মহাকাশে আটকে থেকে কিভাবে বেঁচে ছিলেন সুনিতা উইলিয়ামস

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার বেলা শেষ করে মহাকাশে আটকে পড়া সুনিতা উইলিয়ামস গতকাল মঙ্গলবার ফ্লোরিডা উপকূল থেকে ৫০ মাইল দূরে অবতরণ করেছেন। তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার একজন নভোচারী। তার সাথে আরো ছিলেন বুচ। গত বছরের জুন মাস থেকে তারা মহা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএসে ছিলেন।

যদিও সর্বমোট ৮ দিনের জন্য সেই মিশনে গিয়েছিলেন কিন্তু মহাকাশ স্টেশনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তারা সেখানে আটকে পড়েছিলেন।

গতবছরের জুন মাস থেকে এর মধ্যে অতিক্রম হয়ে যায় ৯ টি মাস। তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে একটি মিশন পাঠানো হয়। তাদের সাথে আরও যুক্ত ছিলেন বিশ্ব বিখ্যাত ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। আইএসএসের স্টেশনটির সেই অবস্থান হচ্ছে পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০৯ কিলোমিটার উপরে। বিগত ২৫ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে বিভিন্ন নভোচারীরা সেখানে গিয়েছিলেন। একটি ফুটবল খেলার মাঠের সমান আকারের সেই গবেষণাগারটি পরিচালনা করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া।

মহাকাশে আটকে থাকা সুনিতা উইলিয়ামসের বয়স ৫৯ বছর। তার সাথে আটকে থাকা বুচের বয়স ৬২ বছর। তারা দুইজনেই মার্কিন নেভির নতুন যান চালানোর পাইলট এবং পরবর্তীতে যোগদান করেন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাতে।

মাসের পর মাস পৃথিবীর বাইরে অর্থাৎ মহাকাশের অবস্থান করলে বেশি এবং হাড় ক্ষয়ের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া শরীরের উপর পড়ে নানা ধরনের চাপ। এমনকি পানি পান করার নানারকম নিয়মের কারণে কিডনি সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় মহাকাশচারীদের দৃষ্টিশক্তিতেও পরিবর্তন আসে। গবেষণার সংস্থাগুলো এই বিষয়ের উপর নজর রাখে।

মহাকাশে আটকে থাকা সুনিতা কি খেয়ে বেঁচে ছিলেন

এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বেশকিছু প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের এ সকল প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গিয়েছে স্টেশনে আটকে থাকা সুনিতা এবং বুচ উভয়ই পিৎজা এবং রোস্ট করা মুরগির মাংসের সাথে চিংড়ি খেয়েছেন। শরীরে ভারসাম্য এবং সঠিক পুষ্টি বজায় রাখার জন্য তারা তাজা খাবার খেতে পেতেন। সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে জানা গিয়েছে সকলের নাস্তায় পিজ্জা এবং রোস্ট করা মুরগির মাংসের সাথে টুনা মাছ খাওয়ার সুযোগ ছিল।

তারা দৈনিক কতটুকু পরিমাণে ক্যালরি এবং খাবার গ্রহণ করছেন তা নিয়মিত বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হতো। তাদের জন্য যে তাজা ফল এবং সবজি ছিল সেটি তিন মাসের মধ্যে ফুরিয়ে যায়। পৃথিবীর বাইরে এসব অনুষ্ঠানে খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য প্যাকেটজাত করা হয়।

পরবর্তীতে তারা ডিম আর মাংস খেতেন। পৃথিবী থেকে রান্না করা এই সকল সংরক্ষিত খাবার গুলো স্টেশনে তারা গ্রহণ করে নিতেন। পানির জন্য ছিল প্রায় ৫৩০ গ্রামের একটি ট্যাঙ্ক। পেছনে থাকা নভোচারীদের প্রস্রাব এবং ঘাম থেকে রিফাইন করে পানযোগ্য পানিতে পরিণত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে বলেছেন মহাকাশ আকাশে আটকে থাকা নভোচারীদের খাবারের অভাবে ওজন কমেনি। কারণ সেখানে এ পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি এই অভিযান যদি আরও বিলম্বিত হতো তবুও তাদের খাদ্য সমস্যা হতো না বলে তারা জানিয়েছেন।

মহাকাশে থাকলে শরীরে কি কি পরিবর্তন হতে পারে

মহাকাশ নিয়ে আমাদের জানার আগ্রহ এবং গবেষণার শেষ নেই। পৃথিবীর বাইরে রয়েছে অনেক স্যাটেলাইট এবং রয়েছে স্পেস স্টেশন। এ সকল স্থানের নভোচারীরা গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করেন। এর ফলে তাদের বেশি মস্তিষ্কের পরিবর্তন আসতে পারে এমনকি পাকস্থলীতে থাকে ব্যাকটেরিয়া পরিবর্তিত হতে পারে।

একসাথে আসে এখন পর্যন্ত একজন ৯ বছরের মহাকাশে তিন ৪৩৭ দিন রাখা থাকার রেকর্ড রয়েছে। এতে করেছিলেন রাশিয়ান প্রচারে ভ্যালেরি পলিয়া কব। ৩৭১ এবং ৩৫৫ দিনের রেকর্ডও রয়েছে।

স্পেস স্টেশনে মধ্যাকর্ষণ শক্তি টান খুব কম থাকে যার কারণে দেহের বেশি এবং হাড়ের ঘনত্ব আস্তে আস্তে। এর প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সবচাইতে বেশি ঘটে পেট খারাপ এবং উরুতে। গবেষণা দেখা গিয়েছে স্পেস স্টেশনে ২ সপ্তাহে পেশির ঘনত্ব আসতে পারে প্রায় ২০%।

এমনকি হাড়ের ঘনত্বের সাথে সাথে সত্যিও কমতে থাকে। চিকিৎসকদের মতে হাড়ের ঘনত্ব কমলে বুকের মাঝে চির ধরতে পারে। যার কারণে স্টেশনে থাকা নভোচারীরা দৈনিক প্রতিদিন প্রায় আড়াই ঘণ্টা করে ব্যায়াম করে থাকেন। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে নিয়মিত ব্যায়াম এবং অন্যান্য নিয়ম মানার কারণে এই সকল সাইডইফেক্ট গুলি কমানো যায়।

এর অবশ্য কিছু সুবিধা জনক দিকও রয়েছে। গবেষণা দেখা গিয়েছে যে আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো ভালো অণুজীবের গঠন ভালো থাকে স্পেস স্টেশনে থাকা একজন ব্যক্তির। এই সকল অনুজীব গুলো আমাদের মস্তিষ্ককে ভালোভাবে কাজ করতেও সাহায্য করে। এমনকি দীর্ঘদিনের স্পেস শিপে থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর এই ধরনের অণুজীবীর উপস্থিতিতে বেশ পরিবর্তন দেখা গিয়েছে।

সুরক্ষার কথা চিন্তা করে স্টেশনে যাওয়ার সময় মাঝখানে এবং ফিরে আসার পর বেশ কিছু টিকা প্রদান করা হয়। যেগুলো মূলত প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সবচাইতে বড় খবর হচ্ছে মহাকাশে আটকে থাকা সুনিতা উইলিয়াম এখন বাড়ি ফিরতে পেরেছেন।

Leave a Comment