বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া ও আমল

বিভিন্ন ধরনের অশুভ দৃষ্টি, খারাপ দৃষ্টি, কুদৃষ্টি কিংবা খারাপ ভাবে তাকানোকে আমরা বদ নজর বলে অভিহিত করে থাকি। আবার অনেকেই মানুষের সাফল্য এবং ভালো দিন দেখে নিজে খুশি হতে পারেনা বরং অভিশাপ দিয়ে থাকে কিংবা তার ক্ষতি কামনা করে থাকে। তাই প্রতিটি মানুষের বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া ও এ সংক্রান্ত আমলের মধ্যে থাকা উচিত।

এ বিষয়ে আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বদনজর সত্য। এটি মানুষকে উঁচু স্থান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে। (মুসনাদে আহমাদ)

এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি হাদিস এবং ঘটনাও রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা আমি আপনাদেরকে উল্লেখ করেছি। একদা সাহাবী সাহৱ ইবনে হুনাইফ গোসল করার জন্য শরীরের জামা সরিয়ে ফেলেন। আমের ইবনে রবিয়া তার সেই দেহটি দেখতে পান। তিনি মন্তব্য করে বলেন এত সুন্দর দেহ আমি এখন পর্যন্ত কোথাও দেখিনি। পরবর্তীতে সাহল ইবনে হুনাইফ ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হন। রাসুল (সা.) সংবাদ পেয়ে ইবনে রবিয়াকে নির্দেশ দেন সে যেন ওযু করার পর সেখান থেকে কিছু পানি একটি পাত্র রেখে দেন। পরবর্তীতে সে পানি যেন হুনাইফের শরীরে ঢেলে দেয়।

রাসুল (সা.) এর নির্দেশমতো নিয়ম পালন করে হুনাইফ পরবর্তীতে জ্বর থেকে রক্ষা পান। এমনকি তিনি ইবনে রবিয়াকে সতর্ক করে বলেন, তোমাদের কেউ নিজের ভাইয়ের কেন হ-ত্যা করতে চায়? যখন তিনি তুমি তার দেহ দেখে ছিলে তখন তার জন্য বরকতের দোয়া কেন করলে না। মনে রেখো বদনজর সত্য।

বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া ও আমল

যদি কারো জীবনে এই ধরনের কোন প্রভাব লাগে তাহলে তার ক্ষতি হয়। সেটি হতে পারে তার সৌন্দর্যের, সম্পত্তি বা অন্য কোন কিছুর ক্ষতি। আবার একজন মুসলিমের অবশ্যই উচিত অন্য একজন ভাইয়ের উন্নতি এবং তার জন্য মঙ্গল কামনা করা। কিন্তু যেহেতু অনেকের মনে এই ধরনের বিষয় নিয়ে হিংসা রয়েছে তাই আমাদেরকে সবসময় বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া করতে হবে।

এজন্য একজন ব্যক্তি আয়তুল কুরসি, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, নাস নিয়মিত আমল করতে পারবেন। আর অপন কোন মুসলমান ব্যক্তির উন্নতি দেখলে অবশ্যই মাশাআল্লা কিংবা “বারাকাল্লাহু ফিহি” বলা উচিত। এর মাধ্যমে মন আল্লাহ তায়ালার কাছে তার বরকতের প্রার্থনা করা হয়।

এখানে লক্ষণীয় আরো একটি বিষয় হচ্ছে নিজের অর্থ-সম্পদ প্রতিপত্তি মানুষের কাছে দেখে না বেড়ানো। এতে করে খুব সহজে ওপর একজন মানুষের মনে হিংসার উদ্ভব হতে পারে। পাড়া প্রতিবেশী, গরিব, দুঃখী আত্মীয়-স্বজন ইত্যাদিদের কে যতটুকু সম্ভব দান সদকা করা। সেই সাথে সম্পদের যাকাত প্রদান করা।

বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া

শিশুরাও বদনজর থেকে আক্রান্ত হতে পারে। তাইতো রাসুল (সা.) ছোটদের কে বিভিন্ন ধরনের দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন বলে উল্লেখিত রয়েছে। তিনি নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন বলে উল্লেখ রয়েছে।

উচ্চারণ:

আউযু বিকালী-মাতিল্লাহিত তাম্মাতি মীন কুল্লি শায়-ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া-মিন কুল্লি আইনীন লি আম্মাতিন”

এই দোয়াটির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শয়তানের আক্রমণ এবং কুনজর থেকে বাঁচার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। ঠিক একইভাবে বিভিন্ন ক্ষতিকর (বিষধর) প্রাণী কিংবা বদ নজরের কু প্রভাব থেকেও সাহায্য চাওয়া। (বুখারী)

উপরিক্ত দোয়াটি ছাড়াও আরো দোয়া রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে শয়তানের কোন নজর থেকে রক্ষা করে থাকে। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এবং কুরআনের পাঠ করা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ তা’আলা সবাইকে বদনজর থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন। আমিন

Leave a Comment