আমাদের শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে ইউরিন। অনেক সময়ই প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ সম্পর্কে আমরা না জানার কারণে ভূল পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। এর কারণে শারীরিক জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং নারী ও পুরুষ এধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। এমন কি বর্তমান সময়ে এই রোগটি প্রায়ই দেখা যায়।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এটি ভালো করা সম্ভব। তবে রোগের লক্ষণ জানাও অত্যন্ত জরুরি। চলুন এর কারণ সহ নানা ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় আজকে জেনে নেব।
ইউরিন ইনফেকশন (Urine Infection) আসলে কি
আমাদের দেহের কিডনি শরীরের নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের কাজ করে থাকে। এ সকল বর্জ্য প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। আমাদের অঙ্গ গুলোর মূলতন্ত্রের একটি অন্যতম অংশ হচ্ছে এই ইউরিন সিস্টেম। কোন কারণে এখানে ইনফেকশন হলে বা সংক্রমণ হলে সেটিকে আমরা ইউনারি ট্র্যাক ইনফেকশন বা ইউটিআই বলে থাকি।
প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো কি কি
• বেশিরভাগ সময়েই পেশাবে জ্বালাপোড়া কিংবা বেশ ব্যথা করতে পারে।
• স্বাভাবিক পরিমাণ পানি পান করার সত্ত্বেও ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া অন্যতম একটি লক্ষণ।
• রাতের বেলা বারবার ওয়াশরুমে যাওয়ার চাপ বৃদ্ধি পাওয়া এবং ঘুমের মধ্যে প্রস্রাবের বেগ পাওয়া।
• সাধারণের তুলনায় অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত এবং ঘোলাটে রঙের প্রস্রাব হতে পারে।
• অল্প একটু পেশাবের বেগ পেলে সেটি ধরে রাখা অনেকটাই মুশকিল হয়ে যায়।
• তলপেটে অল্প কিংবা প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে এবং পেশাবের সাথে রক্ত বের হতে পারে।
• দেহের কোমরের পেছনের অংশে পাঁজরের নিচের দিকে কিছুটা ব্যথা অনুভূত হওয়া।
• মাঝে মাঝে জ্বর আসা কিংবা শরীর কাঁপুনি দেওয়া।
• শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে কমে গেলেও সেটিকে প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
• অল্প একটু কাজ করলেই ক্লান্তি লাগতে পারে এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
• বড়দের ক্ষেত্রে মেজাজ খিটখেটে হতে পারে মানসিক বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে কিংবা কারণ ছাড়াই ক্ষোভ তৈরি হতে পারে।
• প্রস্রাবের কারণে জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কিংবা বমি হলে আপনাকে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় টেস্ট করতে হবে।
প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ কি কি
নারী-পুরুষ, বাচ্চা উভয়ের ক্ষেত্রে মূলত পায়খানায় থাকা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু মূত্রতন্ত্রের ভেতরে প্রবেশ করলে এই ধরনের ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ইউরিনারি ইনফেকশন নারী পুরুষ সবারই হতে পারে।
নারীদের মূত্রনালী পুরুষদের তুলনায় অনেক ছোট এবং পায়ু পথের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় তাদের এই সমস্যাটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ পায়ুপথ থেকে খুব সহজেই জীবাণু মূত্রনালিতে প্রবেশ করে ইউরেন ইনফেকশনের কারণ হতে পারে।
• তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে এ ধরনের সমস্যা হয়।
• স্বাভাবিকভাবে পেশাব কিংবা মূত্রতন্ত্রের কার্যক্রমের বাধা সৃষ্টি হলে অথবা কিডনিতে পাথর হলেও ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে।
• নারী ও পুরুষ অভিক্ষেত্রে যৌনাঙ্গ যদি সঠিকভাবে পরিষ্কার এবং শক্ত না করা হয় তাহলে এটি হতে পারে।
• অনেক সময় ডায়াবেটিস, এইচআইভি, কেমোথেরাপি, স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধ, গর্ভধারণ ইত্যাদির কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
• পুরুষদের প্রোটেস্ট গ্রন্থি বড় হলে কিংবা শিশুদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হলেও এমন রোগ হতে পারে।
• মেয়েদের মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে গেলে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন নিঃসরণ কমে যায় এবং প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়।
• চিকিৎসার জন্য পেশাবের রাস্তায় নল, ক্যাথেটার ব্যবহার করলেও এটি হতে পারে।
প্রস্রাবে ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া উপায় কি
প্রথমে আপনাকে মলত্যাগের পর শুকনো টিসু ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করবেন। যৌনাঙ্গ সব সময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখা প্রয়োজনীয়। এর ফলে ইউরিন ইনফেকশন অনেকটাই দূর করা যায়।
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন একজন পূর্ণ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ক্লাস পর্যন্ত পানি পান করা উচিত।
যাদের নিয়মিত বাথটাবে কিংবা পুকুরে গোসল করার অভ্যাস আছে তারা চেষ্টা করুন শাওয়ার কিংবা বালতির সাহায্যে গোসল করা। এতে করে রোগ জীবাণু থেকে অনেক বেশি বেঁচে থাকা যায়।
যখনই প্রস্রাব করবেন তখনই ধীরে সুস্থের সময় নিয়ে মূত্র থলির পুরোপুরি ভাবে খালি করার চেষ্টা করুন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
সহবাসের পূর্বে অবশ্যই যৌনাঙ্গ ভালোভাবে পানিতে ধূয়ে নিবেন। সবার শেষ হলে যত দ্রুত সম্ভব পেশাব করুন। তা না হলে ইউরিনের জটিলতা বাড়তে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা ব্রা ব্যবহার করা প্রয়োজন। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়াপার কিংবা যে সকল কাপড় ব্যবহার করা হয় সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার এবং পরিবর্তন করা উচিত।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পেশাব দলে কখনো সেটাতে বিলম্ব করা উচিত নয় এবং তাড়াহুড়ো করবেন না। যৌনাঙ্গ কোন ধরনের তেল কম কিংবা পারফিউম ব্যবহার না করাই ভালো। সব সময় চেষ্টা করুন আরামদায়ক এবং সুতি জামা কাপড় পরা। এতে করে দেহের ত্বকের চুলকানি সকল সমস্যাও দূর হয়ে যায়।
বিভিন্ন ধরনের চিনিযুক্ত এবং পানীয় খাবার আমাদের দেহের জীবাণু বেড়ে ওঠার একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এগুলো পরিহার করুন।
ইনফেকশন হলে কি চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এবং প্রয়োজনীয় টেস্ট করানোর পর রোগ নির্ণয় করে যথাযথ মেডিসিন গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে বিশেষত্ব ডাক্তাররা প্রস্রাব পরীক্ষা করে সাধারণত উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা উচিত। সাধারণত কয়েকদিন ওষুধ খাওয়ার পর থেকে এ লক্ষণ কমতে থাকে এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
ইসবগুলের ভুসি পানিশূন্যতা সমস্যার জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে নিয়মিত খাবার যেমন শাকসবজি চালাক ফল ইত্যাদি খাওয়া উচিত। এতে করে পায়খানা ভালো থাকবে এবং রোগ জীবাণু কম শরীরে প্রবেশ করতে পারবে।
আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন প্রস্রাবের ইনফেকশনের কারণ লক্ষণ, প্রতিকার এবং চিকিৎসা সম্পর্কে। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করতে পারেন। প্রয়োজনীয় সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এবং সুস্থ থাকতে পারে।