ড্রাগন ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ এবং প্রতিকার

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বাজারে ড্রাগন ফল বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাইতো অধিক মুনাফার আশায় অনেকেই এই ফলটি চাষাবাদ করা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু ড্রাগন ফল ঝরে যাওয়ার কারণ, সঠিক পরিচর্যা, সার প্রয়োগ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান না থাকার কারণে সঠিক ফলন এবং লাভবান হতে পারছেন না কেউ কেউ।

আজকে আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব। যাতে করে আপনার আর ড্রাগন ফল চাষাবাদ সম্পর্কিত সকল ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় গুলি জানতে পারেন। এটি বিদেশী ফল নামেও পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশে এটি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা হয়।

তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফলের তুলনায় এটির দাম কিছুটা বেশি এবং অনেকের কাছে ভালো লাগে আবার কারো কারো কাছে পছন্দ নয়। কিন্তু গাঢ় লাল রঙের এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, উচ্চ ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। যেগুলো আপনার শরীরের রোগ বালাই নিমেষে দূর করে যেতে পারে।

তাছাড়া চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, পেটের সমস্যা দূর, ত্বককে সুন্দর করা ইত্যাদি উপকারিতাতো রয়েছেই। এ সকল উপকারিতার কারণেও অনেকেই এটি খেয়ে থাকেন এমনকি বাসা বাড়িতে তবে চাষ করার চেষ্টা করেন।

তবে যেকোনো ধরনের চাষাবাদ কিংবা ফলন একদমই সহজ কাজ নয়। তাইতো ড্রাগন ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ জানাটা খুবই জরুরী। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে ড্রাগন চাষীদের মুখে এই সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। এর কারণ গুলো এমনি এমনি আলোচনা করা হলো।

ড্রাগন ফল ঝরে যাওয়ার কারণ গুলি কি কি

অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, পানি দেওয়া ইত্যাদির কারণে এই ফুল ঝরে যেতে পারে। আরো কিছু কারণ রয়েছে যেগুলি হল।

ফাঙ্গাসের বিস্তার

আমরা যেকোনো ফুল কিংবা ফলের গাছ লাগাতে গিয়ে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে পানি দিয়ে থাকে তখন সেটিতে ফাঙ্গাস জমা হয়। অর্থাৎ গাছের গোড়ায় বেশি পানি দেওয়ার ফলে সেটির ফুল কিংবা ফল ঝরে যায়। পরবর্তীতে এই ফাঙ্গাস থেকে ব্যাকটেরিয়া ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে।

আবার অনেক আমরা মনে করে থাকি যে বেশি বেশি পানি দিলে হয়তো গাছটি তাড়াতাড়ি বড় হবে এবং ভালো থাকবে। এই ধারণাটিও সম্পূর্ণ ভুল। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পানি দিলে শতকরা ৮০ ভাগ সম্ভাবনা থাকে সেই গাছের ফুল কিংবা ফল ঝরে যাওয়া।

অতিরিক্ত খাবার দেওয়া

দ্রুত ফলন এবং অধিক লাভের আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন জাতীয় খাবার যেমন বিভিন্ন ধরনের ইউরিয়ায় সার প্রদান করে থাকে। এটিও ড্রাগন গাছের ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম।

কীটনাশকের ব্যবহার

আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদিতে কীটনাশক যত কম ব্যবহার করা যায় ততই ভালো। ধরনের পোকামাকড় এবং গাছের অসুখের কারণে কীটনাশক স্প্রে করে থাকে। সাধারণত ড্রাগন গাছে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর কীটনাশক ব্যবহার করা ভালো। কিন্তু আপনি যদি এর চাইতেও ঘন ঘন সময়ে সার্কিং বা কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন তাহলে ঝরে যেতে পারে ফুল।

আবার অতিরিক্ত হারে ফাইবার মেথ্রিন ব্যবহার করলেও এই সমস্যায় দেখা যায়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে রোদ এবং আলোর অভাব

যদি আপনি বাসা বাড়িতে ছাদে, টবে, বাড়ি উঠানে ড্রাগন ফল চাষ করেন তাহলে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো না পৌঁছাতে পারে। এতে করে ফলন যেমন দীর্ঘদিতে হবে ঠিক তেমনি ভাবে ড্রাগন ফুলও ঝরে যেতে পারে। তাই যে স্থানে সারাদিনই প্রায় রোদের আলো থেকে সে সকল স্থানে ড্রাগন ফল চাষ করার চেষ্টা করুন।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না দেওয়া

আগেই উল্লেখ করেছি যে অতিরিক্ত পানি যেমন ক্ষতিকর ঠিক তেমনিভাবে মাটিতে যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পানি থাকে তাহলেও ড্রাগন ফুল ঝরে যেতে পারে।

আর কিছুদিন পরপর অবশ্যই পটাশিয়াম এবং জিংক ব্যবহার করতে হবে তবে সেটা অবশ্যই পরিমাণ মতো।

বিভিন্ন ধরনের পদার্থের অভাব

প্রতিটি গাছে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সঠিক মাটি এবং খনিজ পদার্থের প্রয়োজন। আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন সব ধরনের এলাকায় মাটিতে সব ধরনের গাছ জন্মায় না। ফল চাষের জন্য প্রয়োজ বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ। যদি আপনার চাষের এলাকার মাটি খুব বেশি ভালো না হয় তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজন পরিমাণে আসার ব্যবহার করতে পারেন।

আবার ড্রাগন ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পটাশের অভাব। যখন এ ধরনের লক্ষণ দেখবেন তখন কিছু পরিমাণে পটাশ ব্যবহার করতে পারেন।

ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যার নিয়ম কি

আপনি যত বেশি একটি গাছের পরিচর্যা করবেন সেটি তত দ্রুত বেড়ে উঠবে এবং আপনাকে ভালো ফল দেবে। ভাই আপনি টবে চাষ করেন তাহলে সুন্দরভাবে টবটি পরিষ্কার করে নিন এবং তাতে মাটি দিন। আবার পানি দেওয়ার পরে টব দিয়ে পানি ঝরে যায় এরকম কোন ছিদ্র থাকলে সেগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন।

ড্রাগন গাছে যদি সঠিক পরিমাণ নে কীটনাশক ব্যবহার না করেন তাহলে পিঁপড়ার আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। যার কারণে প্রতিদিন খেয়াল রাখা উচিত যে পিপড়ার আক্রমণ হচ্ছে কিনা। এ ধরনের বিষয় লক্ষ্য করলে তাড়াতাড়ি কীটনাশক ব্যবহার করুন।

এছাড়াও সময়মতো অন্যান্য সার, সূর্যের আলো ইত্যাদি পাওয়ার সুব্যবস্থা করলেই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গাছটা যেমন বেড়ে উঠবে তেমনি কোন ধরনের সমস্যা হবে না

ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা সম্পর্কিত অন্যন্য তথ্যাবলী

সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস অর্থাৎ বর্ষাকালে ড্রাগন গাছে ফুল ধরে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতো ড্রাগন ফলের কোন ক্ষতি করে দিক নেই বললে চলে তবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটের কিছুটা সমস্যা হতে পারে। এর বিপরীতে ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক।

বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন খনিজ পদার্থ যেমন প্রোটিন, ভিটামিন সি, ফাইবার, ভিটামিন বি-৬, ওমেগা, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদির একটি ভালো উৎস হচ্ছে এই ফলটি। হার্টের সমস্যা, হাড়ের সমস্যা, জয়েন্টে ব্যাথা, ত্বক সুন্দর করা, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা ইত্যাদিদের ভূমিকা পালন করে।

আপনারা ড্রাগন ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ গুলি জেনেছেন এখন আপনারা নিজেরাই এর পরিচর্যা এবং প্রতিকার গুলো খুঁজে বের করতে পারবেন। আর এই সকল বিষয়াদি মেইনটেইন করার পরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে যত সম্ভব দ্রুত কৃষিবিদের পরামর্শ নিন।

Leave a Comment