আমাদের জীবনে মিডিয়ার প্রভাব আলোচনা করো

মানব কিংবা সামাজিক জীবনে বিভিন্ন নিয়ামক নানা ধরনের প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যার মধ্য আমাদের জীবনে মিডিয়ার প্রভাব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর প্রভাব নানাভাবে লক্ষ্য করা যায়।

সামাজিক জীবনে আমরা নানা কিছু ব্যবহার করে থাকি। এমন একটা সময় ছিল যখন ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ছিল না। যখন মানুষের সংস্কৃতি আচার-আচরণ ইত্যাদি একরকম ছিল। এমনকি এক এলাকার খুব সহজে অন্য এলাকার সংস্কৃত সম্পর্কে খুব একটা জানতে পারত না। পত্র-পত্রিকা ভ্রমণ এবং লোকমুখে শোনা ছাড়া সেগুলো দেখার সৌভাগ্য অনেকেরই হয়নি।

বর্তমান ইন্টারনেট তথ্যপ্রযুক্তি যুগ। এর মাধ্যমে আমরা সহজেই পৃথিবীর যেকোনো দেশের যেকোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি এবং দেখতে পারি। আর এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জানা যায় শুধুমাত্র ঘরে বসেই। যদিও অনেক আগে থেকেই টেলিভিশনের পর্দায় নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সবকিছু জানতে পারি তবে ইন্টারনেটের কল্যাণের সেটি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকে আমি আমাদের জীবনে মিডিয়ার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব। চলুন জেনে নেই কিভাবে এই সকল বিষয় দিয়ে আমাদের মানব জীবনে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

মানব জীবনে মিডিয়ার ইতিবাচক প্রভাব

১। মিডিয়ার মাধ্যমে আমার নানা ধরনের সংবাদ তথ্য ইত্যাদি জানতে পারি। যেটির সমাজে এবং ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধি করে। যেমন টেলিভিশন কিংবা মোবাইলের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আশেপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে প্রয়োজনে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।

২। মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম এখন মিডিয়া। ঘরে বসে ইন্টারনেট কিংবা টেলিভিশনের মাধ্যমে সিনেমা দেখা গান ভিডিও ইত্যাদি দেখার মাধ্যমে অবসর সময় কাটে। যার কারণে মানুষের সামাজিক আচরণে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। যখন মোবাইল ইন্টারনেট ছিল না তখন মানুষ যে সময়গুলি বাইরে খেলাধুলা কিংবা অন্য কোন সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাটাতো এখন সেগুলো মোবাইল স্ক্রিনে কাটায়।

৩। এর ফলে মানুষের সৃজনশীলতা এবং জ্ঞানের পরিধিও বাড়তে থাকে। আগে যে বিষয়গুলো বই কিংবা পত্রিকার সাড়া জানা যেত না সেগুলো এখন খুব সহজেই জানা যায় ইন্টারনেটের কল্যাণে। তাইতো মানুষ এখন সবকিছু সম্পর্কে সচেতন হতে পারছে।

৪। সোশ্যাল কালচারের পাশাপাশি লেখাপড়ার পরিবেশ ও আমাদের জীবনের মূল একটি অংশ। বর্তমানে মিডিয়ার ব্যবহারের পুরানো ধরনের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল লেখাপড়ায় অংশগ্রহণ করছে। যার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের মেধা লাগানোর কাজে লাগানোর জন্য সঠিক মাধ্যম খুঁজে পাচ্ছে।

৫। যেকোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি, প্রজ্ঞাপন, ঘোষণা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে মিডিয়া। যার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির খবর খুব সহজেই মানুষকে আগেই পৌঁছে দেওয়া যায় এবং সবাই সে সম্পর্কে অনুযায়ী প্রস্তুতি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যেটি আমাদের জীবনের ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। কারণ এ সকল খবরের সঠিক পূর্বাভাস না পাওয়ার কারণে অনেকের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। মিডিয়ার এই অসাধারণ আবিষ্কারের ফলে বেঁচে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ।

আমাদের জীবনে মিডিয়ার প্রভাব কি কি

যদিও উপরে আমি বেশ কয়েকটি প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করেছি তবে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব। আশেপাশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কে কি করছে কিভাবে নিজের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে সম্পর্কে আমরা মোবাইল ফেসবুক ওপেন করলে দেখতে পারি। কারো সফলতা দেখে নিজের মনের মধ্যেও স্পৃহা জাগে সফল হওয়ার। তাইতো প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে এই মিডিয়ার কল্যাণে। আর এটা শুধুমাত্র আশেপাশের সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং সারা পৃথিবী জুড়েই বিস্তৃত লাভ করতে পেরেছে।

বর্তমানে যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিষয়েও সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। যার মধ্যে মানুষের নৈতিকতায়ও বেশ কিছু প্রভাব পড়ছে। একজন মানুষ যেমন খুব সহজেই তার ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারছে ঠিক তেমনি ভাবেই আরেকজনের দাঁড়াও প্রভাবিত হচ্ছে।

আশেপাশে যে কোন অসঙ্গতি ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজে তুলে দেওয়া যায়। তারপর নানা আলোচনা এবং সমালোচনার মাধ্যমে সেটি সম্পর্কে ভালো সিদ্ধান্ত কিংবা পদক্ষেপও গ্রহণ করা যায়। এ ধরনের ঘটনা অনেক ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ বন্যা পরিস্থিতির কোথায় বলা যায়। মানুষ যখন দেখতে পায় তার পাশের কোন এলাকার মানুষ মনের পানিতে কষ্ট করছে তখন যথাসম্ভব ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করে। এতে করে সামাজিক ভ্রাতৃত এবং বন্ধন আরো বেশি শক্তিশালী হচ্ছে।

একইভাবে কোন এলাকার একটি দুর্ঘটনা সম্পর্কে মানুষ জেনেও যথাসম্ভব চেষ্টা করে এগিয়ে যাওয়ার।

ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। আমরা প্রায়ই ইন্টারনেট বা মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের ভুয়া তথ্য অপ্রচলিত হতে দেখে। যার মাঝে মাঝে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে থাকে। এটি মিডিয়ার একটি নেতিবাচকদেরকে বলতে পারেন। আবার শিশু থেকে শুরু করে তরুণ তরুণী ও বিভিন্ন বয়সের লোকেরা মিডলর প্রতি আসক্ত হয়ে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের নানা ধরনের ক্ষতি করছে।

শিশু কিশোররা লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তবে এই ধরনের সমস্যাগুলোর মোকাবেলা সম্ভব সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে। আবার কিছু অসাধু প্রকৃতির লোকেরা নানা ধরনের নেতিবাচক কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে তরুণ সমাজকে বিপথগামী করার চেষ্টা করছে।

এর দ্বারা সংস্কৃতিতে পরিবর্তন সহ সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও হচ্ছে। অনেক সময় মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। ইন্টারনেট মোবাইল সহজ অবশ্যই মানুষের বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি অতিরিক্ত গেম এবং বিনোদনমূলক কন্টেন্টের প্রতি আসক্ত হয়ে অনেকেই কাজের প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছে।

মোটকথা আমাদের জীবনে মিডিয়ার প্রভাব সকল সেক্টরেই বিদ্যমান। সামাজিক সংস্কৃতিক রাজনীতি সকল ক্ষেত্রেই আমরা মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে থাকি। তবে এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের ও নিজের দেশকে উন্নতস্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

Leave a Comment