চারিদিকে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। এসময়ে চুল পড়া রোধ করার উপায় জানতে মানুষ একটু বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। কারণ অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীতের দিনে মাথায় খুশকি এবং ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। তাই বর্তমান আবহাওয়ায় চুলকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন বাড়তি কিছু যত্ন।
আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো চুলের যত্নের কার্যকরী কিছু টিপস।
চুল পড়া রোধে করণীয় কি কি
সর্বপ্রথম আপনার কাজ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ধূলা বালি, রোদ, বৃষ্টি, সূর্যের আলো ইত্যাদি থেকে হেয়ার কে সুরক্ষিত রাখা। কারণ অতিরিক্ত রোদের তাপ, ধুলাবালি আমাদের মাথার ত্বকের দুর্দশের জন্য দায়ী। এর কারণে চুল নষ্ট হয়ে যায় এবং চুল পড়ে যায়।
বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা কিংবা ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। মেয়েরা কাপড় কিংবা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন। এছাড়াও অন্যান্য করণীয় গুলির সম্পর্কে চলুন জেনে নেই।
১। ভেজা অবস্থা হয়ে চুলের যত্ন
গোসল শেষে কিংবা মাথা ভিজে গেলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। এ সময় চলে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। এমনকি ভেজা চুল আঁচড়ানো ঠিক নয়।
২। সঠিক নিয়মে মাথায় শ্যাম্পু করুন
নানা কারণে আমাদের মাথায় ধুলাবালি জমে ময়লা হয়ে যায়। এর জন্য ভালো মানের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। তবে সপ্তাহের সর্বোচ্চ ২ থেকে তিনবার শ্যাম্পু করা যেতে পারে। এর বেশি একদমই নয়।
৩। চুলের যত্নে কন্ডিশনার ব্যবহার করা
শ্যাম্পু শেষে অথবা গোসল করার পর আপনি কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। এতে হেয়ার থেকে আরও মসৃণ এবং চুল পড়াও কমে যায়।
এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার তেমনভাবে না লাগে। এতে করে মাথার ত্বক ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।। সেই সাথে অতিরিক্ত কন্ডিশনের ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৪। বিভিন্ন ধরনের হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা
আমরা বাজার থেকে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী কিনে মাথায় ব্যবহার করি। খেয়াল রাখবেন আপনার ত্বকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিউটি প্রোডাক্ট গুলি কেনার।। সেই সাথে আসল নকল ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। আবার কিছুদিন পর পরই প্রোডাক্ট পরিবর্তন করা উচিত নয়।
৫। চুলে হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
আমরা অনেক সময় হেয়ার স্ট্রেইটনার কিংবা ব্লোয়ার ব্যবহার করে চুলে তাপ প্রয়োগ করি। এটি হেয়ারের স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ভালো নয়। এই ধরনের কাজ করার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন।। খুব বেশি প্রয়োজন হলে দক্ষ কোন স্পেশালিস্টের সাহায্য নিতে পারেন।
৬। গোসল করার পর
গোসল শেষে যতটুকু সম্ভব আলতো ভাবে মাথার চুল পরিষ্কার করুন। অতিরিক্ত ঘষান ফলে চুল তার সুস্থতা হারিয়ে ফেলতে পারে।
এমনকি পানি পান করার সময়ও অতিরিক্ত শক্ত কিংবা চাপ প্রয়োগ না করা ভালো। এ কারণে ভেঙে যায় চুল।
৭। ঘুমানোর সময়
যতটুকু সম্ভব নরম এবং সুতি কাপড় দিয়ে বালিশ বানিয়ে নিন। কটন কিংবা রুক্ষ কাপড় গুলির কারণে আমাদের মাথার হেয়ার গুলি ভেঙে যেতে পারে। তাই যত সম্ভব পাতলা কাপড় ব্যবহার করুন।
৮। তেলের ব্যবহার
ভিটামিনের জন্য বিভিন্ন ধরনের তেল আমাদের হেয়ারের ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু সেটির পরিমাণও যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়। যদি কোন কারনে মাথায় অতিরিক্ত তেল পুড়ে যায় তাহলে শুকনো কাপড় দিয়ে সেটি মুছে ফেলা না।
মাঝে মাঝে হট ওয়েল ম্যাসাজ নিতে পারেন। এজন্য কিনতে পারেন আমলা ওয়েল, আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল ইত্যাদি। আবার সব গুলো একসাথে মিক্স করেও মাথায় দিতে পারেন।
৯। বারবার চুলায় হাত লাগানো থেকে বিরত থাকুন
ছেলে-মেয়ে উভয়েরই অভ্যাস রয়েছে। হাত দিয়ে বারবার চুল ঠিক করা কিংবা মাথায় হাত দেওয়া। আবার অনেকেই মাথায় জেল ব্যবহার করে যা খুবই ক্ষতিকর।
১০। শীতের দিনে চুলের যত্ন
এখন শীতকাল পড়ে গিয়েছে। গরম পানি ব্যবহার করে থাকে গোসল করার জন্য অনেকেই। ত্বক কিংবা চুলের যত্ন গরম পানি কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে করে হেয়ার ড্যামেজের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পায়। চেষ্টা করুন ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করার জন্য।
নতুন চুল গজানোর জন্য কি কি ব্যবহার করতে পারেন
আমাদের সবারই দেহ থেকে প্রতিদিনই চুল ঝড়ে পড়ে। এটি কোন সমস্যা নয়। কিন্তু যদি নতুন চুল না গজায় তাহলেই দেখা যায় বিপত্তি। নিচের কিছু উপায় গুলি অবলম্বন করলে আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতে পারে।
• নিয়মিত ব্রাশ করুন। এতে করে মাথার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।। প্রতিদিন অন্তত ২ থেকে ৩ বার হেয়ার ব্রাশ করা খুবই উপকারী।
• বিভিন্ন ধরনের হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে বাজার থেকে কিনে আনতে পারেন অথবা ঘরে বসে তৈরি করতে পারেন।
• প্রসাধনী সামগ্রী কম ব্যবহার করা উচিত। প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর সঠিক প্রোডাক্টটি নির্বাচন করে ব্যবহার করুন।
• নতুন চুল গজানোর জন্য সুস্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প কোনো কিছু নেই। আপনি যত বেশি শাক সবজি ফল ভিটামিন গ্রহণ করবেন আপনার চুলের স্বাস্থ্যতা ভালো থাকবেন। এমন কি নতুন চুলও গজাবে।
নির্দিষ্ট বয়সের পর গিয়ে আমাদের সবারই চুল কমতে থাকে। তাইতো চুল পড়া রোধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়।। তবে বয়সের তুলনায় যদি দেখতে পান যে হেয়ার ফল এর পরিমাণ অনেক বেশি তাহলে অতি দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন।