বিয়ের আগে কাবিননামা সম্পর্কে যে বিষয় গুলি জানা উচিত

বিয়ের মাধ্যমে একজন নারী এবং পুরুষের মধ্যে সম্পর্কের বৈধতা প্রদান করা হয়। আরে বিয়ের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে কাবিননামা সম্পন্ন করা। যেটিকে বিয়ের আইনের চুক্তি কিংবা নিকাহনামা বলা হিসেবে অবিহিত করা হয়। কাবিননামার টাকার নির্ধারণের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শর্ত উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

আজকে আমি মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ কাবিননামা সম্পর্কে কিছু তথ্য আলোচনা করব। বিয়ে করার আগে অবশ্যই এই তথ্য গুলোর সম্পর্কে জানা থাকা উচিত। যাতে করে পড়া পরবর্তীতে যেকোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে।

কাবিননামা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য

১। কাবিনের টাকা নির্ধারণ

আমাদের সমাজে এটি দেনমোহর নামে পরিচিত। ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বিয়ের সময় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত অর্থকেই দেনমোহর বলা হয়ে থাকে। পারিবারিক অনুশীলন আয়ের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় গুলো বিবেচনা করে আগে থেকেই দেনমোহরের টাকা নির্ধারণ করে রাখা উচিত। এমনকি এটি কোনভাবে বকে না রেখে সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তাই বকেয়া রেখে সামর্থ্যের বাইরে কখনোই কামিনের টাকা নির্ধারণ করা উচিত নয়। পরবর্তীতে স্বামী কিংবা স্ত্রী যার পক্ষ থেকেই তালাক দেওয়া হোক না কেন অবশ্যই কাবিনের টাকা স্বামীকে পরিশোধ করতে হবে।

২। কাবিননামায় বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার

বর্তমানে কাবিননামায় একটি অংশ আছে যেটাতে উল্লেখ করা হয় যে স্ত্রী তালাক দেওয়ার অধিকার রাখতে পারে। এটি বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী বিয়ে ভেঙে দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই শর্ত প্রযোজ্য রয়েছে।

৩। স্বামীর পক্ষ থেকে বিচ্ছেদের অধিকার

মুসলিম বিয়েতে সাধারণত তালাক দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয় স্বামীকে। তবে কিছু আইন কানুনের মাধ্যমে এই অধিকারও সীমিত করা যেতে পারে। তবে এই প্রক্রিয়াটির সম্পূর্ণটা নির্ভর করে দম্পতির চাহিদার উপর। তারা যদি একসাথে থাকতে না চায় তাহলে যে কারো পক্ষ থেকেই বিচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে পারে।

৪। কাবিননামায় দম্পতির উকিল বাবা

আমাদের সমাজে উকিল বাবা প্রদান করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মাধ্যমে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করা হয় যারা বিভিন্ন ধরনের বিবাদ কিংবা দাম্পত্য জীবনের সমস্যা দেখা দিলে সমাধানে এগিয়ে আসেন।

৫। কাবিননামায় সাক্ষী উল্লেখ

কাবিননামা করার সমাজে যুক্তি গুলো করা হয় তার উভয় পক্ষ থেকে অনুমোদনের জন্য কমপক্ষে ২ জন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হয়। এমনকি যে সকল ব্যক্তিগণ সাক্ষী হিসেবে চুক্তি নামের স্বাক্ষর করবে তাদের সাথে যোগাযোগের বিবরণও উল্লেখ করতে হবে। কারণ যে কোন ধরনের বিবাদ সমাধানের লক্ষ্যে সাতক্ষীরা নিরপেক্ষ হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

৬। কাবিননামার ভাষা

সকল কাবিন নামাই বাংলা ভাষায় লেখা হয়ে থাকে। তবে দম্পতি চাইলে পরবর্তীতে অর্থ প্রধান ও অনুবাদ সাপেক্ষে যে কোন ভাষায় এটি অনুবাদ করিয়ে নিতে পারবেন।

৭। কাবিননামায় আগের বিয়ের বিবরণ উল্লেখ

যদি বর কিংবা কনে যে কারোরই আগে বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে তার বিস্তারিত লিখতে হবে। এখানে পূর্বের বিয়ে ভাঙার কারণ যেমন; তালাক, মৃত্যু ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা জরুরী।

একজন স্বামী-স্ত্রীর জীবনে কাবিননামা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী একজন পুরুষ একই সাথে সর্বোচ্চ ৪ জন নারীকে বিয়ে করতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই সালিশি পরিষদ থেকে বিয়ের জন্য অনুমতি নিতে হবে।

আবার কাবিননামার একটি অংশে বর এবং কোন নিজেদের মতো করে শর্ত যুক্ত করে নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে তাদেরকে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আইনি সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।

Leave a Comment