নকল দাঁত লাগানোর খরচ | কিভাবে এটি লাগায়

মুখের শক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে দাঁত। নানা ধরনের অ্যাক্সিডেন্ট, অসুখ কিংবা সমস্যার কারণে এটি খুলে যেতে পারে কিংবা নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমাদের নকল দাঁত লাগানোর খরচ সম্পর্কে ভাবতে হয়। অনেকেই এটা নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকেন। আমরা জানি দাঁতের চিকিৎসা মোটামুটি ভালই ব্যয়বহুল।

আবার অনেকেই অনুমোদনহীন ভুয়া ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রতারণা শিকার হন এবং অন্যান্য দাঁত গুলোরও ক্ষতি করে ফেলেন। তারপর মূল্যবান এই দাঁত হারিয়ে বাকি জীবন নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়। আমি আজকে নকল দাঁত লাগানোর খরচ এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। তাই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তথ্যগুলি আপনার জানা উচিত।

কৃত্রিম দাঁত লাগানোর পদ্ধতি কি কি

ডেনচার পদ্ধতি

অনেক আগে থেকেই এই ধরনের পদ্ধতি গুলো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাধারণত এই পদ্ধতিতে সময় কম লাগে এবং খরচ অনেকটা কম। অনেকে আবার সমস্যা বোধ করেন কারণ এতে একটি বাড়তি প্লেট বা অংশ জুড়ে দেয়া হয়। রাতের বেলা দাঁত খুলে পানিতে ভিজিয়ে রাখার কারণে মাঝে মাঝে অসুবিধা হয়ে থাকে। আবার অনেকেই ডেনচার পদ্ধতিতে দাঁত লাগিয়ে সেটি খুলে রাখেন না পড়ে যার কারণে মাড়িসহ সহ দাঁতের আশেপাশের অংশে সমস্যা হতে পারে।

ব্রিজ পদ্ধতিতে নকল দাঁত লাগানো

এটি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়। সবচাইতে সুবিধা হচ্ছে কখনো দাঁত খুলে রাখতে হয় না এবং বাড়তে কোন অংশও থাকে না। ব্রিজ সিস্টেমটির মাধ্যমে দুই পাশে দুই দাঁতের সাথে যুক্ত করে মাঝখানে একটি পাথরের দাঁত লাগিয়ে দেওয়া হয়। যার কারণে অনেকেই মনে করে থাকেন ভালো দাঁত দুটিও নষ্ট হতে যেতে পারে। তবে এটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত একটি উপায় এবং কৃত্রিম দাঁতের অনুভূতিটি ও ভালোভাবে বোঝা যায় না।

ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি

আপনি নিশ্চয়ই দেয়ালে ড্রিল করে বিভিন্ন ধরনের স্ক্রু লাগাতে দেখেছেন। ঠিক একই পদ্ধতিতে ইমপ্লান্ট বা ড্রিল করে একটি দাঁত চোয়ালের হাড়ের সাথে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এটি পুরোপুরি আসল দাঁতের মতোই আপনাকে অনুভূতি দিবে কিন্তু তুলনামূলকভাবে এটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।

নকল দাঁত লাগানোর খরচ

আপনি ইতিমধ্য কৃত্রিম দাঁত স্থাপন করার পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। আপনি যত উন্নত এবং আধুনিক উপায় অবলম্বন করবেন আপনার খরচ যত বৃদ্ধি পাবে। এখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পাথর এবং দাঁতের কোয়ালিটি। সাধারণত এই ধরনের টাইটেনিয়াম এলয়েড দ্বারা তৈরি করা হয়। এটি মূলত আমেরিকার সহ বিভিন্ন দেশ থেকে কিনে আনা হয়। যদি আপনি খুবই উন্নত মানের পাথর যেটা অনেকটা আসল দাঁতের মতোই সেগুলো করতে চান তাহলে খরচ করতে পারে দাঁত প্রতি ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মত। এটি মূলত সার্জারি পদ্ধতিতে। এমনকি সার্জারি খরচসহ এই অ্যামাউন্ট লাগতে পারে।

আবার ডেনচার বা ব্রিজ পদ্ধতিতে একটি দাঁতের জন্য খরচ হতে পারে ৫০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত। রুট ক্যানেল করে দাঁতে ক্যাপ পোড়ানোর জন্য খরচ হতে পারে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। আসলে এটি তখনি সঠিকভাবে বলা যাবে যখন আপনার মুখের দাঁতের বর্তমান অবস্থা পরিস্থিতি এবং কোন সিস্টেমটি অবলম্বন করবেন তার ওপর।

তবে মোটামুটি ধারণা নিয়ে রাখুন যে আপনার যদি একটি দাঁত স্থাপন করানোর প্রয়োজন হয় তাহলে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। আর যদি ইমপ্লান্ট পদ্ধতি অনুসরণ করেন তাহলে ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের এবং আধুনিক সরঞ্জামের চিকিৎসায়। এ সকল খরচের সাথেও ডাক্তারের ফি এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ আরো কিছু বাড়তেই ব্যয় যুক্ত হতে পারে।

নকল দাঁত লাগানো কি জায়েজ

এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আলেম-ওলামাগণ বলেছেন প্রয়োজনে কৃত্রিম দাঁত লাগানো জায়েজ রয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। বয়স বাড়ার কারণে কিংবা দুর্ঘটনায় একজনের দাঁত পড়ে যেতে পারে। আবার এটা যদি এমন ভাবে স্থাপন করা হয় যেটি মূলদ্বাপের প্রতিস্থাপন বলে গণ্য হয় এক্ষেত্রে কোন প্রকারের অজু কিংবা গোসলের ক্ষেত্রে সেটি খুলে রাখতে হবে না। শুধুমাত্র পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই অজু কিংবা গোসল হয়ে যাবে। আর যদি ইচ্ছা করলে সেটি খুলে রাখা যায় তাহলে ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে সেটি খোলার জন্য বলেছেন ফুকাহায়ে কেরামগণ।

সব সময় মনে রাখবেন যেই ডেন্টিস্টের কাছ থেকে আপনি চিকিৎসা গ্রহণ করবেন তিনি যেন অবশ্যই রেজিস্টার্ড এবং যথাযথ যোগ্যতা সম্পন্ন হয়। আমাদের আশেপাশে প্রচুর ভুয়া ডেন্টিস্ট এবং ডাক্তার রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান হতে সার্জারি করাবেন সেটা সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে নিবেন।

আশা করি নকল দাঁত লাগানোর খরচ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য আপনাদের বাস্তব জীবনে অনেক উপকারে আসবে।

Leave a Comment