বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য মধু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে যে বছরের পর বছর রাখার পরেও মধু কেন নষ্ট হয় না কিংবা পচে যায় না। আমরা দেখেছি গ্রামের বাড়িতে কাচের বোতলে করে মধু দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এতে করে স্বাদের পুষ্টি কিংবা কোন ধরনের গুণাবলী নষ্ট হয় না। এটি দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করলেও একইভাবে টিকে থাকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মধুতে কি এমন উপাদান আছে যার কারণে এটি নষ্ট হয় না কিংবা পচে যায় না। এটিকে একটি ম্যাজিক বলতে পারেন। কখনোই মধু নষ্ট হয় না।
দীর্ঘদিন রাখার ফলেও মধু কেন নষ্ট হয় না
আমরা মৌচাক থেকে যে প্রাকৃতিক মধু সংগ্রহ গ্রহণ করি সেটাতে পানির পরিমাণ খুবই কম। আবার এর বড় অংশ রয়েছে সুগার বা চিনি জাতীয় পদার্থ। এর কারণে মধুতে চিনির ঘনমাত্রা অনেক বেশি থাকে। আবার বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দেহ কোষেও চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। এসকল জীবানুর দেহের কোষে যে চিনি থাকে সেটা মধুর থেকে অনেক কম।
তাই যখন কোন জীবণু যখন মধু প্রবেশ করে তখন অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মধুর জীবাণুর মধ্য থেকে কিছু পরিমাণে পানি মধুর মধ্যে চলে যায়। আর একটি জীবাণুর কোষ থেকে যখন পানি বের হয়ে যায় তখন সেটি আর বাঁচতে পারে না বরং মারা যায়। এর কারণেই কোন ধরনের জীবাণু এই মধুদের টিকতে পারে না। আর আমরা জানি যে যে কোন জিনিস পচা কিংবা নষ্ট হওয়ার জন্য জীবাণু প্রয়োজন।
প্রকৃতিতে ফেলে রাখা বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দেহ, আবর্জনা, গাছপালা ইত্যাদিতে ব্যাকটেরিয়া পড়ে সেগুলো নষ্ট করে ফেলে এবং আবার মাটির সাথে পুনরায় মিশিয়ে দেয়। আশা করি মধু কেন পচে না কিংবা মধু কেন নষ্ট হয় না সে সম্পর্কে আপনার কিছুটা ধারণা পেয়েছেন।
এখানে আরো কিছু বিষয় রয়েছে। সেটি হচ্ছে অ্যাসিড। মধুর ph হচ্ছে মাত্র ৩.২৬ থেকে ৪.৪৮ পর্যন্ত। ph এর অর্থ হচ্ছে পোটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন অর্থাৎ কোন অ্যাসিডে হাইড্রোজেনের পরিমাণ। এই হাইড্রোজেনের পরিমাণের উপর নির্ভর করেই এসিডিটির তীব্রতা নির্ভর করে।
কোন খাদ্যদ্রব্যের ph এর মান যত বেশি হবে সেটিতে এসিডের পরিমাণ তত কম থাকবে। আবার পিএইচ এর মান যত কম হবে এসিডের মাত্রা তত বেশি হবে। মধুতে বেশ ভালো পরিমাণে ph থাকার কারণে এটি সহজে যেকোনো ধরনের জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে। এখন নিশ্চয়ই আরো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে মধু কেন নষ্ট হয় না।
আবার একটি মৌমাছি যখন বিভিন্ন ফুল হতে মধুর সংগ্রহ করে মৌচাকের কুঠুরিতে রাখে তখন তার পেটের ভেতর থেকে কিছু জৈব রাসায়নিক পদার্থ অর্থাৎ এনজাইম বের হয়। এ সকল এনজাইম গুলো পরবর্তীতে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে গ্লুকোনিক অ্যাসিড কিংবা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদন করে। কোন মধুতে জীবাণু জমতে না দেওয়ার ক্ষেত্রে এটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্যই মধুর সহজে নষ্ট হয় না কিংবা মধু পচে না।