বোবায় ধরা কি | এটি কেন ঘটে

মধ্যরাতে হঠাৎ করেই ঘুম ভাঙ্গার পরে আপনি অনুভব করতে পারলেন যে শরীরের কোন অংশ ঠিকমতো কাজ করছে না। অনেকজনের চিৎকার করে ডাকার পরেও আপনার আওয়াজ গলা থেকে বের হচ্ছে না কিংবা কেউ শুনতে পাচ্ছে না। আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় এটিকে বোবায় ধরা বলে এবং ইংরেজিতে বলা হয় স্লিপ প্যারাডাইস।

প্রায় সব মানুষের জীবনের একটি সময় এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকে। কারো কারো সাথে এটি নিয়মিত ঘটে থাকে। মূলত ঘুম থেকে জাগা এবং ঘুমানোর মধ্যবর্তী একটি অবস্থা যেটা কিনা আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে হয়। অনেকটা এরকম যে আপনার পুরো শরীর ঘুমন্ত অবস্থায় আছে কিন্তু আপনার মস্তিষ্ক জেগে গিয়েছে। তবে বোবা ধরা কি এটি মূলত একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি তৈরি হতে পারে। কেউ কেউ আবার এই সময় কোন গন্ধ পান কিংবা ঘরের ভেতরে অন্য কারো উপস্থিতি। সংক্ষেপে বলতে গেলে এক ধরনের হ্যালুসিনেশন।

বোবায় ধরা কি

আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন স্লিপ প্যারাডাইস বা বোবা ধরলে কি ধরনের অনুভূতি হয়। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলে থাকেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ বোবায় ধরার সাথে যে কুসংস্কারে বিশ্বাসী হিসেবে সম্পূর্ণ ভুল। অনেকে মনে করে মানুষের উপর জিনের প্রভাব পড়লে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয় কিংবা মানুষ তখন নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

এর আবার বেশ কয়েকটি স্তর রয়েছে। এর মধ্য একটি হচ্ছে আপনি ঘুমের মধ্যে থাকলেও শরীর আংশিকভাবে নড়াচড়া করতে পারবেন কিংবা মুখ দিয়ে সামান্য পরিমাণে শব্দ করতে পারবেন। আবার আরেকটি ক্যাটাগরি হচ্ছে যেটাতে আপনি কোন ভাবে নড়াচড়া করতে পারবেন না কিন্তু মুখ থেকে কোন শব্দ বের করতে পারবেন না।

মানুষকে বোবায় কেন ধরে

অন্য কোন শারীরিক সমস্যা অসুস্থতা মেডিসিনের প্রভাব ইত্যাদির কারণেও এ ধরনের স্লিপ প্যারাডাইস হতে পারে। আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্লাইসিন ও গামা এমাইনোবিউটরিক অ্যাসিড। এসকল রাসায়নিক পদার্থের কারণে অনেক সময় আমাদের মস্তিষ্কের মাংসপেশি অসাড় হতে পারে এবং কাজ করা অনেকটাই বন্ধ করে দিতে পারে।

বোবায় ধরা কি এটা জানার পাশাপাশি আপনাকে লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানা উচিত। এতে করে আপনার পাশে ঘুমানো কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। যখন কাউকে বোবা ধরে সে সাধারণত ফিসফিস গর্জনের মত শব্দ করতে পারে। যে ধরনের শব্দ গুলির সাধারণত ঘুমের মধ্যে করার কথা নয়।

আবার শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় এবং নাড়াচাড়া করতে যাচ্ছে কিন্তু নাড়াচড়া করতে পারছে না এ ধরনের পরিস্থিতিও তৈরি হয়।

যে সকল ব্যক্তি পুরো জীবনে হঠাৎ করে একবার বা কয়েকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তাদের ক্ষেত্রে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই। সাময়িকভাবে ঘুমানোর পজিশনের ভুল। তবে যাদের কিনা নিয়মিতই এটি হয়ে থাকে তাদের অবশ্যই ভালো কোন নিউরোলজিস্ট অথবা সার্জনের কাছে যেতে হবে। শারীরিক সমস্যার চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক কাউন্সিল করা প্রয়োজন। তবে যারা নিয়মিত ধূমপান করেন কিংবা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাদের আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কারণ বোবায় ধরা কি সেটা তো আমরা জানি কিন্তু এর ফলে ঘরে যেতে পারে মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা।

Leave a Comment