ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা কি | মানব জীবনে এর প্রভাব

আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা International Network শব্দটি কে আমরা সংক্ষেপে ইন্টারনেট বলে থাকি। ব্যবহার গত দিক থেকে মানব জীবনে ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাপক। বলতে পারেন এটি আমাদের জীবনধারাকেই পরিবর্তন করে দিয়েছে। সেই সাথে সারা বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে।

এই ধারণাটি সর্বপ্রথম শুরু হয় ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরে। সেখানে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয় যার নাম হচ্ছে আরপানেট। আরপানেটের (ARPANET) অর্থ হচ্ছে এডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি নেটওয়ার্ক (Advance Research Project Agency Network)। যেখান থেকে মূলত ইন্টারনেটের গোড়াপত্তন ঘটে। মোটামুটি ৮০ এর দশক পর্যন্ত আরপানেট ব্যবহৃত হতো। এবং সেটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল।

সর্বপ্রথম কম্পিউটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপিত হয় হাজার ১৯৮২ সালে। তখন থেকেই মূলত ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রটোকল বা ইন্টারনেট প্রোটকল উদ্ভাবিত। আর সেটার আধুনিক রুপই হচ্ছে বর্তমানে ইন্টারনেট।

সারা পৃথিবীজুড়ে মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইস গুলোকে একে অপরের সাথে বিস্তৃত করে বিশাল এক জালের মত নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে এই ইন্টারনেট ব্যবস্থা। এখানে সহজে আমরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারি এবং তথ্য আদান-প্রদান করা যায় মুহূর্তের মধ্যেই।

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

এই বিষয়টিকে সহজে উপস্থাপন করা বেশ কঠিন। কারণ সকল প্রতিষ্ঠান এবং মানব জীবনের প্রতিটি অংশে জড়িয়ে রয়েছে এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। তবুও প্রধান প্রধান অংশগুলো আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

ইন্টারনেটে ব্যবহারের সুবিধা সমূহ কি কি

ইন্টারনেটে রয়েছে বিশাল এক তথ্য ভান্ডার। পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত, বসে যেকোনো সময় আপনি এই সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন, পত্রিকার খবর মুহুর্তে পড়া যায়। সেই সাথে আরো জানতে পারেন আবহাওয়া সংবাদ, খেলার খবর, বিনোদন ইত্যাদি সম্পর্কে।

• প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ করার জন্য ইমেইলের প্রতিষ্ঠা হয়েছে এই নেটওয়ার্কের কল্যাণে। এর কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একে অপরের সাথে এই মুহূর্তের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করতে পারে।

• করোনার সময় আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি এই পদ্ধতিটি কিভাবে আমাদের ঘরে বসে লেখাপড়া করতে সহায়তা করে। যা থেকে পরবর্তীতে অনলাইন স্কুলসহ নানা ধরনের স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেটিকে নিরাপত্তা অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের কে সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

• দূরে গিয়ে সব সময় সকল জিনিসপত্র ক্রয় করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা ঘরে বসেই পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত হতে পণ্য অর্ডার করতে পারি।

• ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য অডিও কল, ভিডিও কল এবং মেসেজে সিস্টেম একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার বলতে পারেন। তাইতো মানুষ এখন মানুষের সাথে মুহূর্তে যোগাযোগ করতে পারে এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।

• বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট যেমন facebook twitter ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা যে কোন ধরনের ব্যক্তিকে অনুসরণ করতে পারি এবং তার সম্পর্কে খবর রাখতে পারি।

• ইন্টারনেটের অসুবিধা মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এর ব্যবহার যত বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষ তত নতুন নতুন বিজনেস আইডিয়া তৈরি করতে পারছে। যেগুলো ২ দশক আগেও কল্পনা করা যেত না। যেমন অনলাইনের মাধ্যমে ডাক্তার দেখানো। প্রাথমিক সকল চিকিৎসায় এখন একটি অ্যাপের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ করা যায়। কিছু ফি দিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার জন্য অনেক অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট রয়েছে। উদাহরণ: বিকাশ, রকেট, পাঠাও, উবার ইত্যাদি

• ইন্টারনেট ব্যবহারের আরো একটি যুগান্তকারী অংশ হচ্ছে গুগল ম্যাপ। এর মাধ্যমে যে কোন স্থানের দূরত্ব রাস্তার ট্রাফিক ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।

• ইউনিভার্সিটি, স্কুল, কলেজ, চাকরি ইত্যাদির দরখাস্ত এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে করা যায় বিধায় সময় এবং অর্থ দুটি সাশ্রয় হয়। বর্তমানে তো অনেক ইন্টারভিউ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় অনলাইনে।

• পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ঘরে বসে টাকা উপার্জন করার সুযোগ পাচ্ছে এই নেটওয়ার্কের কল্যাণেই।

ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধার এই পর্বে আমরা আলোচনা করব শুধুমাত্র অসুবিধা গুলো নিয়ে। তবে উপরোক্ত উল্লেখিত পয়েন্টস ছাড়াও আরো অনেক সুবিধা রয়েছে। যেগুলো হয়তোবা এই ছোট একটি আর্টিকেলের বোঝানো কঠিন। প্রতিটি মানুষই এই সুবিধা গুলি উপলব্ধি করতে পারে। আমি শুধুমাত্র প্রধান প্রধান কিছু উপায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

ইন্টারনেটের অসুবিধা গুলো কি কি

• মোবাইলে অতিরিক্ত গেম, ভিডিও ইত্যাদিতে অতিরিক্ত আসক্ত হওয়ার কারণে ছোট ছোট শিশুদের লেখাপড়ার এবং মানসিক বিকাশে সমস্যা হচ্ছে।

• অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য এবং সার্ভিস সবসময় মানসম্মত হয় না যার কারণে অনেকে প্রতারণা শিকার হয়ে থাকেন।

• প্রতারক চক্র বিভিন্ন নতুন নতুন পদ্ধতি বের করে মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।

• বিভিন্ন মাধ্যম গুলোতে ভুয়া খবর কিংবা ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি ছোট একটি ভুয়া খবর থেকে সামাজিক অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।

• অসতর্কতার কারণে কারো মোবাইল থেকে ব্যক্তিগত ছবি কিংবা ডকুমেন্টস সহজে অন্য কেউ চুরি করে নিয়ে তার ক্ষতি করতে পারে।

• অনেক সময় মোবাইল ব্যাংকিং এবং interpring net banking থেকে টাকা চুরির ঘটনাও ঘটে।

ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা গুলোর মধ্যে অসুবিধা সংখ্যাই বেশি। আর যে সমস্যা রয়েছে সেগুলো একেবারে কমিয়ে আনা সম্ভব যদি আপনি ব্যবহারে কিছুটা সচেতন হন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কম বয়সে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল এবং ইন্টারনেট সংযোগ না দেওয়া। আর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি হচ্ছে সকল ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা আপনার অ্যাকাউন্টগুলোতে। এতে করে আপনি অন্য পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে আরো বেশি গতিময় করতে পারবেন।

Leave a Comment