কলেজের শিক্ষক হওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতার প্রয়োজন হয়

আমরা ছাত্র জীবনে যতগুলো লক্ষ্য নির্ধারণ করি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষক হওয়া। তবে যখন বড় হই এবং লেখাপড়া শেষ পর্যায়ে চলে আসে তখন স্কুল কিংবা কলেজের শিক্ষক হওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতার প্রয়োজন হয় সে সম্পর্কে জানার প্রয়োজন পড়ে। কারণ একেক ধরনের প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ এবং যোগ্যতার শর্ত এক এক ধরনের।

আমাদের সমাজে যত সকল পেশা রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষকতা অন্যতম। এই পেশার মাধ্যমে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনায়নের পাশাপাশি বেশ সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। এমনকি সমাজের সম্মানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই শিক্ষকরা।

আপনি যদি কলেজের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের এই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করুন।

এমপিও ভুক্ত কলেজের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা কি

আপনি নিশ্চয়ই বিভিন্ন ধরনের এমপিও ভুক্ত স্কুল এবং কলেজের ব্যাপারে জানেন। শহর এবং গ্রাম এলাকা গুলোতেও এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যায় বেশি।

এমপিওভুক্ত স্কুল কিংবা কলেজের শিক্ষক হওয়ার জন্য নিবন্ধন পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে হয়। প্রতিবছরে এনটিআরসিএ না বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

কলেজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে। আপনি যদি বাংলা বিষয়ে শিক্ষকতা করতে চান তাহলে অবশ্যই বাংলায় ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক বা সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে। অর্থাৎ অপনি যেই বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন সেই বিষয়ে শিক্ষক হতে পারবেন। সিজিপিএ এবং অন্যান্য পয়েন্টের কথাও উল্লেখ করে থাকে।

নির্ধারিত ফি প্রদান নিবন্ধন পরীক্ষায় আবেদন করার পর ৩টি ধাপে নিয়োগ পরীক্ষার সম্পন্ন করা হয়। কলেজের শিক্ষক হওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে প্রিলিমিনারি, তারপর লিখিত এবং সর্বশেষ ভাইভা কিংবা মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তারপরে প্রকাশ করা হয় শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে গণবিজ্ঞপ্তি। গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিবন্ধন সনদ প্রাপ্ত প্রার্থীরা বিভিন্ন কলেজে শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। তারপর আবেদনকারীদের রেজাল্ট, নিবন্ধনের সনদ ইত্যাদি যাচাই করে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। খুব শীঘ্রই হয়তো বা আরেকটি নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।

একজন আগ্রহী প্রার্থীর সর্বোচ্চ ৩৫ বছর পর্যন্ত এই নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।

সরকারি কলেজের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা

বিভিন্ন সরকারি কলেজের শিক্ষক হওয়ার জন্য অবশ্যই বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এই পরীক্ষাটিও ৩টি ধাপে হয়ে থাকে। প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারি, দ্বিতীয় ধাপে লিখিত এবং সর্বশেষভাবে ভাইবা বা মৌখিক পরীক্ষা।

এক্ষেত্রেও আপনি যদি ইংরেজি শিক্ষকতা চান তাহলে অবশ্যই ইংরেজি বিষয়ের চার বছর মেয়াদে অনার্স বা সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে। শিক্ষাজীবনের কোন পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ বা সমমান রেজাল্ট থাকা যাবে না।

এই বিসিএসের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি কলেজ গুলোর শিক্ষক হতে পারবেন।

একজন চাকরির প্রত্যাশী সর্বোচ্চ ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত বিসিএসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মৌখিক পরীক্ষা শেষেও পুলিশ ভেরিফিকেশন সহ বেশ কিছু যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া করা হয়।

বেসরকারি কলেজের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা কি

এমপিও ভুক্ত এবং সরকারি কলেজ ছাড়াও বাংলাদেশের অনেক স্বনামধন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ করে থাকে।

আপনি অনলাইনে এ ধরনের সার্কুলার গুলো দেখতে পারবেন। এখানে নির্দিষ্ট করে যোগ্যতার শর্ত বলা সম্ভব নয়। কারণ একেক প্রতিষ্ঠানে একেক ক্যাটাগরিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হয় বিধায় যোগ্যতার শর্তগুলিও গুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদী অনার্স কিংবা সমমান ডিগ্রী থাকতে হয়। সেই সাথে অনার্সের সিজিপিএ ন্যূনতম ৩.০০ থাকতে হয়।

বয়সীমা সর্বোচ্চ ৩৫ বছর পর্যন্ত যা হয়ে থাকে। তবে অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে অনেক প্রতিষ্ঠানে এর চাইতেও অধিক বয়সের প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদান করে।

কলেজের শিক্ষকদের বেতন ভাতা কেমন হয়ে থাকে

এটি নির্ভর করে আপনি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হচ্ছেন। সাধারণত এমপিও ভুক্ত কলেজের শিক্ষকদের নিয়োগকালীন সময়ে বেতন প্রদান করা হয়ে থাকে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা।

বিসিএস ক্যাডার হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র সরকারি কলেজে যোগদান করলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকে। তবে এই বেতনের কিছু অংশ নির্ভর করে কোন জায়গায় এবং কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে পোস্টিং হচ্ছে। যেমন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পোস্টিং হলে বেতনের ৫৫% বাবদ বাড়ি ভাড়া পায় এবং উপজেলায় পোস্টিং হলে বাড়ি ভাড়া পায় ৪০%।

এছাড়াও বছরে উৎসব বোনাস, টেনশন সুবিধা, উচ্চ শিক্ষার সুযোগসহ ধারণের সুবিধা রয়েছে।

ঠিক একইভাবে এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি কলেজ গুলোতেও নানা ধরনের ভাতা ও সুবিধার প্রদান করা হয়ে থাকে।

শিক্ষকতা শুধুমাত্র একটি পেশাই নয় বরং একটিই দায়িত্ব। যাদেরকে বলা হয়ে থাকে মানুষ করার কারিগর। আপনি যদি এই মহান পেশায় যুক্ত হতে চান তাহলে শিক্ষক হবার যোগ্যতা গুলি জানার পাশাপাশি আপনাকে অন্যান্য সাধারণ জ্ঞানগুলো সম্পর্কেও দক্ষ হতে হবে। কারণ শিক্ষার্থী এমনকি সমাজের মানুষও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য সবার আগে শিক্ষকদের কাছে আসে।

Leave a Comment