হেয়ারফল নিয়ে আমি এর আগেও বেশ কয়েকটি কনটেন্ট আপনাদেরকে উপহার দিয়েছি। আজকের টপিকটি তার চাইতেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাদের কিনা আর কোনভাবেই হেয়ার গ্রো করার কোন সম্ভাবনা নেই তাদের জন্য বাংলাদেশের চুল প্রতিস্থাপনের খরচ এবং অন্যন্য আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
একজন মানুষ তখনই হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট যখন তার আর অন্য কোন আশা অবশিষ্ট থাকে না। আবার বিশ্বজুড়ে এটি বর্তমান সময়ের খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। হলিউড, বলিউডের জনপ্রিয় সেলিব্রেটি, বিশ্ব বিখ্যাত বড় বড় ধনী ব্যক্তি এবং তারকারা এই পন্থা বেছে নিয়েছেন। এর অন্যতম অসুবিধা হচ্ছে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার পর বোঝার কোনো উপায় থাকবে না যে আপনার মাথায় হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করানো হয়েছে। অর্থাৎ সেটিকে একদমই অর্গানিক মনে হয়।
হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট আসলে কি
আপনি নিশ্চয়ই গাছ রোপন করেছেন। নার্সারি থেকে বিভিন্ন গাছের চারা কিনে এনে আমরা বাড়িতে সেটি রোপন করে থাকি। তারপর প্রয়োজনীয় সার, পানি ইত্যাদি দিয়ে আস্তে আস্তে সেটিকে বড় করে।
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট ঠিক একই রকম একটি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে মাথার পেছনের অংশ, পাশের অংশ, বুক পিঠ এই সকল স্থান হতে চুল গুলি তুলে এনে মাথার উপরের অংশ লাগানো হয়। অনেক সময় মুখের দাড়িগুলো তুলে এনে মাথায় লাগিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ এক স্থানের হেয়ার মাথায় এনে রোপণ করার প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা চুল প্রতিস্থাপন। আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসা পদ্ধতির অন্যতম অবদান এটি।
বাংলাদেশের চুল প্রতিস্থাপনের খরচ
এবার চলুন খরচ নিয়ে আলোচনা করে নেই। এটা নির্ভর করে মূলত আপনার মাথার বর্তমান অবস্থা কোন ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করবেন ইত্যাদি বিষয়ের উপর। সঠিকভাব এই প্রক্রিয়াটি শেষ করার জন্য যথাযথ টেস্ট এবং পন্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চুল প্রতিস্থাপনের খরচ খুব বেশি ব্যয়বহুল নয়। যদি আপনার মাথায় মোটামুটি কিছু পরিমাণে চুলও থেকে থাকে তাহলে খরচ হতে পারে ৪০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। যদিও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটি চুল প্রতিস্থাপনের জন্য চার্জ প্রযোজ্য করে থাকে। সেই হিসেবে একটি চুলের জন্য ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকাও খরচ হতে পারে। আর যাদের মাথার উপরে অংশ একেবারে চুল নেই তাদের মোটামুটি ৪ থেকে ৫ হাজার চুল প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে।
এটা তো গেল আমাদের দেশের খরচের পরিমাণ। অনেকেই আবার বাজেট বাড়িয়ে ভারত সহ উন্নত বিশ্ব হতেও এই চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। সে ক্ষেত্রেও খরচ ২-৩ লক্ষ টাকা থেকে ৭/৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে বাংলাদেশের এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক বেশি উন্নত।
চুল প্রতিস্থাপনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ইতিমধ্য আপনারা খরচ সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন। সঠিক সময়ে সুচিকিৎসা গ্রহণ করলে শুধুমাত্র মেডিসিনের মাধ্যমেই মাথার চুল পড়া রোধ করে স্বাভাবিক করা যায়। কিন্তু বয়সসহ ইত্যাদি কারণে মেডিসিন কোন ধরনের কাজে নাও আসতে পারে। আবার অল্প বয়সে মাথায় টাক মানুষের আত্মবিশ্বাসকে এতটাই কমিয়ে দেয় যে অনেকেই হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে। যার কারণে অনেক টাকা খরচ করে যে কোন ধরনের ঝুঁকি নিতেও রাজি থাকে।
মানুষের চুলের সাথে মনের সাথে একটা নির্ভর সম্পর্ক রয়েছে। মাথায় পড়তেই সুন্দর কোন চুল থাকলে মনোবল থাকে অনেক শক্ত। যখন এটি হারাতে শুরু করে তখন আমরা বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া পদ্ধতি এবং মেডিসিন ব্যবহার করা শুরু করি। কিন্তু সেগুলো যখন কোন কাজে আসে না তখন আস্তে আস্তে মন অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে। তবে চুল প্রতিস্থাপনের খরচ জানার পাশাপাশি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো সম্পর্কেও ভালোভাবে ধারণা লাভ করা প্রয়োজন। কারণ যদি সঠিক উপায়ে এটি করানো হয় কিংবা কোনভাবে ব্যর্থ হয় তাহলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
• সার্জারি শেষ করার পর রক্ত পড়তে পারে।
• মাথার যেখানে চুল লাগানো হয়েছে এবং যে স্থান হতে চুল নেওয়া হয়েছে উভয় জায়গায় পুজ কিংবা ক্ষত তৈরি হতে পারে।
• চুল প্রতিস্থাপনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চুলকানি হওয়া। যদিও এটি সাধারণ একটি সমস্যা এবং চিকিৎসকরা এর জন্য আলাদা মেডিসিনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
• এলার্জি কিংবা অন্যান্য কারণে জায়গা গুলি ফুলে যেতে পারে এবং চুলের গোড়ায়ও ফুলতে পারে।
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের পর চুল কি পড়ে যেতে পারে
এর সঠিক উত্তর জানার আগে আপনাকে আরো কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে হবে। আমাদের মাথার দাড়িতে এবং বুকে, পিঠে যেই চুলগুলো থাকে সেগুলো সাধারণত হরমোনের সাথে খুব একটা জড়িত থাকে না। তাই স্থান গুলি হতে যদি চুল এনে মাথায় রোপন করা হয় তাহলে সেগুলো পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। যদিও চিকিৎসকরা বলে থাকেন যে ৫% থেকে ১০% চুল ঝরে যেতে পারে। তবুও সঠিক পদ্ধতি এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এটি কমিয়ে আনা সম্ভব।
আপনার মাথায় যদি এখনও কিছু পরিমাণে চুল অবশিষ্ট থাকে তাহলে সেগুলো সর্বোচ্চ যত্ন নেয়। এছাড়াও ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় মেডিসিন ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। এতে করে চুল প্রতিস্থাপনের খরচ সম্পর্কে আপনাকে ভাবতে হবে না। কারণ সঠিক জীবন যাপন এবং খাদ্যাভাসের মাধ্যমেও হরমোনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে করে মাথার চুল সহ আপনার শরীর পুরোপুরি সুস্থ থাকবে এবং জীবন ও সুন্দর হবে।
আর যদি এই ধরনের সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতেই হয় তাহলে অবশ্যই ভালো কোন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।