কিভাবে খুব সহজে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারেন

আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলা খুবই জরুরী। কারণ এটির মাধ্যমে শুধুমাত্র টাকা জমা এবং উত্তোলনে নয় বরং বিভিন্ন জায়গায় লেনদেন করার ব্যাপক সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশে অনেক সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের কার্যক্রম আলাদা হলেও একাউন্ট খোলার নিয়ম মোটামুটি ধরনের।

তাই এ সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি কাগজপত্র লাগে

প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমে যেমন পার্থক্য রয়েছে তেমনি একাউন্টের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্যাটাগরি। একেক ধরনের অ্যাকাউন্ট এর ক্ষেত্রে কাগজপত্র একেক ধরনের প্রয়োজন হয়। তবে সাধারণ কিছু ডকুমেন্টস রয়েছে যেগুলো যে কোন ধরনের হিসাবের জন্যই প্রযোজ্য। নিম্নে সেগুলোর তালিকা উল্লেখ করা হলো।

১। নাগরিকত্ব প্রমাণ

বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংকিং বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। তাই নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম সনদের কাগজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি সাবমিট করতে হবে।

২। পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি

ব্যাংক ভেদে ৩ কপি থেকে ৫ কপি কিংবা তার অধিক ছবি চাওয়া হয়ে থাকে। ছবিগুলো অবশ্যই ল্যাব প্রিন্ট হতে হবে। বেশিরভাগ ব্যাংকেই সাধারণত ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা করতে বলার নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

৩। নমিনির ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ডের কপি

আপনার অবর্তমানে যার কাছে আপনার অর্থ গুলি হস্তান্তর করা হবে তার অর্থাৎ নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের কপি। সেই সাথে তার ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন হবে।

৪। আবেদন ফরম

প্রতিটি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে তাদের আবেদন ফরম এর বিভিন্ন তথ্য পূরণ করতে হয়। অনেক ব্যাংকের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা এটি পূরণ করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

৫। ইউটিলিটি বিলের কপি

আপনি যে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সেখানকার ইউটিলিটি বিল অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিল, গ্যাশ বিল ইত্যাদির কপি চাইতে পারে। এর মাধ্যমে প্রমাণ করে যে আপনি সেখানকার বৈধ নাগরিক।

৬। আয়ের প্রমাণপত্র

আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে সেলারি শিট, পে স্লিপ কিংবা আইডি কার্ডের কপি এবং ব্যবসায়ী হয়ে থাকলে ট্রেড লাইসেন্সের কপি চাইতে পারে। আবার যারা এখনো লেখাপড়া করছেন তাদের ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটির কিংবা কলেজের স্টুডেন্ট কার্ডের কপি জমা দিতে হয়। এর মাধ্যমে আপনার আয়ের উৎস গুলো নিশ্চিত করা হয়।

৭। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নির্ধারিত ফি

সাধারণত ব্যাংক একাউন্টের ধরন এবং ব্যাংক প্রতিষ্ঠান ভেদে একাউন্টের ওপেন করার ফি ২০০ টাকা থেকে লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এটা কেমন হলো তো আপনার একাউন্টে জমা হয়ে থাকবে। বেশিরভাগ ব্যাংকের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে এই অর্থটি উত্তোলন করা যায়।

৮। মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল এড্রেস

ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে এই দুটি জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন এবং সবসময়ই সচল থাকে এই ধরনের ফোন নম্বর এবং ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করুন।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়

উপরেরটা কাগজপত্র গুলো ছাড়াও লেনদেনের ধরন এবং একাউন্টের ধরনের উপর আরো কিছু ডকুমেন্টসের কথা কর্তৃপক্ষ বলতে পারে। এক্ষেত্রে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাক্ষর। যে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আপনি পরবর্তীতে যে কোন কাজ চেকের লেনদেন ইত্যাদি সম্পন্ন করতে পারবেন। তাই স্বাক্ষর দেওয়ার সময় সচেতনতা অবলম্বন করুন।। আপনার সকল জায়গায় ব্যবহার করেন এমন স্বাক্ষর ব্যাংকে ব্যবহার না করাই উত্তম।

কোন ধরনের অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে চান সেটা নিশ্চিত করুন

বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক একাউন্টের ক্যাটাগরি রয়েছে। সেগুলোর তালিকা একটি নিম্নে দেওয়া হল

সেভিংস একাউন্ট বা সঞ্চয়ী হিসাব

যদি আপনি মাঝে মাঝে অর্থ উত্তোলন করবেন এবং জমা রাখবেন এই ধরনের একটি সুবিধা চান তাহলে আপনার জন্য সঞ্চয়ী হিসাব ওপেন করতে হবে। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যদি জমা থাকে তাহলে আপনাকে কিছু পরিমাণে ইন্টারেস্ট ও প্রদান করা হবে।

এই ধরনের অ্যাকাউন্টের সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে যখন খুশি টাকা রাখতে পারবেন আবার যখন খুশি উত্তোলন করতে পারবেন।

কারেন্ট একাউন্ট

এটি মূলত ব্যবসায়ীদের জন্য। যারা দৈনিক অনেক অর্থ লেনদেন করেন তাদের ক্ষেত্রে এটি সবচাইতে বেশি উপযোগী। তবে এই একাউন্টে যখন তখন অর্থ ডিপোজিট এবং উত্তোলনের সুবিধা থাকলে কোন ধরনের ইন্টারেস্ট প্রদান করা হয় না।

ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট

আপনার মাসে মাসে কিছু টাকা যদি ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে চান তাহলে করতে পারেন ফিক্স ডিপোজিট একাউন্ট। এই ব্যাংক একাউন্টে খোলার পর প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করতে হয়। অবশ্য একাউন্ট ওপেন করার সময় এই ডিপোজিটের মেয়াদকাল নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তারপর গ্রাহকের জমাকৃত টাকার উপর ব্যাংক আরো কিছু লভ্যাংশ প্রদান করে।

সেলারি একাউন্ট

বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেতন প্রদান করার জন্য স্যালারি একাউন্ট করার কথা বলা হয়। এটি অন্যান্য অসাধারণ অ্যাকাউন্টের মত হলে সুবিধা অনেকটাই কম।

এছাড়াও আরো অনেক ধরনের হিসাবের সুবিধা রয়েছে। সে সম্পর্কে আপনারা কাঙ্খিত ব্যাংক হতে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। তবে বর্তমানে প্রায় সকল ব্যাংকের এই ওয়েবসাইটে এই সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য গুলি দেওয়া থাকে।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম কি

আপনার কাছে যদি উপরের সকল কাগজপত্র গুলি থাকে তাহলে কাঙ্খিত ব্যাংকে সেগুলো নিয়ে উপস্থিত হন। তারপর অ্যাকাউন্ট ওপেনিং সেকশনের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন। তিনি আপনার সকল কাগজপত্র গুলো যাচাই করে ফরম পূরণ করে একাউন্ট ওপেন করে দেবেন।

তবে ব্যাংক একাউন্ট খোলার আগে অবশ্যই আপনার যে সার্ভিস গুলো প্রয়োজন সেগুলো ভালোভাবে জেনে নিন। নিম্নে তার একটি ধারণা দেওয়া হলো। যাতে করে আপনি ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং

বর্তমানে আমরা বেশিরভাগই লেনদেনেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং অ্যাপের মাধ্যমে করে থাকি। তাই আপনি যেই ব্যাংকে একাউন্ট ওপেন করতে চাচ্ছেন তাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয় নিন। তা না হলে পরবর্তীতে বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন।

পর্যাপ্ত কার্ড সুবিধা

এখন মানুষ চেকের চাইতে কার্ডের অর্থ উত্তোলন করে থাকে বেশি। তাই আপনি কোন ধরনের কার্ড নিতে চাচ্ছেন এবং সেই কার্ডের লেনদেনের যাবতীয় ফিচার গুলো সম্পর্কে কর্মকর্তার কাছ থেকে জেনে নিন।

চেক বইয়ের সুবিধা

যদিও এটি ব্যবহারের পরিমাণ কমে গিয়েছে তারপরেও চেক বইয়ের সুবিধা গুলো সম্পর্কেও জেনে নেওয়া উচিত।

এসএমএসের সুবিধা

এখন প্রায় সকল সরকারি এবং প্রাইভেট ব্যাংকে গ্রাহকদের লেনদেনের ইনফরমেশন গুলো এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। এই সুবিধা গুলো আছে কিনা এবং থাকলেও চার্জ কত সেটিও আগে থেকেই জেনে নিন।

ডুয়েল কারেন্সি কার্ড

বর্তমানে বিদেশে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে কেনাকাটার জন্য কিংবা লেনদেন করার ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে কি কি কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে ডলারের রেট কেমন রেখে এবং লেনদেনে কি কি সেটি যাচাই করে নিন।

ব্যাংক একাউন্ট খোলা কেন প্রয়োজন

আগে একবার বলেছি অর্থ লেনদেনের সবচাইতে বড় মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক। এমনকি অর্থ লেনদেনের পাশাপাশি সঞ্চয় করা, ডিপোজিট করা, লোন নেওয়া ইত্যাদি কাজে আপনার অবশ্যই একটি একাউন্ট প্রয়োজন হবে।

আমাদের হাতে নগদ টাকা থাকলে সাধারণত সেগুলো খরচ করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। কিন্তু সেটা যখন কোন জায়গায় জমা থাকে তখন প্রয়োজনীয়তা কম আমাদের ব্যায়ও হ্রাস পায়। যার কারণে আমাদের সঞ্চয় বাড়ে এবং ভবিষ্যতে আমরা সেগুলো ভালো কোন জায়গায় ইনভেস্ট করতে পারি। আশা করি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে।

Leave a Comment