আমরা যারা অ্যালার্জি সমস্যায় ভুগি তারাই জানে এটি কতটা ঝামেলা আর তৈরি করে। তবে সঠিক খাদ্যাভাস এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে এটি অনেকাংশে প্রতিকার করা সম্ভব। এ সম্পর্কে চিকিৎসকেরা যা পরামর্শ দিয়ে থাকেন তার আলোকে চলুন খুটিনাটি বিষয়গুলি জেনে নিন।
এলার্জি কি ও কীভাবে হয়
যেকোনো কিছু প্রতিরোধ কিংবা প্রতিকার করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। আমাদের দেহে এক ধরনের ইমিউন সিস্টেম রয়েছে। যেটাকে আমরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলতে পারি।
এই ইমিউন সিস্টেমটি দেহের ক্ষতিকারক পদার্থ এবং জীবাণু গুলোকে শরীর থেকে বের করে দেয় অথবা নষ্ট করে দেয়। অনেক সময় শরীরের জন্য উপকারী কিংবা প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান আছে যেগুলোকেউ এই ইমিুন সিস্টেম ক্ষতিকর মনে করে থাকে। অর্থাৎ শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় কিন্তু আমাদের ইমিউন সিস্টেম মনে করছে এটি ক্ষতিকর।
তখন সেটি আর শরীরে গ্রহণ করতে পারেনা। এর ফলে দেহে একটি অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া বা রিয়েকশন দেখা দেয় যেটাকে আমরা অ্যালার্জি বলে থাকি।
অ্যালার্জির লক্ষণ ও ধরন গুলো কি কি
এর লক্ষণ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। আবার মানুষ ভেদেও লক্ষণ ও পরিবর্তিত হয়। এলার্জির লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চুলকানি হওয়া, দেহের বিভিন্ন অংশে রেশ দেখা দেওয়া, দাগ হওয়া, সর্দি, হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখে চুলকানি করা, মাথা ব্যথা করা ইত্যাদি।
কারো কারো আবার ঠোঁট ফুলে যায়। লক্ষণ গুলো কেমন হবে সেটি মূলত নির্ভর করে কোন ধরনের অ্যালার্জি হয়েছে তার ওপর। এবার চলুন এলার্জির ধরন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক।
খাবার থেকে অ্যালার্জি
এটি সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন, কচু শাক, গরুর মাংস ইত্যাদিতে মানুষের অ্যালার্জির পরিমাণ সবচাইতে বেশি। অনেকের আবার দুধ কিংবা ডিম জাতীয় খাবারেও এটি হতে পারে।
খাবার থেকে এলার্জি হলে মূলত শরীর অনেক বেশি চুলকায় এবং রেশ হয়ে যায়। চোখ লাল হয়ে যেতে পারে এবং ঠোঁট ফুলে যেতে পারে।
এনাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন এলার্জি
এটিও এক ধরনের এলার্জি যেটি অনেক বিপদজনক। এরকমটা হলে মানুষের ব্লাড প্রেসার একদম কমে যায় এবং মারা যেতে পারে।
ইনহেল জনিত অ্যালার্জি
এ সমস্যাটিও খুবই সাধারণ। বাইরের ধুলাবালি, পারফিউম, মশার কয়েল, ফুলের রেনু, বিড়ালের পশম ইত্যাদিতে অনেকের শরীরে এলার্জি হয়ে যায়। আবার বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাস এবং তেলাপোকা শরীরের স্পর্শ লাগলেও হতে পারে অ্যালার্জি।
মেডিসিন থেকে এলার্জি
পেনিসিলিন এবং ব্যাথা নাশক কিছু মেডিসিনের জন্য আমাদের দেহে এলার্জি রিয়েকশন হতে পারে।
এলার্জির অন্যান্য প্রকারভেদ
• বিভিন্ন ধরনের রাবার জাতীয় পণ্য যেমন: রাবারের ব্যান্ড, বেলুন, গ্লোভস ইত্যাদি থেকে মানুষের অ্যালার্জি হয়।
• মৌমাছি, পিপড়া ইত্যাদি বিষাক্ত পোকামাকড় দেহে হুল ফুটালে সেখান থেকে এলার্জি রিয়াকশন হতে পারে।
এলার্জি দূর করার উপায়
উপরে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে সবার একই কারণে এলার্জি হয় না। তাইতো কারণ গুলি নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তারপর চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। যদি আপনি সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেন কোন কোন খাবার বা উপাদানে আপনার এ ধরনের সমস্যা হয় তাহলেই অনেকাংশে চিকিৎসা সহজ করা যাবে। এমনকি সে সকল বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখলেই এটি থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।
এছাড়াও আধুনিক চিকিৎসার পদ্ধতিতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেও শনাক্ত করা যায় আপনার কিসে অ্যালার্জি।
তবে এটি প্রতিকার এবং প্রতিরোধের সবচাইতে উত্তম উপায় হচ্ছে যে সকল বিষয় গুলোতে আপনার সমস্যা হয় সেগুলো সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা। এছাড়াও বাইরে বের হওয়ার সময় মাক্স কিংবা টুপি ব্যবহার করাও জরুরী। এটা যেহেতু একটি দীর্ঘমেয়াদী লোক তাই আপনাকেও মোটামুটি বাকি জীবন সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে।
আবার অ্যালার্জির কারণে যদি রোগের ঠোঁট ফুলে যায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ঢোক গিলতে কষ্ট হয় এবং ব্লাড প্রেসার একদমই নিচে নেমে যেতে হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।