পৃথিবীর সকল নারী-পুরুষই চায় তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য। আর এর জন্য ব্যবহার করে থাকেন নানা ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী এবং এক্সেসরিজ। যার মধ্যে অন্যতম রঙিন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের নিয়ম ও দাম সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো। আবার কারো কারো মনে প্রশ্ন রয়েছে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ব্যবহার করা যাবে কিনা। চলুন সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার
আমাদের দেহের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অঙ্গ হচ্ছে চোখ। আর এই চোখের উপরে বাড়তে একটি আবরণ দেওয়া বেশ ঝুঁকির একটি বিষয়। ইসলাম আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য শরীরের ক্ষতি করা অনুমতি দেয় না।
আবার অপচয়ের দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে। কিছু কিছু কন্টাক্ট লেন্সের দাম অনেক বেশি। শুধুমাত্র চোখের বাড়তে একটু সৌন্দর্যের জন্য এই ধরনের অর্থ ব্যয় অপচয়ের আওতায় পড়ে।
ধোঁকা বা প্রতারণার উদ্দেশ্যে ও এটি ব্যবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার সম্পূর্ণ নাজায়েজ। অনেক সময় পাত্র-পাত্রী একে অপরকে ধোকা দেওয়া, অসুস্থতা গোপন করা, পরিচয় পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যদি এটা ব্যবহার করা হয় তা অবশ্যই প্রতারণা বলে গণ্য করা হবে।
আবার পর পুরুষের সামনে নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন কিংবা সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য এটা ব্যবহার করা যাবে না।
যদি না কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে আমাদের চোখের ক্ষতি না হয়, টাকা অর্থ অপচয় না হয়, প্রতারণা না হয়, পর পুরুষের সামনে সৌন্দর্য উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে না হয় তাহলে এটি ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। আলেমরা এমনই মতামত প্রদান করেছেন। আর চিকিৎসক যদি চোখের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে থাকে তাহলেও ব্যবহার করা যাবে।
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের নিয়ম কি
এটি ব্যবহারের সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। সামান্য অসতর্কতা কিংবা অসচেতনতা কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারেন। বিশেষ করে মানহীন কম দামি লেন্স ব্যবহার করে অনেকেই নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
মূলত এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই কন্টাক্ট লেন্স সবার সামনে এসেছে এমনকি ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। আবার চোখের চিকিৎসার জন্য অপারেশন করে কৃত্রিম লেন্সও লাগানো হয় যেটি পরবর্তীতে আর কখনো খোলা যায় না। তবে কন্টাক্ট লেন্সের দাম ও কৃত্রিম লেন্সের দামের মধ্যেও আকাশে পাতাল ডিফারেন্স রয়েছে।
• যখন লেন্স চোখে লাগাবেন তখন এর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নিশ্চিত করুন। একই সাথে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে তিনি নিন এবং খেয়াল রাখবেন কোন ভাবে যেন আঁচর না লাগে।
• লেন্স পড়ার পর সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে সেটি অবশ্যই খুলে ফেলবেন এবং রাতে কোনভাবেই এটি পড়ে ঘুমানো যাবে না।
• ডান চোখ এবং বাম চোখের লেন্স যেন ওলট-পালট না হয়ে যায় এমন এটি পড়া অবস্থায় চোখে ঘষা যাবে না।
• যখন এই লেন্সগুলো কেনা হয় তখন একটি কৌটায় সলিউশনে ডুবিয়ে রাখা হয় এবং প্রতিদিন সলিউশন পরিবর্তন করতে হয়। কোনভাবেই পানি দিয়ে এটি পরিষ্কার করা যাবে না।
• এর উপকারিতা থাকলেও সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ নয়। তাই সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি ব্যবহার করা উচিত।
কাদের ক্ষেত্রে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যাবে না
• যাদের এলার্জির সমস্যা আছে বিশেষ করে চোখে তারা এটি কোনভাবেই ব্যবহার করবেন না।
• বাইরে ধুলাবালিতে কিংবা রোদের মধ্যে কাজ করেন তাদের জন্য এটি খুবই অনিরাপদ।
• মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন যারা কেনার নিজের খেয়াল রাখতে পারেনা ঠিক মতন বা অভরের উপর নির্ভরশীল তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না।
• চোখে ইতিমধ্যে সমস্যা রয়েছে যেমন পানি পড়ে, চোখ লাল হয়ে যায় ইত্যাদি ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটিও নিরাপদ নয়।
• ডায়াবেটিস রোগী যারা ইতিমধ্য ইনসুলিন গ্রহণ করেন তাদের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা নিষেধ করেছেন।
একটি লেন্স তৈরি হয় স্বচ্ছ প্লাস্টিক দ্বারা। তাই এর মধ্য দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ হতে পারে না। যার কারণে একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা আপনি পড়ে থাকতে পারবেন না বরঞ্চ ৪ ঘন্টা পর পর বিরতি নিয়ে খুলে ফেলে ধুয়ে আবার পড়তে হবে। প্লাস্টিক লেন্সের তুলনায় হার্ড কন্টাক্ট লেন্সের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি এবং অনেকদিন বেশি পরিষ্কার থাকে।
আবার উন্নত মানের সফট লেন্স এটার ভেতর দিয়ে অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম। তবে অনেক বেশি নরম হওয়ায় এটি খুলে যেতে পারে কিংবা ভেঙ্গে যেতে পারে। যেকোনো ধরনের কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের পর সলিউশনে ডুবিয়ে রাখতে হয়।
কন্টাক্ট লেন্সের দাম কত
রং, ধরন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রসাধনী বা কসমেটিক্স এর দোকান থেকে একজোড়া লেন্স আপনি ২০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন। আবার ১০০০ টাকার নিচেও অনেক লেন্স পাওয়া যায় যেগুলোর কোয়ালিটি খুব একটা ভালো না এবং কিছুদিন পরেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে এক বছর মেয়াদী একটি সফট কন্টাক্ট লেন্সের দাম পড়তে পারে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার সম্পর্কে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।