অর্থনীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মূলধন ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আমরা অনেক সময় কনফিউশনে থাকি। অনেকেই এই দুটিকে একই মনে করে ভুল করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যে লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
প্রথমেই আসে মূলধন সম্পর্কে। আমরা পন্য উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল, লোকবল ইত্যাদি ব্যবস্থা করে থাকি। যেকোনো ধরনের উৎপাদন কিংবা সার্ভিসের জন্য প্রয়োজন পূর্ব পরিকল্পনা এবং বিশেষ প্রস্তুতি। আর এই প্রস্তুতি মূলত মূলধন হিসেবে বিবেচিত। অর্থনীতির ভাষায় বলতে গেলে মানুষের দ্বারা যে সকল দ্রব্য উৎপাদিত হয়ে পুনরায় অন্য একটি পণ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় মূলধন। অর্থাৎ কোন একটি পণ্য উৎপাদনের জন্য যে উপাদান গুলো ব্যবহার করা হয় তাই হচ্ছে মূলধন।
অপরদিকে মূলধন বৃদ্ধির জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তাকে বলা হয় বিনিয়োগ। কারণ উৎপাদনের একটি পর্যায়ে গিয়ে মূলধনের পরিমাণ কমতে পারে কিংবা চাহিদা বাড়তে পারে। আর সেটির ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে কিংবা উৎপাদন বাড়ার জন্য মূলধনের বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়। আর তখনই যে অর্থ ব্যয় করা হয় তাকে আমরা বিনিয়োগ নামের অভিহিত করতে পারি।
মূলধন ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য কি
উপরেরটা সজ্ঞা থেকে আপনারা আশা করি কিছুটা ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে আমি আরো স্পষ্টভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করছি।
ধরুন আপনার একটি প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে কাঠের তৈরি বিভিন্ন আশপাশপপত্র তৈরি করেন এবং বিক্রি করেন। এই আসবাব গুলি তৈরি করার জন্য প্রয়োজন কাঠ, মেশিন, মিস্ত্রি, বিদ্যুতের সংযোগ, রং, লোহা ইত্যাদি। উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন কারখানা বা দোকান। সেই সাথে আরো অনেক আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র লাগতে পারে। যার মধ্যে পরিবহন ব্যবস্থাও অন্যতম। এ সকল কিছুই হচ্ছে আপনার ব্যবসায়ের মূলধন। এখন ধরুন কোন কারণে আপনার উদ্বোধন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন কিংবা মূলধন গুলোই পরিমাণ কমে গিয়েছে।
তাই গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আপনাকে এসকল সরঞ্জামের বাড়তি ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান হতে লোন নিয়ে যদি আরো ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন মূলধন বৃদ্ধির পেছনে তাহলে সেটিকে নিয়োগ নামে অভিহিত করা হবে। আশা করি এখন আপনারা মূলধন ও বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পেরেছেন।
এই দুইয়ের মধ্যে আমার বেশ পার্থক্য থাকলেও একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিনিয়োগের সাথে আরও অনেক কিছু জড়িত রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ পরিকল্পনা ইত্যাদি। অর্থাৎ অর্থ বিনিয়োগ করার পর সেটির যদি লাভ না আসে কিংবা কার্যকর না হয় তাহলে ব্যবসায় লস হতে পারে।
যে কোন অভিনয়গের আগে দরকার সঠিকভাবে পরিকল্পনা। যে সকল ক্ষেত্রে মূলধন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়ে, ব্যবসার চাহিদা অনুসারে সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা তেমন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু কোন কারণে মূলধনের পরিমাণ কমে গেলে সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করার আগে ভবিষ্যৎ চাহিদা সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই করা প্রয়োজন।