সাম্প্রতিক সময়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পর থেকে বেশ আলোচনা হচ্ছে ইসকন নিয়ে। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস। এমনকি এটিকে উগ্র ধর্মীয় সংগঠন বলেও আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব অনেক দেশেই ইসকন সংগঠন কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই তথ্য গুলো তুলে ধরে বাংলাদেশেও বেশ কয়েকবার দাবি উঠেছে এই সংগঠনের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করার জন্য। এবিষয়ে তবে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের হাইকোর্টের একটি আবেদন আমলের নেয়নি আদালত।
আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে ইসকন সম্পর্কে কিছু তথ্যাবলী আলোচনা করা হবে।
ইসকন কি ও এর কার্যক্রম সম্পর্কে
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা অভয়া চরণাবিন্দ ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ জন্মগ্রহণ করেন ভারতের দক্ষিণ কলকাতা টালিগঞ্জ এলাকায়। সারা বিশ্বজুড়ে ইসকনের ভক্তরা তাকেই মূলত ধর্মগুরু হিসেবে মান্য করে থাকেন।
ইসকনের কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট মুখপাত্র রামায়ণ দাস। তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে লেখাপড়া সম্পন্ন করেছেন। তিনি এই কলকাতায় আসার পরে গুরু মহাগুরুর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন। মূলত তিনি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের নির্দেশনা দেন যে পশ্চিমের দেশগুলোতে গিয়ে সনাতন ধর্মের প্রচারের জন্য। ১৯৮৫ সালের দিকে একটি মালবাহী জাহাজে করেছেন এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের শহরে পৌঁছান।
ইসকনের অফিসের ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে পৌছানোর সময় তার সাথে ছিল কয়েক ট্রাংক ভর্তি বই এবং মাত্র ৭ ডলার। ১৯৬৬ সালে মূলত ইসকন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এসি ভক্তিবেদান্তের আবেদনের মৃত্যু হয় ১৯৭৭ সালে।
এই অল্প কিছু সময় তিনি এই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং রচনা করেছেন ৪০ টারও বেশি গ্রন্থ। সারা বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ইসকনের রয়েছে ৫০০ এর অধিক কেন্দ্র, অনেক মন্দির, বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং ১০০ টির বেশি নিরামিষ রেস্টুরেন্ট। বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রম, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ত্রাণ বিতরণ করে থাকে তারা।
ইসকন কি সনাতন ধর্মের সংগঠন
মূলত ইসকন সংগঠনের মাধ্যমে যে গৌরীয় ব বৈষ্ণব মতবাদ প্রচার করে হয়ে থাকে তা আসলে সনাতন ধর্মের অংশ কিনা এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। আবার কেউ কেউ মতবাদ প্রদর্শন করেছেন যে হিন্দু ধর্মের যে পাঁচটি সম্প্রদায় রয়েছে তার মধ্যে বৈষ্ণব একটি অন্যতম। মূলত সনাতন ধর্ম হচ্ছে দর্শনের সমন্বয় একটি পরম্পরা। যার এক একটি সম্প্রদায়ের মতবাদ এই কিছু একেক রকম।
তারপরে প্রেক্ষিতে ইসকনের সদস্যরা যে ভাবাদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করে থাকে সেটি মূলত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের দর্শন। তবে সময় ও যুগের পরিবর্তে তার সাথে নতুন নতুন কিছু ভাবুনাও যুক্ত হয়েছে। তাই মূলত বলা যায় এ সংগঠনটির ভাবধারা মূলক সনাতন ধর্মেরই অংশ।
ইসকন নিয়ে কেন এত আলোচনা
উপরের তথ্য গুলি উপরে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর লাখো-ভক্ত ছড়িয়ে আছে এবং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সংগঠনের মূল নাম ছাড়া ও সম্প্রদায় অনুযায়ী তাদেরকে পৃথক নাম ও প্রদান করা হয়ে থাকে। এর অনেক সদস্য বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে ব্রহ্মচারী জীবন কে বেছে নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তাদের সদস্যদের তালিকায় রয়েছেন, অ্যাপলের সাবেক সিইও স্টিভ জবস, কবি এলেন গিন্সবার্গ, বিখ্যাত ধনী ব্যক্তি বিল গেটসের অন্যতম মুখ জর্জ হ্যারিসন সহ প্রমুখ ব্যক্তি।
সিঙ্গাপুরে মোটামুটি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নিষিদ্ধ হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি ইসকনের রেজিস্ট্রেশন ও আটকে রাখা হয়েছিল ওই দেশে। যদিও পরবর্তীতে নাম বদলে শুরু হতে পারে কার্যক্রম। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে সে যেখানে তারা সরাসরি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। যেমন চীনেও তাদের কাজ মোটামুটি গোপনেই করতে হয়। ইসকন দাবি করে পাকিস্তানের তাদের অন্তত ১২টি মন্দির রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের প্রচারণার পদ্ধতি নিয়ে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। তাদেরকে একটি মৌলবাদী ধর্মীয় সংগঠন বলেও আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকেই মত প্রকাশ করেন যে তাদের আন্দোলনের দেশে এবং বিদেশের ইন্ধনও রয়েছে।
তবে ইসকনের বিভিন্ন সদস্যদের বাংলাদেশের তারা শুধুমাত্র বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে থাকে।