জিডিপি এবং জিএনপি এর মধ্য পার্থক্য

GDP সাধারণত একটি দেশে অভ্যন্তরীণ সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের হিসাব। এই সকল কার্যকলাপ একজন নাগরিক কিংবা বিদেশী যে কেউ সম্পন্ন করতে পারে। অর্থাৎ যতক্ষণ সেটি দেশের অভ্যন্তরে চলতে থাকবে সেটি জিডিপিতে যুক্ত হবে। আজকে আমরা জানবো জিডিপি এবং জিএনপি এর মধ্যে পার্থক্য। সেই সাথে সকল খুঁটিনাটি বিষয় বিশ্লেষণ করবো।

যাইহোক আমি আলোচনা করেছিলাম জিডিপি (Gross Domestic Product) নিয়ে। ধরুন পৃথিবীর যেকোনো দেশের কোন কোম্পানি কিংবা সার্ভিস যদি বাংলাদেশে এসে কারখানা বসায় তাহলে সেই উৎপাদনের খরচ গুলি দেশের যদি অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বিখ্যাত রোলস রয়েলস তাদের যদি একটি কারখানা স্থাপন করে বাংলাদেশে তাহলে সেখানে বেশ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের সেই অর্থগুলি অবশ্যই দেশে অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। আর সেটি হচ্ছে জিডিপি।

এখানে উল্লেখ্য বিষয় যে দেশের বাইরে থেকে কোন প্রবাসী বাংলাদেশ যে অর্থ আমাদের দেশে পাঠান সেটি সরাসরি জিডিপিতে যোগ হয় না। কারণ সেই অর্থটি অর্জিত হয়েছে দেশের বাইরে। তবে পাঠানোর টাকা যখন তার পরিবার কিংবা স্বজনরা খরচ অথবা বিনিয়োগ করে তখন সেটি দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। আশা করি জিডিপি কি সে সম্পর্কে আপনারা এখন বুঝতে পেরেছেন।

জিএনপি কাকে বলে বা এটি কি

একটি দেশের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে সংশ্লিষ্ট যেকোনো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের হিসাবই হচ্ছে জিএনপি। এক্ষেত্রে একজন প্রবাসী যখন বাংলাদেশে অর্থ পাঠান তখন সেটি জিএনপিকে বৃদ্ধি করে। আবার দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান যখন পণ্য উৎপাদন করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিক্রি করে তখন সেই অর্থ সরাসরি দেশের জিএনপিতে (GNP) যুক্ত হয়। অর্থাৎ সেটি দেশের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে দেশের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অর্থনৈতিক কার্যকলাপে জিএনপির অন্তর্ভুক্ত। আশা করি আপনারা সংজ্ঞা দুটো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

জিডিপি এবং জিএনপির মধ্য পার্থক্য কি

১। একটি দেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে ১ বছরে উৎপাদিত দ্রব্য এবং সেবার সমষ্টিকে বলা হয় গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট মোট দেশ উৎপাদন বা জিডিপি (GDP)।

অপরদিকে ১ বছরে দেশের সকল নাগরিক দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্য কিংবা সার্ভিসের সমষ্টিকে বলা হয় জিএনপি বা গ্রস ন্যাশনাল প্রোডাক্ট (Gross National Product) অথবা মোট জাতীয় উৎপাদন।

২। জিডিপি সাধারণত পরিমাপ করা হয় দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে অপরদিকে জিএনপি পরিমাপ করা হয় দেশের নাগরিক অথবা জাতীয় ভিত্তিক।

৩। কোন দেশে জিডিপিতে তার প্রবাসী নাগরিকরা অন্তর্ভুক্ত থাকে না কিন্তু জিএনপিতে বিদেশে অবস্থানরত দেশীয় নাগরিকদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অন্তর্ভুক্ত হয়।

৪। জিডিপি এবং জিএনপি এর মধ্য পার্থক্য থাকলেও উভয়টি দ্বারাভ কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করা যায়।

৫। জিডিপি কিংবা জিএনপি কোনটি বড় সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে দেশের ফিন্যান্সিয়াল কন্ডিশনের উপর ভিত্তি করে যে কোন একটি বড় হতে পারে অথবা উভয়টি সমানও হতে পারে।

জিডিপি ও জিএনপির সূত্র কি (GDP Formula)

জিডিপির সূত্র হচ্ছে: দেশের অভ্যন্তরীণ ভোগ্য পণ্যের মূল্য+মোট বিনিয়োগের পরিমাণ+সরকারের ব্যয় (রপ্তানি-আমদানি)

জিএনপি এর সূত্র হলো (GNP Formula): জিডিপি + ( বাইরে অবস্থানরত দেশে নাগরিক কিংবা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বা সেবার মূল্য – দেশের অভ্যন্তরে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকভাবে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বা সেবার মূল্য)

আশা করি আপনারা জিডিপি এবং জিএনপি এর মধ্যেও পার্থক্য গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। এবার চলুন এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্যগুলি জেনে নেওয়া যাক।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি কি একটি দেশের উন্নয়ন বোঝায়

কোন দেশের জিডিপি দ্বারা সেই দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নতি সম্পর্কে সরাসরি ধারণা লাভ করা যায়। যদিও দেশের অর্থনীতিতে অনেক ফ্যাক্টর একসাথে কাজ করে। যেমন কোন ব্যক্তির যদি ইনকাম বৃদ্ধি পায় তাহলে তার খরচ বৃদ্ধি পায়। আর খরচ বৃদ্ধি পাওয়া মানেই হচ্ছে পণ্যের চাহিদক বৃদ্ধি পাওয়া।

এভাবে যদি মানুষের পণ্যের ভোগ বা চাহিদা বৃদ্ধি পায় তাহলে বেশি বেশি বিনিয়োগ হবে। আর বেশি বেশি বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন উৎপাদনের লোকবল। আর লোকবলের চাহিদা যত বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থানও তত বেশি তৈরি হবে।

এখন কথা হচ্ছে কোন মানুষের তার ইনকামের পুরো অংশই খরচ করে না। কিছু অংশ ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের জন্য কিংবা বিনিয়োগের জন্য রেখে দেয়। এইটা টাকা বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যাংকিং কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় করে। আবার ব্যাংক সে টাকা কিন্তু অলস ভাবে রেখে দেয় না। সেগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কিংবা ব্যক্তির কে লোন অথবা বিনিয়োগ হিসেবে প্রদান করেন। এভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সেই টাকা ব্যবহার করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। এভাবে জিডিপি বৃদ্ধি একটি দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে এই অর্থ যদি দেশের বাইরে কোনভাবে পাচার হয়ে যায় তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয় না।

যে দেশের মাথাপিছু আয় যত বেশি অর্থনৈতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী সেই দেশ তত বেশি উন্নত। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মাথাপিছু আয় হচ্ছে ৬০ হাজার ডলার। তাই সংজ্ঞা অনুযায়ী তারা বেশ উন্নত। তাই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। অন্যদিকে যে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় মাত্র ২০০০ ডলার তারা একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও সেটি হবে খুব দীর্ঘদিন। যদিও জিডিপি ও জিএনপি এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তবুও একে অপরের সাথে উৎপদ ভাবে জড়িত।

কোন কারনে যদি জিএনপি বৃদ্ধি পায় তাহলে সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃত্তি এবং জিডিপিও তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

Leave a Comment