পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগীতে নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করে। এর মধ্যে অন্যতম ইতিকাফের ফজিলত ও নিয়ম আজকে জানার চেষ্টা করব। ইতিকাফ একটি আরবি শব্দ এবং এর অর্থ হচ্ছে নিজেকে কোন একটি স্থানে আবদ্ধ করে রাখা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় যখন কোন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং শর্তসাপেক্ষে মসজিদে অবস্থান করে তখন তাকে ইতিকাফ বলা হয়।
মহান আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত বন্দেগী করার জন্য। এ ব্যাপারে তিনি ঘোষণা করেছেন যে, আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমার এবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। কাজেই মানুষদের কর্তব্য মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, আচার-আচরণ কর্মকান্ড অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রেই মহান আল্লাহতালার নির্দেশনা পালন করা।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং ফরজ ইবাদত ছাড়া আরও যে সকল ইবাদত রয়েছে তার মধ্যে ইতিকাফের ফজিলত অন্যতম। এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের অনর্থক কাজ, অশ্লীল কথাবার্তা, হাট বাজার, দিন দুনিয়া, সংসার সকল ধরনের কাজকর্ম ছেড়ে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেকে নিয়োজিত করে থাকি।
এই বিষয়ে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজার মাসের শেষের ১০ দিন ইতিকাফ পালন করবে সে দুটি ওমরা ও দুটি হজ আদায় করার সওয়াব পাবে।
এমনকি আমাদের প্রিয় নবীর রাসূল (সা.) রমজান মাসের শেষের দশ দিন ইতিকাফ পালন করেছেন।
ইতিকাফের ফজিলত কি
একটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি রমজান মাসের ১ দিন ইতিকাফ পালন করবে মহান আল্লাহ তা’আলা তার এবং জাহান্নামের মধ্যেও তিন খন্দক দুরুত্বের ব্যবধান রাখবেন। এ খন্দক দূরত্ব হবে আসমান এবং জমিনের মধ্যকার দূরত্বেরও অধিক।
২০ তম রমজানের সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে থেকে ৩০ অথবা ২৯ তম রোজা অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত পুরুষ মানুষদের এলাকার মসজিদে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলা হয়। এ সময় নারীরা তাদের নিজ নিজ ঘরে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করতে পারবে। তবে এই সময়ের অর্থাৎ এতেকাফের উদ্দেশ্য অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা ইবাদত বন্ধগী করা হতে হবে। রমজানের শেষ দিন এই ইবাদতকে বলা হয় সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া।
কোন একটি মহল্লার মানুষজনের পক্ষ থেকে অবশ্যই একজনকে মসজিদে এই ইবাদতের উদ্দেশ্যে থাকতে হবে। যদি এলাকা বা মহল্লাবাসীদের মধ্যে কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে দায়িত্বের অবহেলার কারণে পুরো মহল্লাবাসী গুনাহগার হবেন। তাই নির্ধারিত সময়ের আগে অবশ্যই খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন কেউ এই দায়িত্বের নেয় কিনা। যদি এমন কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে নিজেরা আলাপ-আলোচনা এবং চিন্তাভাবনা করে অবশ্যই একজনকে এভাবে বসতে হবে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য বিষয় যে টাকা কিংবা অন্য কোন কিছুর বিনিময়ে অথবা পারিশ্রমিকে কিংবা বিনা পারিশ্রমিকে কাউকে এতেকাফে বসানো জায়েজ নেই। যে ব্যক্তি এই ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিজেকে নিয়োজিত করে শেষ সার্বক্ষণিক নামাজের সওয়াব পেয়ে থাকেন। আর মসজিদ যেহেতু মহান আল্লাহতালার ঘর তাই সেই ব্যক্তিও আল্লাহর ঘরের মেহমান হয়ে থাকেন। এতেকাফের ফজিলত গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শবে কদর।
কোন ব্যক্তি যদি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন এই ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করেন তাহলে তার শবে কদর পাওয়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। এর কারণ হচ্ছে ২৭ শে রমজান শবে কদর না হয় তবুও এই ১০ দিনের যে কোন একদিন শবে কদরের ইবাদত এতেকাফের মাধ্যমেও আদায় হয়ে যায় এবং অনেক বেশি ফজিলত লাভ করা যায়।
আর এই সময় যদি ব্যক্তি নিজেকে এমন ভাবে নিয়োজিত করে যে দুনিয়ার কোন কিছুর প্রতি তার খেয়াল নেই শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার হুকুমের প্রতি তার খেয়াল রয়েছে তাহলে প্রতিটি মুহূর্তের জন্যই তার সব লেখা হয়। এমনকি এই সময়ের মধ্যকার তার ঘুম খাওয়া-দাওয়া এবং অন্যান্য বিষয়াদিও ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয়।
নারীদের জন্য ইতিকাফের ফজিলত
এটা শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য নয় বরং নারীরাও এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে তাদের জন্য নির্দেশনা হচ্ছে নিজ গৃহে অবস্থান করা। থাকার ঘরে ছাড়া যদি আলাদা নামাজের ঘর কিংবা স্থান থেকে থাকে তাহলে সেখানে এতেকাফে বসতে পারবেন। তবে এর পূর্বে অবশ্যই বিবাহিত হলে স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া নারীদের জন্য এতেকাফে বসা জায়েজ নয়। আর এক্ষেত্রে পুরুষদের প্রতি নির্দেশনা হল তাদের স্ত্রীকে বিনা কারণে এতেকাফ থেকে বঞ্চিত না করা।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মেয়েদের ক্ষেত্রে হায়েজ ও নেফাস থেকে মুক্ত থাকা। যদি এতেকাফ চলাকালীন সময় হায়েজ নেফাস শুরু হয়ে যায় তাহলে সে অবস্থাতেই তিনি এটি ছেড়ে দেবেন। এরকম পরিস্থিতিতে তিনি যেই দিনে ইতিকাফ ছাড়বেন শুধু সেই দিনেরই এতেকাফ কাজা আদায় করা ওয়াজিব। কাজা আদায় করার নিয়ম হচ্ছে আজ থেকে পবিত্র হওয়ার পর যে কোন তিন রোজা পালন করবেন এবং এতেকাফ করবেন।
চলতি বছরের রমজান মাস প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি চলে এসেছে। তাই ইতিকাফের ফজিলত, গুরুত্ব ও নিয়ম জানার পাশাপাশি আমাদেরকে এখন এই নিয়ত করতে হবে। জরুরী কোন অপ্রয়োজন না থাকলে আমরা নিজ নিজ মহল্লা থেকে এই এবাদত পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারি।