গরম কিংবা শীত উভয় সময়েই বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে আসতে পারে বাড়তি বিল। তাইতো বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় গুলি জেনে নিয়ে দৈনন্দিন জীবনে সাশ্রয় করতে পারেন বেশ কিছু অর্থ। আমাদের জীবনের অপরিহার্য এই জিনিসটি মাঝে মাঝে বিড়াম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাস শেষে কয়েক হাজার টাকা বিল দিতে বেশ নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায়।
তাইতো কোন কিছুর ব্যবহার বাদ না দিয়ে কিংবা সামান্য কিছু সচেতনতা অবলম্বন করলেই বেশ কিছু টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন।
বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় কি কি
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমি আলোচনা করব কিভাবে বাসা বাড়ির প্রতিদিনের এই খরচটিকে কিছুটা কমাতে পারেন। এব্যাপারে আপনার নিজের সতর্কতার পাশাপাশি পরিবারের সবাইকেও একইভাবে সচেতন হতে হবে। তাই নিজের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং অন্যান্য ফ্যামিলি মেম্বারদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করুন।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী জিনিস ক্রয় করুন
আপনি নিশ্চয়ই বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে দেখেছেন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব, টিভি, ফ্রিজ, এসি ইত্যাদি। পুরানো দিনের এনালগ যন্ত্রপাতি গুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ইলেকট্রিসিটি নিয়ে থাকে। তাই সেগুলো আস্তে আস্তে পরিবর্তন করে আধুনিক যুগের এবং অত্যন্ত ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলো ক্রয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আগের জিনিস গুলি বিক্রি করে দিতে পারেন।
আপনার বাসা বাড়ির মিটার নিয়মিত পরীক্ষা করুন
অনেক সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অতিরিক্ত বিল আসে। তাই কারেন্ট বিল কমানোর উপায় হিসেবে বাসা বাড়ির মিটারটি নিয়মিত পরীক্ষা করতে পারেন। আপনার ব্যবহার অনুযায়ী মিটার ঠিকঠাক ভাবে রিডিং করছে কিনা সেটি যাচাই করা অত্যন্ত জরুরী।
যদি কোন ধরনের ত্রুটি দেখা দেয় অথবা ব্যবহারের তুলনায় উল্টাপাল্টা বিল আসে তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিন।
ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা
আমরা অনেক সময় যেকোনো ডিভাইস কিংবা জিনিস ব্যবহার করা শেষে কারেন্টের সাথে প্লাগ লাগিয়ে রাখি। যেটি অত্যন্ত বাজে অভ্যাস। এতে করে একদিকে যেমন বেশি বিল আসতে পারে অপরদিকে আপনার ডিভাসটিও খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এজন্য যেকোনো বস্তু ব্যবহারের পর সেটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখুন।
বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় হিসেবে এসির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
বর্তমানের আধুনিক এসি গুলো গরম এবং শীতকালে সমানভাবে ব্যবহার করা যায়। কারণ এগুলো দিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি ঘর গরম রাখারও ব্যবস্থা রয়েছে। অতিরিক্ত এসি এবং তাপমাত্রা ব্যবহার করার কারণে আসতে পারে বাড়তি কিছু বিল। তাই এয়ারকন্ডিশন ব্যবহারে ঘরের টেম্পারেচার সবসময় নরমাল রাখার চেষ্টা করুন। কিছুদিন পর পর এই এসিটি সার্ভিসিং করে নিন। দীর্ঘদিন সার্ভিসিং না করানোর ফলে ভিতরে ধুলাবালি জমে যান্ত্রি গোলযোগ দেখা দেয় এবং অতিরিক্ত বিল আসতে পারে।
ঘরের ভেতরে প্রাকৃতিক পরিবেশ
বাসা বাড়িতে বিশেষ করে শহরের ফ্ল্যাট গুলোতে বেশিরভাগ সময়ই দরজা, জানালা বন্ধ থাকে। এতে করে ঘরের ভেতরে পরিবেশ বেশ কিছুটা গোমোট হয়ে যায়। কারেন্ট বিল কমানোর উপায় হিসেবে ঘরের ভেতরে বাইরের বাতাস গুলো প্রবেশ করতে দিন। এতে করে পর্যাপ্ত আলো, বাতাসের কারণে বাড়তি বাল্ব এবং ফ্যান কোনোটি ব্যবহার করতে হবে না।
তাপ প্রতিরোধী উপকরণ ব্যবহার করুন
বর্তমানে আধুনিক টেকনোলজিতে বাসা বাড়ির দেয়াল, ছাদ কিংবা মেঝেতে তাপ প্রতিরোধী নানা উপকরণ ব্যবহার করা যায়। এর জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফাইবার গ্লাস এবং ফোম পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহারের ফলে ঘরের টেম্পারেচার অনেকটাই কম থাকে। তাই বাড়তি হিসেবে এসি কিংবা ফ্যান ব্যবহার করতে হয় না।
পরিবারের সবার মধ্যেও সচেতনতা গড়ে তুলুন
ধরুন আপনার রুম হতে ১০ মিনিটের জন্য অন্য একটি রুমে যাবেন, কিংবা ওয়াশরুমে যাবেন, এমন সময় অবশ্যই ঘরের ফ্যান, এসি কিংবা লাইট বন্ধ করে নিবেন। এভাবে প্রতিদিন ২০ থেকে ২০ মিনিটের কারণে মাস শেষে অনেক অর্থ আপনার বেঁচে যাবে। এমনকি পরিবারের সবার মধ্যেও এই ধরনের সুন্দর অভ্যাস গুলি গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। বিল কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে সবচাইতে কার্যকরী পদ্ধতি।
কারণ আমাদের বেশির ভাগই অপচয় এই ধরনের অভ্যাস না থাকার কারণে হয়ে থাকে। এমনকি বাসা থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলো চালু অবস্থায় বের হয়ে যাওয়ার অনেক অভ্যাস হয়েছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করুন
পৃথিবী জুড়ে উষ্ণ আবহাওয়া এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বৃক্ষ নিধন। এর ভুক্তভোগী আমরা সবাই এবং ভবিষ্যতেও এর ফলে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। তাই আপনি ব্যক্তি হিসেবে যতটুকু সম্ভব গাছপালা রোপণ করার চেষ্টা করুন। শহর এলাকায় বাসার কাছে যদি কোন মাটি না থাকে তাহলে বারান্দায় ফুলের টবে কিছু চারা লাগিয়ে দিন। যেটি আপনার পুরো বাড়িকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিভিন্ন যন্ত্রপাতি গুলো নিয়মিত সার্ভিসিং করুন
আপনি যদি এই কারেন্ট বিল কমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার বাসা বাড়ির বিভিন্ন টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিনের মত সরঞ্জাম গুলি করে নিয়মিত সার্ভিসিং করা অত্যন্ত জরুরী। যেকোনো যন্ত্রপাতির প্রধান এবং সবচাইতে বড় শত্রু হচ্ছে ধূলাবালি। আপনি বাড়িতে যত যত্ন করেই রাখেন না কেন, ভিতরে কিছু ধুলাবালি অবশ্যই প্রবেশ করে। এতে করে বাড়তে থাকে যান্ত্রিক সমস্যা এবং আসতে থাকে অনেক বিদ্যুৎ বিল। তাই নিয়মিত সার্ভিসিং করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
কারেন্ট বিল কমানোর উপায় হিসেবে সৌর শক্তি ব্যবহার করুন
শুনে হয়তোবা আপনার কাছে অনেক টাকা-পয়সার ব্যাপার এবং ঝামেলার মনে হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ বিল কমানোর এই উপায়টি কার্যকরী মনে হচ্ছে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনি যদি একবার এটি ব্যবহার করতে শুরু করেন তাহলে এর গুরুত্ব বুঝতে পারবেন। বেশ কিছু টাকা বিনিয়োগ করে দীর্ঘ মেয়েদের জন্য আপনি অনেক বিল হতে বেঁচে যাবেন।
এতে করে আপনার অর্থ সাশ্রয় হবে এবং লোডশেডিং এর ঝামেলা পোহাতে হবে না। আর পরিবেশবান্ধব হওয়ায় প্রকৃতিতেও অনেক উপকার হবে। আপনার বাসা বাড়ির চাহিদা অনুযায়ী সুন্দর একটি সোলার সিস্টেম সেটআপ করে নিতে পারেন। ছাদে জায়গা না থাকলে জানালা কিংবা বারান্দার যে পাশের রোদ পড়ে সেখানেও লাগিয়ে নিতে পারেন ছোট একটি সোলার প্যানেল।
সচেতনতা
• আপনি যদি কোন একটি যন্ত্র বারবার বন্ধ করেন এবং চালু করেন তাহলে সেটি বেশি পরিমাণে ইলেকট্রিসিটি গ্রহণ করবেন। তাই এধরনের অভ্যাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন।
• এমনকি একটি মোবাইল ফুল চার্জ হয়ে গেলে সেই চার্জারও প্লাগ থেকে খুলে অথবা সুইচ অফ করে রাখুন।
• বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় হিসেবে যে সকল যন্ত্রের স্টার রেটিং দেখে কিনুন। যেটির রেটিং বেশি সেটির ইলেকট্রিসিটি ব্যবহারের পরিমাণও তত কম। তাই এটি দেখে ইলেকট্রিক জিনিসপত্র ক্রয় করুন।
• পুরনো তার ব্যবহারের ফলে বেশি পরিমাণে ইলেকট্রিসিটি খরচ হতে পারে। আগে তৈরি করা বাসা বাড়িতে দেখা যায় ১০ থেকে ১৫ বছরের অধিক পুরানো তার রয়েছে। আপনার বাড়িতে যদি এই ধরনের পুরনো কেবল ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব পরিবর্তন করুন।
• আপনি যদি এয়ারকন্ডিশনের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামান তাহলে সেটি বেশ পরিমাণে ইলেকট্রিসিটি গ্রহণ করবে।
• দিনের বেলা ১ ঘন্টা ফ্রিজ বন্ধ রাখতে পারেন। এতে করে ফ্রিজে যেমন বিশ্রাম পাবে তেমনি আপনারও কিছু অর্থ বাঁচবে।
উপরে উল্লেখিত পদক্ষেপ গুলো সম্পর্কে সদা সচেতন থাকুন। এর মাধ্যমে একদিকে আপনি যেমন বিল সাশ্রয় করতে পারবেন ঠিক তেমনি ভাবে বাসাবাড়ি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি অনেক দিন পর্যন্ত সুন্দর ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনি যদি প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে বিল সাশ্রয় করতে পারেন মাস শেষে সেটি গিয়ে সেটে দাঁড়ায় ৬ হাজার টাকা। যেটাতে আপনি অন্য কোন কাজ করতে পারতেন। বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় গুলি খুব একটা কঠিন কিছু নয়। শুধুমাত্র নিয়মিত কিছু অভ্যাস এবং পদ্ধতি অনুসরণ করলেই বাড়তি বিলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।