সম্প্রতি অনলাইনের বিভিন্ন প্লাটফর্মে আলোচনা হচ্ছে ঘোড়ার মাংস খাওয়া কি হালাল এই বিষয়টি নিয়ে। ঢাকার পাশে অবস্থিত গাজীপুরের হায়দ্রাবাদ এলাকায় এই প্রাণীর মাংস বিক্রি নিয়ে বেশ কৌতূহল এবং আলোচনা তৈরি হয়েছে। গরু, মহিষ কিংবা খাসির তুলনায় কম দামে বিক্রি হওয়া এই মাংস গুলি মুসলমানদের জন্য খাওয়া জায়েজ কিনা তা নিয়ে অনেকেই জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বাণিজ্যিকভাবে গাজীপুরে বিক্রি শুরু হয় ঘোড়ার মাংসের। সপ্তাহের একদিন অর্থাৎ শুক্রবার প্রায় ৪০০ কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে। প্রথমদিকে একটি করে ঘোড়ার গোশত বিক্রি করা শুরু করলেও বর্তমানে ৬ থেকে ৭টি ঘোড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে দামের ব্যবধান। যেখানে গরু, মহিষ কিংবা খাসির গোশত কেনার জন্য খরচ করতে হয় ৬০০ থেকে ১,০০০ টাকা সেখানে মাত্র ২৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায় এ প্রাণীর গোস্ত। সেখানে সরাসরি কিছু স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলেও তাদের মতামত জানা যায়।
গাজীপুর ও এর আশেপাশে এলাকা থেকে আগত কিছু গ্রাহক জানান দাম কম এবং সাথেও বেশ ভালো হয় তারা এই নিয়মিত কিনে নিচ্ছে। এমনকি স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানায় প্রথম দিকে খেতে কিছুটা ইতস্ত লাগলেও এখন অনেকেই নিয়মিত খাচ্ছেন এটি। প্রথম দিকে অনেকে বলতো এটি খাওয়া ঠিক হবে না কিন্তু পরবর্তীতে তারা কোরআন হাদিস জেনে নির্ভয়ে কিনছেন বলে জানিয়েছেন।
আবার সেখানকার অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক জানাচ্ছেন এটি আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হচ্ছে। এমনকি কম দামে হওয়ায় মানুষ গ্রহণও করছে। তাই জন্য সাধারণের কথা চিন্তা করে তারা রেস্টুরেন্টে এটি বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রথম থেকে অনেক মানুষ সন্দেহ করলে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এর বৈধতা নিশ্চিত করায় অনেকেই এটি কিন্তু আগ্রহী হচ্ছেন।
ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল কিনা এ বিষয়ে ইসলামিক চিন্তাবিদরা বৈধ বলে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি আব্দুল কাইয়ুম মিরাজী জানিয়েছেন যে, ঘোড়ার মাংস খাওয়া কে কেউ হারাম বলে উল্লেখ করতে পারবেন না। এটি ইসলাম সম্মত।
তবে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে এটি কতটা মানুষদের জন্য উপকারী সেটিও জানার বিষয়। এ ব্যাপারে শহীদ আহসানুল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার সাংবাদিকদের কে জানান যে ঘোরা সাধারণত মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর জন্য তাদেরকে দৌড়াতে হয় এবং খাবার কখনো কখনো কেমিক্যালও মিশ্রিত করা হয়। যেটির কারণে মানবদেহের কিছুটা ক্ষতিসাধিত হতে পারে। তবে যে প্রাণীগুলোকে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়েছে তাদের মাংসে এই ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। গাজীপুরে এই মাংস বিক্রি কে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন আবার কেউ দ্বিধায় রয়েছেন। অনেকেই তাবে জানিয়েছেন মানুষের গুণগত মান নিষেধ করার জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করার।
ঘোড়ার মাংস খাওয়া কি হালাল
স্বাভাবিকভাে এটি খাওয়া জায়েজ এমনটাই উল্লেখ করেছেন অনেক আলেম। কিন্তু এ প্রাণীটি যেহেতু ব্যাপকভাবে যুদ্ধে ব্যবহার করা হতো তাই ভবিষ্যতে যুদ্ধের জন্য এটি সংকট দেখা দিতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ঘোড়ার গোশত মানুষের জন্য খাওয়া খেয়ে মাকরুহ কিংবা অপছন্দনীয় বলে উল্লেখ করেছেন।
এর কারণ হিসেবে ঘোরার অন্যান্য উপযোগিতা এবং প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। এমনকি মন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনেও ঘোড়াকে বাহন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই সকল দিক গুলি বিশ্লেষণ করে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এটিকে অপছন্দনীয় বা মাকরুহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া হানাফী মাযহাবের দুই বড় ইমাম ঘোড়ার গোশতকে মানুষের জন্য খাওয়া পুরোপুরি ভাবে জায়েজ বলেছেন। এ দুই ইমাম হলেন আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহ এবং মহাম্মদ (রহ.)।
তাদের পক্ষেও বেশ কিছু হাদিস রয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) খায়বারের দিন গাধা (গৃহপালিত পশু) এর গোস্ত খাওয়ার জন্য নিষেধ করেছিলেন এবং ঘোড়ার গোস্ত খাওয়ার জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। (সহিহ বুখারী ৩৯৮২ এবং সহীহ মুসলিম ১৯৪১)
আশা করি ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল নাক কিনা এ ব্যাপারে আপনারা ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। যদি এই বিষয় সম্পর্কে আরো খুঁটিনাটি জানতে চান তাহলে ইন্টারনেট এবং ইউটিউব সার্চ করে বিভিন্ন আলেমের বক্তব্যগুলি শুনতে শুনতে পারেন। অথবা এ ব্যাপারে কোন তথ্য জানার জন্য আমাদের কেউ নক দিতে পারেন।