বিমানের ব্ল্যাক বক্স কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে

যখন একটি উড়োজাহাজ দূর্ঘটনা হয় তখন সেটির কারণ এবং নানা ধরনের রেকর্ড বের করার জন্য ব্ল্যাকবক্সের সাহায্য নেওয়া হয়। বিমানের ব্ল্যাক বক্স কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে তা অনেকেরই অজানা। এটি মূলত মাল্টি পার্টেে একটি ডিভাইস যাকে আমরা ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার নামে অভিহিত করে থাকি। সংক্ষেপে বলা হয় এফডিআর (FDR। অন্যান্য ডাটার সাথে FRD ককপিটের ভয়েস রেকর্ডও সংরক্ষণ করে থাকে। যে অংশটিকে বলা হয় CVR।

এই ডিভাইসটি উড়োজাহাজের গতি, ফ্লাইটের সময় বাতাসের গতি, ভূপৃষ্ঠ থেকে উড়োজাহাজের উচ্চতা, জ্বালানির রেকর্ড, চাকার চলাচলের রেকর্ড ইত্যাদি সংরক্ষণ করে থাকে। সেই সাথে আরেকটি অংশ ককপিটের অভ্যন্তরের সমর সকল ধরনের অডিও এবং কথোপকথন সংরক্ষণ করে। যার মাধ্যমে দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে এ সকল অডিও থেকে যথাযথ কারণ বের করা যায়। আশা করি ব্ল্যাক বক্স কি সেটি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

ব্ল্যাক বক্সের কাজ এবং এটি দেখতে কি কালো

নাম শুনে আপনারা নিশ্চয়ই মনে মনে ধারণা করে নিয়েছেন যে ডিভাইসটির রং কালো হবে। কিন্তু নাম ব্ল্যাক হলেও এটি দেখতে আসলে কমলা রঙের। এর পেছনেও একটি কারণ রয়েছে। অন্যান্য রঙের তুলনায় কমলা রং খুব সহজেই দেখা যায়।

আবার বক্স শব্দটি শুনে আপনাদের মনে এটাও ধারণা হয়েছে যে নিশ্চয়ই ডিভাইসটি দেখতে চারকোনা আকৃতির। বাস্তবে এটি সিলিন্ডার আকৃতি হয়ে থাকে। তবে এটিকে বাক্সের মত একটি কাঠামোতে রাখা হয় এবং আলাদা স্টোরেজ ইউনিট রয়েছে। তবে যারা মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কাজ করেন তারা এই ডিভাইসটিকে বলে থাকেন ইলেকট্রনিক ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার।

সাধারণভাবে একটি ব্ল্যাক বক্স ১৭ থেকে ২৫ ঘন্টা পর্যন্ত ডাটা সংরক্ষণ করতে পারে। এরমধ্যে রয়েছে ককপিটের পাইলট, কেবিন ক্রুদের কথোপকথন ইত্যাদি।

এটি কতটা শক্ত থাকে

বিমান দুর্ঘটনার পর অন্যান্য তেমন কিছু অক্ষত না থাকলেও এটি বেশ নিরাপদই থাকে। এর কারণ হচ্ছে অত্যন্ত মজবুতভাবে নির্মাণ করা হয়। লিথিয়াম বা স্টেইনলেস স্টিলের মত শক্ত ধাতু দিয়ে তৈরি ব্ল্যাক বক্সকে যদি ঘন্টায় ৮০০ কিলোমিটার বেগে কোনো পাথরের দিকে ছুড়ে মারা হয় তাহলে এটি কোন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সেই সাথে এর উপরে প্রায় আড়াই টন ওজন ৫ মিনিটের জন্য রেখে দিলেও সুন্দরভাবে টিকে থাকতে পারবে। আর যদি পানির ৬ হাজার মিটার গভীরেও নেয়া হয় তাহলেও পানির চাপে এটি কিছুই হবে না।

একটি ব্ল্যাকবক্স সাধারণত ১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় সারভাইভ করতে পারে। প্রতিটি ডিভাইসের সাথে থাকে আলাদা আলাদা সেন্সর। অর্থাৎ এটি যদি সমুদ্র কিংবা নদীর পানি সংস্পর্শে আসে তাহলে এর সেন্সর হতে একটি সংগীত পাঠানো হয় যার মাধ্যমে উদ্ধারকারীরা এর লোকেশন পেতে পারে। এমনকি টানা ৩০ দিন ধরেও এটি সিগন্যাল পাঠাতে পারে।

কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয় এই ব্ল্যাক বক্স

ব্লাক বক্স এর কাজ জানার পর নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন এসেছে যে শুধুমাত্র বিমানে কি এটি ব্যবহার করা হয়। এর উত্তর হচ্ছে বিমান ছাড়াও গাড়ি, জাহাজ বিভিন্ন ইভেন্টেও এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই ডিভাইসটিরও অনেক আপডেট এসেছে। আর যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা শেষে ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার করা এই বক্স থেকে ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক্সিডেন্টের কারণ বের করা সম্ভব।

Leave a Comment