ভবিষ্যতে সুখে শান্তিতে বসবাস করার জন্য আমাদের সবারই কিছু পরিমাণে টাকা জমানোর অভ্যাস থাকা উচিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করলেও বেশিরভাগ মানুষই এই কাজটি করতে ব্যর্থ হয়। যদিও একবার টাকা হাতে আসার পর মনে চায় সেগুলো নানা কাজে খরচ করার জন্য তবুও চেষ্টা করতে হবে কিছু পরিমাণে সঞ্চয় করার।
কারণ মানুষের জীবনে বিপদ আপদের শেষ নেই। আর চরম বিপদে কারো কাছ থেকে টাকা না পেলে বিড়ম্বনা আরও বাড়তে পারে। অনেকেই আবার আর্থিক দুশ্চিন্তার কারণে বিষন্নতায় ভুগতে থাকেন। তাই আশেপাশের পরিবেশের কথা চিন্তা করে এবং মানুষের কথায় কান না দিয়ে প্রতি মাসে টাকা জমানার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
টাকা জমানোর উপায় গুলি কি কি
১। সঠিক পরিকল্পনা
আপনি প্রতি মাসে কত অর্থ উপার্জন করেন এবং আপনার ব্যয়ের পরিমাণ সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন। তারপর বাজেট করুন এক বছরে আপনি কি পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন। সেটি নির্ধারণ করার পর লক্ষ্য অনুযায়ী জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যান।
২। সবার আগে ঋণ পরিশোধ করুন
আমাদের সঞ্চয় এবং উন্নতির পথে অন্যতম বাধা হচ্ছে ঋণ। তাই আপনার যদি কোন লোন কিংবা ঋণ থেকে থাকে সেটা সবার আগে মিটিয়ে দিন। তারপর থেকে জমানো শুরু করুন অর্থ।
৩। নিজের একটি ব্যাংক একাউন্ট
টাকা জমানোর উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিজের একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকা। প্রতিমাসে খরচের অংশ বাদ দিয়ে বাকি টাকা গুলো ব্যাংকে রেখে দেন। তবে হ্যাঁ, যখন তখন একাউন্ট থেকে টাকা উঠানোর ব্যাপারেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
৪। ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার
কারো হাতে যদি একটি ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে ঋণ নেওয়ার ইচ্ছেও অনেক বেশি বেড়ে যায়। তাই প্রয়োজন না হলে এটি ব্যবহার করবেন না। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্ডের বিল পরিশোধ করতে না পারলে আপনাকে বাড়তি অর্থ ব্যাংককে লাভ হিসেবে প্রদান করতে হবে।
৫। ডিপোজিট করতে পারেন
বীমা কিংবা ডিপোজিট পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ। আপনার পরিবারের সদস্যদের নামে করতে পারেন একটি ডিপোজিট। আপনার জন্যও একটি অবশ্যই রাখা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্বস্ত কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেছে নিবেন।
ব্যায় কমানোর উপায় গুলো কি কি
অর্থ সঞ্চয়ের পদ্ধতি গুলো জানার পাশাপাশি আপনাকে জানতে হবে কিভাবে দৈনন্দিন জীবনের খরচ কমাতে পারেন। চলুন সে সম্পর্কে কিছু টিপস জেনে নেওয়া যাক।
• বাইরে খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিন
মাস শেষে বেতন কিংবা হাতে টাকা আসলে আমাদের যত্রতত্র বাইরে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। এতে করে ভবিষ্যতে টাকা জমাতে সমস্যা হয়ে যায়। তাছাড়া নিয়মিত বাইরে নানা ধরনের খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ভালো নয়।
• কেনাকাটার পরিমাণ কমানো
আপনি যদি টাকার বেশিরভাগ অংশই বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন এবং কেনাকাটায় ব্যয় করেন তাহলে আপনি কখনোই টাকা জমানোর উপায় খুঁজে পাবেন না। একটি কথা মনে রাখবেন আপনি যখন সফল হবেন তখন আপনার ছিঁড়া জামাটিও জাদুঘরের স্থান পাবে। আর ব্যর্থ হলে কখনোই আপনার দামি দামি কাপড়-চোপড় গুলিরও কোন মূল্য থাকবে না। তাই ট্রেন্ডে গা না ভাসিয়ে সাধারণ জীবন যাপনের চেষ্টা করুন। টাকা জমানোর উপায় গুলোর মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
• বিভিন্ন অফারে পণ্য প্রয়োগ করা
শহরের বড় বড় শপিং সেন্টারগুলো তো মাঝে মাঝেই বিশাল ডিসকাউন্ট ও অফার দিয়ে থাকে। আপনি যদি প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র এ ধরনের অফারে কিনতে পারেন তাহলে ব্যয়ের পরিমাণ অনেকটাই কমাতে পারবেন। তবে এখানে আরেকটি কথা আছে, ডিসকাউন্ট বা অফারে আমরা অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ফেলি। তাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।
আমাদের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে যদি আমরা ব্যায়ের পরিমাণও বাড়তে থাকি তাহলে কখনোই সঞ্চয় করা সম্ভব নয়। জীবনে অনেক বেশি অর্থ উপার্জন এবং সফল হতে গেলে প্রয়োজন টাকা বিনিয়োগ করা। আর টাকা বিনিয়োগ করার জন্য দরকার বেশি বেশি অর্থ সঞ্চয় করা। তাই টাকা জমানোর উপায় গুলি আপনার জীবনের সাথে যুক্ত করুন এবং ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন।