জন্মগ্রহণের পর প্রতিটি শিশুরই বেশ কয়েকটি টিকা প্রদান করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম এবং এর প্রয়োজনীয়তা জানা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিবছরই বিভিন্ন সময়ে সারাদেশ ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে একটি করে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়।
যে সকল শিশুর বয়স ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর তাদের করে একটি করে লাল ক্যাপসুল এবং যাদের বয়স ৬ থেকে ১১ মাস তাদেরকে একটি করে নীল ক্যাপসুল প্রদান করা হয়ে থাকে। প্রতিবছরে একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে এই ক্যাম্পেইযন শুরু হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন এর প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা কি। জেনে না থাকলে চলুন সেগুলো জেনে নেয়।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর উপকারিতা
• এটি শিশুদেরকে ভবিষ্যৎ রাতকানা এবং অন্ধত্ব রোগ প্রতিরোধ করে। যার কারণে ভবিষ্যতে এই ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
• প্রতিটি শিশুরই সঠিক এবং সুস্বাস্থ্য ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য দরকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সঠিক সময়ে এই ভিটামিন ক্যাপসুলটি গ্রহণ করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
• মানুষের অন্ধত্বের চারটি প্রধান কারণ এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভিটামিন এ এর অভাব। এর ফলে রাতকানা রোগ হতে পারে। আবার রাতকানা রোগ থেকে একজন শিশু চিরদিনের জন্য অন্ধত্ব পূরণ করতে পারে। কিন্তু ভিটামিন এ ক্যাপসুলে উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
• সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই কাজটি করে থাকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল।
• আমাদের দেহের অস্থি, দেহ বৃদ্ধি ইত্যাদির স্বাস্থ্য রক্ষার কাজ করে থাকেন। আর এই সকল কাঠামো যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন এ।
• গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদানটি বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ থেকে আমাদের কে রক্ষা করে থাকে।
• যেকোনো বয়সী মানুষের জন্য ডায়রিয়া কিংবা হাম বেশ গুরুতর রোগ। আর এই ভিটামিন আমাদেরকে মারাত্মক ডায়রিয়া এবং হাম থেকে রক্ষা করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম কি
আমি ইতিমধ্যেই বলেছি যে কয় মাস এবং কত বছর বয়সে শিশুদের জন্য কোন ধরনের ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। চলুন এবার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
বাংলাদেশের জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইযন সাধারণত ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে এই ক্যাপসুল প্রদান করে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণত বছরের ২ বার অর্থাৎ জানুয়ারি এবং জুন মাসের বিনামূল্যে এই ক্যাপসুল প্রদান করা হয়।
• একটি করে নীল ক্যাপসুল প্রদান করা হয় ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের জন্য এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়স বয়সীদের জন্য দেয়া হয় একটি করে লাল ক্যাপসুল।
কিভাবে খাওয়ানো হয়
১। প্রথমে শিশুকে সোজা করে বসাতে হবে তারপর মুখ খুলতে হবে।
২। ক্যাপসুলটি চেপে ধরে ভেতরের তরল অংশ শিশুর মুখে দিতে হবে।
৩। ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর পর শিশুটির কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা সেটি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
যে সকল বিষয়ে জানা জরুরী
একটি শিশুকে কখনোই খালি পেটে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো উচিত নয়। যদি ক্যাম্পেইনের সময় শিশুর অসুস্থতা যেমন জ্বর, ডায়রিয়া, ইত্যাদি থাকে তাহলে পরবর্তীতে এটি খাওয়ানো যেতে পারে। তাছাড়া ৬ মাস বয়স পূর্ণ হবার আগে এটি দেওয়া যাবে না।
যেকোনো ধরনের ভিটামিনের শিশুর দুধ, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প হতে পারে না। তাই প্রতিটি শিশুরই এই সকল খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করা জরুরী
ভিটামিন এ ক্যাপসুল কোথায় পাওয়া যায়
আমি আগেই উল্লেখ করেছি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বছরের সাধারণত ২ বার বিনামূল্যে এটি প্রদান করা হয়। এটি আপনি পেতে পারেন বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার টিকা কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, স্কুল বাজার এবং বাসস্ট্যান্ডের অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতেও।
আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা ফার্মেসি হতেও এটা কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে শিশুকে এটাই প্রদান করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
ভিটামিন এ ক্যাপসুলের দাম কত টাকা
আমি ইতিমধ্যেই ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম এবং প্রয়োজনীয়তার সম্পর্কে আলোচনা করেছে। সাধারণত বাংলাদেশের জাতীয় সরকার কর্তৃক এটি বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। আর আপনি যদি ফার্মেসি থেকে এটা কিনতে চান তাহলে এর ধরন ভেদে সর্বনিম্ন ২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত প্রতি ক্যাপসুল দাম পড়তে পারে। দেশের জন্য প্রিয় ফার্মাসিটিক্যাল কম্পানি যেমন স্কয়ার, ইনসেপ্টা, অপসোনিন, বেক্সিমকো ইত্যাদি তৈরির ভিটামিন এ ক্যাপসুল বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
চলতি বছরের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ক্যাম্পিয়ন ১৫ মার্চ সারাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অপুষ্টি জনিত কারণে রাতকানা রোগের হার ৪.২০ শতাংশ। সর্বপ্রথম হাজার ১৯৭৪ সালে শিশুদের রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করার জন্য এই কার্যক্রমটি গ্রহণ করা হয়। এই প্রতিবছর এই ক্যাম্পেইনের কারণে অন্ধত্ব জনিত সমস্যা অনেকাংশই কমে এসেছে।
শিশুরাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ কিন্তু তাদের একটি অংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের অন্ধত্ববরণ দেশের জন্য বোঝা স্বরুপ। তাই এই অভিশাপকে কমানোর জন্য এ বছরের ২ বার সরকারের পক্ষ থেকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। আপনার নিজের পরিবারের এবং আশেপাশের একটি শিশুও যেনো ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়া থেকে বাদ না পড়ে তার জন্য সচেতনাতা তৈরি করুন।