ডিলারশিপ ব্যবসা কিভাবে করতে হয় | কয়েকটি ডিলারশিপ বিজনেস আইডিয়া

কম টাকায় অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য ডিলারশিপ ব্যবসা বর্তমান সময়ে একটি লাভজনক আইডিয়া। যারা বিজনেস পছন্দ করেন তারাই টাকা উপার্জনের জন্য এই আইডিয়াটিও পছন্দ করে থাকেন। সারাদিন বসে থাকা কিংবা একঘেঁয়েমি জীবন থেকে যারা মুক্তি পেতে চান কিছু টাকা ইনভেস্ট করে এই বিজনেস টি শুরু করে দিতে পারেন।

তবে যে কোনো ধরনের ব্যবসা শুরু করার আগে মার্কেট সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা প্রয়োজন। আজকে এই আইডিয়াটির খুঁটিনাটি বিষয় সহ সকল কিছু আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাই কিছুটা ধৈর্য নিয়ে পুরো লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ডিলারশিপ ব্যবসা কি

আমরা নিশ্চয়ই এ ধরনের শব্দ এর আগেও শুনেছি। যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রতিনিধি হিসেবে ডিস্ট্রিবিউশন করার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ডিলার। একজন ডিলার মূলত পণ্য পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং খুচরা ক্রেতাদের মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে।

এই বিজনেসটা শুরু করার জন্য একজন ডিলারকে কোম্পানির নিকট কিছু টাকা সিকিউরিটি মানি হিসেবে জমা প্রদান করতে হয়। তারপর সেই কোম্পানিটির পক্ষ হতে ডিলারের গোডাউন বা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ডিলারগণ সেলসম্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা হতে অর্ডার সংগ্রহ করে সেগুলোর ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ শুরু করে।

এই ধরনের ব্যবসায় তুলনামূলকভাবে ঝুঁকি কম এবং লাভের পরিমাণও বেশ ভালোই। কারণ যে কোন ধরনের পণ্য নষ্ট হলে কিংবা বিক্রি না হলে সেগুলো কোম্পানিকে পুনরায় ফেরত দেওয়া যায়। তবে ব্যবসাটি শুরু করার আগে স্থানীয় বাজারে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি এবং মার্কেটের কতটা বড় সে সম্পর্কে গবেষণা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ আপনি বিজনেস শুরু করার পর যদি সেল না করতে পারেন তাহলে অযথা সময় এবং পরিশ্রম দুটোই বিফলে যাবে। আবার নির্ধারিত টার্গেটের অধিক অন্য বিক্রি করতে পারলে বাড়তে মুনাফাও বা ইনসেনটিভ পাওয়া যায়।

কয়েকটি ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

বিভিন্ন ধরনের গাড়ির পার্টসের বিজনেস

বর্তমানে শহন এলাকার পাশাপাশি গ্রামেও মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, অটো, ট্রাক ইত্যাদি যানবাহনের পরিমাণ বেড়েই চলছে। আর এই সকল গাড়ি নিয়মিত সার্ভিসিং করার প্রয়োজন পড়ে। তাইতো গাড়ির সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র যেমন টায়ার, ব্যাটারি, ব্রেক, ইঞ্জিনের যন্ত্র, ইঞ্জিন অয়েল ইত্যাদির চাহিদাও অনেক।

আপনি গ্রাম কিংবা মফস্বল এলাকাতেও এই ধরনের গাড়ি পার্টসের বিজনেস শুরু করতে পারেন। ভালোভাবে বিজনেস করতে পারলে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ইনকাম করা খুবই সহজ বিষয়।

কসমেটিক আইটেমের ডিলারশিপ বিজনেস

দেশের যেকোন প্রান্তে এই কসমেটিকসের চাহিদা সারা বছরই থাকেন। ইতিমধ্যে বরাবরই কোম্পানি গুলো তাদের ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে সারাদেশেই পণ্য বিপণন করে থাকে।

আবার অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বিভিন্ন এলাকাতে ডিলারের অভাবে সহজে পণ্য পৌঁছাতে পারছে না। আপনার আশেপাশে বাজারে কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশে একটি কসমেটিক্সের ডিলার নিতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের মেকআপ সামগ্রী, সুগন্ধি, চুলের যত্নের পণ্য, ত্বকের যত্ন লোশন তেল ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করে প্রতিমাসের বেশ মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করা যায়।

আর কসমেটিকসের পণ্য ডিলারে কমিশনের পরিমাণও বেশ ভালো। প্রাথমিক পর্যায়ে অবশ্য আপনাকে সিকিউরিটি হিসেবে প্রায় ১ লক্ষ টাকা জমা প্রদান করতে হতে পারে। আর আপনার যদি প্রচুর পরিমাণ বেশি হয় তাহলে একটু দোকান ভাড়া নিতে পারেন।

বর্তমানে দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও ধানের পণ্য বিক্রি করা যায়।

ইট, সিমেন্ট, রডের ডিলার

এখন মানুষ টিনের ব্যবহার দিন দিন কমিয়ে দিচ্ছে। ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে আপনি এ ধরনের ইট, সিমেন্ট, রড ইত্যাদিির ডিলারের ব্যবসা শুরু। এ ধরনের পণ্যের চাহিদা সারা বছরই থাকে এবং বেশ ভাল কমিশনে ব্যবসা করা যায়।

তবে যেহেতু এই পণ্য গুলো আকারে অনেক বড় তাই মালামাল রাখার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বড় একটি জায়গা প্রয়োজন।

আর ভারী পণ্য হওয়ায় ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করতে হয় বিধায় এলাকায় ভালো পরি বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠান দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন ধরনের চামড়াজাত পণ্যের ডিলার

বাংলাদেশের চামড়া যত পণ্যের চাহিদা এবং বাজার বেশ বড়। মানিব্যাগ, বেল্ট, জুতো ইত্যাদি চামড়াজাত পণ্য নিয়ে আপনি আগে শুরু করতে পারেন ডিলারশিপ বিজনেস।

তবে চামড়া যত পণ্য নিয়ে বিজনেস করার আগে আপনাকে অবশ্যই কোয়ালিটির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সেই শাথে খেয়াল রাখতে হবে আশেপাশের মার্কেটে কোন ধরনের পণ্য কত দামে বিক্রি হচ্ছে।

আপনার মূলধনের পরিমাণ যদি বেশি থাকে তাহলে বাণিজ্যিকভাবেও দোকান নিয়ে পণ্যের ব্র্যান্ডিং করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিজনেসের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় প্রচুর প্রয়োজন হতে পারে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। ভালো মার্কেটিং এর ধারণা থাকলে প্রতি মাসে চামড়ার পণ্যের বিজনেস করে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব। আর ভালো পজিশনে দোকান থাকলে ইনকাম এর দ্বিগুনও হতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের স্টেশনারি পণ্য এবং কাগজের ডিলারশিপ

স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত সব জায়গায়ই কাগজ, খাতা-কলম ইত্যাদি স্টেশনারী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটিও একটি স্থিতিশীল বিজনেস যার চাহিদা সারা বছরে থাকে। আর এই ধরনের ব্যবসার ডিলারশিপ নিতেও খুবই কম অর্থ প্রয়োজন হয়।

তবে ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা, আশেপাশের স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কি পরিমান আছে সে সম্পর্কে যাচাই করতে হবে।

তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এই ধরনের প্রোডাক্ট গুলি সাপ্লাই দিতে পারলে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।

আর আপনি যদি গার্মেন্টস কিংবা শিল্প কারখানার এলাকায় রয়েছে এমন জায়গায় এই বিজনেস শুরু করতে পারেন তবুও অনেক লাভবান করা সম্ভব। কারণ সকল প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের পণ্য গুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতির ডিলারশিপ

উচ্চকলনশীল দেশী বিদেশি বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি নিয়ে গ্রামাঞ্চলে ডিলারশিপ ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। এমনকি এই ধরনের পণ্যের প্রতিযোগী অনেক কম।

দোকান ছাড়া শুধুমাত্র ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করে আপনি মাসে ৩০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তবে এর জন্য কৃষি পণ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।

গুড়া মসলার ডিলারশিপ

বর্তমানে অনলাইনে ব্যাপক হারে বিভিন্ন ধরনের মসলা বেচাকেনা হয়ে থাকে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, ধনিয়া পাতা, পাঁচফোড়ন, বিড়িয়ানির মসলা, রোস্টের মসলা, বারবিকিউ মসলা, ম্যাজিক মসলা ইত্যাদি।

আবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিজস্ব মেশিন তৈরি করা খাঁটি তেল বিক্রি করা হয়ে থাকে। আপনি যদি মশলা গুড়া করার মেশিন সহকারে তৈরি করতে চান তাহলে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে এর মাধ্যমে আপনি নিজস্ব একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারবেন যেটি ভবিষ্যতে বড় একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে পারে।

আশা করি ডিলারশিপ কি আপনারা জানতে পেরেছেন। উপরের যেকোনো একটি আইডিয়া হতে আপনার যদি ভালো লাগে সেটি বাছাই করে শুরু করতে পারেন আজই।

Leave a Comment