের যোগ্যতা লাগে
সাধারণত ম্যানেজার পদে চাকরি করার জন্য অবশ্যই অনার্স বা সমমান ডিগ্রী প্রয়োজন হয়। তবে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা এবং সার্ভিস এর সেলস ডিপার্টমেন্টে যোগদান করার জন্য টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড চাওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রার্থীকে কম্পিউটার সাইন্স, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি বিষয়ে অনার্স পাস হতে হয়।
আর সাধারণ মেনুফ্যাকচারিং এবং পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে এই ডিপার্টমেন্টে চাকরি করার জন্য মার্কেটিং, ফিনান্স অথবা যে কোন বিষয়ে অনার্স বা সমমান ডিগ্রী হলে চলে।
সাধারণত বয়স চাওয়া হয়ে থাকে ৩৫ থেকে ৪০ বছর। তবে অভিজ্ঞতা এবং পদের ধরনের উপর ভিত্তি করে এটি কোন কেন্দ্রে বেশি হতে পারে। তবে অবশ্যই এ যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত অভিজ্ঞতা চেয়ে থাকে।
অন্যান্য কি কি দক্ষতা এবং জ্ঞান থাকতে হয়
যেকোনো চাকরিতে ভালো করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি কিছু বাড়তি কেনার দরকার হয়। সেগুলি হল:
• নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী
• ব্যবসায়ের বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করার ক্ষমতা
• বিভিন্ন বিষয়াবলী বিশ্লেষণ করার দক্ষতা
• বাংলা ইংরেজি বই ভাষায় লেখা ও বলার দক্ষতা
• দরদাম এবং মধ্যস্থতা করার সক্ষমতা
• যেকোনো পরিস্থিতিতে সঠিক সমাধান বের করার দক্ষতা
• সবার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছা ইত্যাদি।
একজন বিক্রয় ব্যবস্থাপক প্রতি মাসে কত টাকা বেতন পেয়ে থাকেন
এটিও নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। মোটামুটি প্রথম সারির কোম্পানির একটি বিক্রয় ব্যবস্থাপকের বেতন প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গুলোর ম্যানেজারের বেতন কিছুটা কম।
আবার যারা একই প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন তাদের বেতনও অনেক বেশি। ক্ষেত্র বিশেষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেলস ম্যানেজারের বেতন সাধারণত ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সেটা কি আপনার জন্য সঠিক হবে
এটি নির্ভর করে সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষার উপর। যদি আপনার প্রচন্ড পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে, ধৈর্য থাকে এবং সেলস ডিপার্টমেন্ট ভালো লেগে থাকে তাহলে যোগদান করতে পারেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফ্রেসার নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতনে।
এ সকল পদে যোগদান করার পর আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ব্যবস্থাপক পদের উন্নীত হতে পারবেন। তবে যোগদান করার আগে নির্ধারণ করে নিন আপনি কোন ধরনের পণ্যের বিক্রয়ের সাথে নিজেকে জড়াবেন। সেগুলো হতে পারে কাপড়চোপড় কিংবা গার্মেন্টস আইটেম, প্লাস্টিক আইটেম, ফুড আইটেম কিংবা ডিজিটাল সার্ভিস। কারণ এক এক সময় আপনি একেক ধরনের পণ্যের বিকল্প প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পারলেও ভবিষ্যতে দ্রুত ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য এটি ভালো বিষয় নয়। ভালো সেলস ম্যানেজার পদে ক্যারিয়ার করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই যেকোনো ১ ধরনের পণ্যের উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।