জন্মগ্রহণ করার পর থেকে উচ্চতা বৃদ্ধি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। আবার নির্দিষ্ট সময় পর লম্বা হওয়ার বিষয়টি একদমই থেমে যায়। কিন্তু আপনাকে জানেন যুবক বয়সের পর থেকে মানুষ যত বৃদ্ধ হতে থাকে তার উচ্চতা ততই কমতে থাকে। বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কি বলে চলুন জেনে নেওয়া যায়।
কমতে থাকে হাড়ের ঘনত্ব
আমাদের বয়স যত বাড়তে থাকে শরীরে দেখা যায় নানা ধরনের জটিলতা। যার মধ্য রয়েছে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া। এটি মূলত উচ্চতার হ্রাসের জন্য দায়ী। পুরো জীবন জুড়েই আমাদের শরীরে কিছু না কিছু পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন আগের হাড় গুলি বদলে নতুন হাড় গঠিত হয়। কিন্তু আমরা যখন যুবক থাকি তখন এর কার্যকলাপের মধ্যেও কিছুটা ভারসাম্য থাকে। কিন্তু বয়স বাড়তে থাকলেই ঘটতে থাকে নানা ধরনের বিপত্তি।হাড় দুর্বল হয়ে যায়, ভঙ্গুর হয়ে যায় এমনকি ক্ষয় হয়ে যায়।
আমাদের মেরুদন্ডের হাড়ের মধ্য লম্বা এক ধরনের জেলির পদার্থ রয়েছে। এমনকি সেখানে ডিক্সের মত দেখতে হাড়ের একটি অংশ রয়েছে। জেলির মতো পদার্থ গুলি এই হাড়কে নরম রক্তের সাহায্য করে। কিন্তু দিন যত যায় আরে ডিস্কগুলোর যদিও তত শুকিয়ে যায়। স্থিতিস্থাপকতা কমে হাড় গুলো আস্তে আস্তে সংকুচিত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে নরবড়ে হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা এটাকে বলা হয় ডিক্স হার্নিয়েসন। যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা বেশ জটিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে উচ্চতা কমার এটিও একটি অন্যতম কারণ।
জীবন যাপনে ভিন্নতা
একজন কিশোর, যুবক কিংবা বয়স্ক মানুষের চলাফেরায় অবশ্যই কিছু পার্থক্য হয়। কিশোর বয়সে আমরা যেভাবে খেলাধুলা করি, দৌড়াদৌড়ি করি কিংবা হাটি, বয়স ৪০ পার হওয়ার পর সেটা আর সম্ভব হয় না। এমনকি দেখবেন মুরুব্বীরা কাঁধ কিছুটা ঝুকিয়ে হাঁটছে, কাজ করতে করতে মেরুদন্ড কিছুটা বেঁকে গিয়েছে। এ ধরনের প্রবলেম গুলোকে বলা হয় কাইফোসিস। বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস, কাজের ধরন, জীবন যাপনের ধারা ইত্যাদির কারণে আমাদের মেরুদন্ড এবং দেহে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। কেউ যদি কিছুটা ঝুঁকে যায় কিংবা মেরুদন্ড যদি কিছুটা সামনের দিকে হেলে পড়ে তাহলে উচ্চতায় কিছু ঘাটতি দেখা যায়।
অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন
সুস্থ মন এবং দেহের জন্য সুস্থ জীবন যাপন প্রয়োজন। কিন্তু বাইরের ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাবার এসব খেয়ে আমার নানা ধরনের সমস্যাই ভুলে থাকি। এমনকি পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে অসুখ বিসুখ হয়ে থাকে।
আবার যারা কিনা কাজ করে না সারাদিন বাসায় বসে অলস সময় কাটায়, টিভি দেখে তাদের খেতেও শারীরিক জটিলতা হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম না করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে না হাটা ইত্যাদি কারণে হাড় আস্তে আস্তে ক্ষয় করে। আবার ধূমপান, মদ্য পান ইত্যাদি আমাদের দেহের ক্যালসিয়ামকে শোষণে বাধা প্রদান করে। এর ফলে আস্তে আস্তে হাড়ের ক্ষতি হয়। তাই উচ্চতা কমানো প্রতিরোধ করার জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা প্রয়োজন।
বংশগত রোগ
আমাদের দেহের অনেক অসুখ বিসুখ বংশগত কারণে হয়ে থাকে। অষ্টিওপোরোসিস একটি রোগ যেটির কারণে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। যদি আপনার পরিবারেও এই রোগের ইতিহাস থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
এটি চিরন্তন সত্য যে, মোটামুটি বয়স ৩০ পার হওয়ার পর আমাদের দেহে মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া, উচ্চতা কমে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, বার্ধক্যজনিম ছাপ পড়া ইত্যাদি শুরু হতে থাকে। আপনি কোনভাবেই এটিকে প্রতিরোধ করতে পারবেন না। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার ও সুস্থ জীবন যাপনের মাধ্যমে এই গতিকে অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারবেন। অর্থাৎ ৪০ বছর বয়সের পরেও আপনি যুবকদের মত দৈহিক গঠন পেতে পারেন। নিয়মিত ফল, মূল শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়ার পাশাপাশি ব্যায়াম বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা সাঁতার কাটা মত বিষয় গুলি আমাদের দেহের জন্য সবচাইতে বেশি উপকারী।