এসএসসি সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে কি করবেন

আমরা যে স্তর পর্যন্তই লেখাপড়া করি না কেন, চাকুরী ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণের জন্য আমাদেরকে একটি সনদপত্র প্রদান করা হয়। কিন্তু মূল সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে কি করবেন? আশেপাশে অনেকেই হয়তোবা এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। সাবধানতা বা দুর্ঘটনায় বসত যাদের এই মূল্যবান কাগজটি হারিয়ে ফেলেছেন তাদের জন্য করনীয় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

এসএসসির সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে কি করবেন

আজকে আমি বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ধাপ আলোচনা করব। যাতে করে আপনারা যে কোন পর্যায়ের হারানো সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে পারেন।

প্রথমেই থানায় জিডি করা

যে এলাকা থেকে আপনার মূল সনদ হারিয়ে গিয়েছে সেই এলাকার থানার অধীনে একটি জিডি করতে হবে। জিডি করতে কিছু তথ্য প্রয়োজন। যার মধ্যে রয়েছে সার্টিফিকেটের ধরন, পাশের সন, শিক্ষাবর্ষ, প্রতিষ্ঠানের নাম ইত্যাদি। সফলভাবে জিডি করার সম্পন্ন হলে আপনাকে একটি কপি প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে সনদ উত্তোলনের আবেদনের সময় এই কপিটি অবশ্যই প্রয়োজন হবে।

মনে রাখবেন, সাধারণ ডায়েরি বা জিডিতে সঠিক তথ্য প্রদান করা আপনার কর্তব্য। আবার যদি হারানো সার্টিফিকেট পেয়েও যান তাহলে অবশ্যই যেই কর্মকর্তার অধীনে আপনার যদি করা হয়েছে তাকে অবহিত করতে হবে।

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান

আপনি যে সনদ হারিয়ে ফেলেছেন এবং তা ফিরে পেতে জিডির তথ্যসহ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি হারানো এলাকার স্থানীয় অথবা জাতীয় যেকোনো পত্রিকার অফিসে যেতে পারেন। সেখান থেকে তাদের প্রকাশিত পত্রিকার যেকোনো একটি সংস্করণে হারানো বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু টাকা খরচ হবে।

সেখানে আপনার সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে জিডির নম্বর, বোর্ডের নাম, রোল, রেজিস্ট্রেশন, পাশের সন ইত্যাদি। সার্টিফিকেটটি হারানোর স্থান এবং মাধ্যমে অনেক সময় উল্লেখ করতে হয়।

শিক্ষা বোর্ডে অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট

এসএসসির সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে কিংবা যেকোন স্তরের হারানো সার্টিফিকেট তোলার জন্য আপনাকে আবেদন করতে হবে। এসএসসি এবং এইচএসসির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে, অনার্স কিংবা মাস্টার্সের ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষে বরাবর আবেদন করতে হয়।

ধরুন আপনি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধীনে কোন কলেজ হতে স্নাতক কিংবা স্নাতোকত্তের সম্পন্ন করেছেন। এক্ষেত্রে আপনাকে গাজীপুরে অবস্থিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ডে আন্দোলন করতে হবে। আবার এসএসসি কিংবা এইচএসসির সার্টিফিকেটের জন্য মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট হতে আবেদন করতে হবে। আর প্রাইভেট কিংবা পাবলিক অথবা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের বরাবর এপ্লিকেশন সাবমিট করতে হয়। হারানো সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য এই আবেদন খুবই জরুরী।

আবেদনের ফি প্রদান

সাধারণত হারানো মূল সনদ, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড, মার্কশিট ইত্যাদির জন্য ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত ফি হয়ে থাকে। অনলাইনে অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করার সময় মোবাইল ব্যাংকিং অথবা সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে এই টাকা জমা প্রদান করতে হয়। এসএসসি, এইচএসসি কিংবা কলেজের সার্টিফিকেটের জন্য ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ওয়েবসাইট হতে আবেদন করা যায়। সেই সাথে প্রয়োজন হবে একটি সচল ফোন নাম্বার, ইমেইল এড্রেস, আবেদনকারীর ছবি এবং অন্যান্য তথ্য।

হারানো সার্টিফিকেট উত্তোলন

সকল কাগজপত্র এবং তথ্য দিয়ে অনলাইনে দরখাস্ত সাবমিট করার পর এবার সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পালা। সাধারণত মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় আপনার কাঙ্খিত সনদটি প্রিন্ট হয়েছে কিনা। যথাসময়ে প্রিন্ট হওয়ার পর মেসেজের একটি তারিখ প্রদান করা হয় সেটি গ্রহণ করা। আপনি যখন অ্যাপ্লিকেশন করবেন তার ২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই সাধারণত এসএমএস চলে আসে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে উত্তর সনদ গ্রহণ করার সময় ও বেশ কিছু কাগজপত্র দেখতে চাইতে পারে। যেমন মূল সনদের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড, মার্কশিট ইত্যাদি প্রদর্শন করার হতে পারে। এগুলো প্রমাণ করে যে আপনি সেই সার্টিফিকেটের মালিক।

আমি আগেই উল্লেখ করেছি এই কাগজ দ্বারা প্রমাণিত হয় আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা। তাই কাগজ হারিয়ে পরবর্তীতে এই ধাপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার চাইতে বেশি ভালো সর্বোচ্চ সর্তকতার সহিত এগুলো সংরক্ষণ করা। এতে করে সময় এবং অর্থ অপচয় থেকে মুক্তি পাবেন। কারণ যাদের জরুরী চাকুরির ক্ষেত্র কিংবা অন্যান্য কাজে এটি দরকার হয় তারা অনেক সময় বিলম্ব হওয়ার কারণে সুযোগ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

এসএসসির সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে উত্তরণের উপায় এবং হারানো সার্টিফিকেট তোলার নিয়ম একই ধরনের। তবে অনলাইনে নিজে নিজে আবেদন করতে না পারলে যে কোন দক্ষ কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে এটি সাবমিট করতে পারবেন।

Leave a Comment