প্রত্যেক যুবকেরই একটি স্বপ্ন থাকে মোটরসাইকেল কেনার। কিন্তু অনেক সময় ব্র্যান্ড নিউ একটি বাইক কিনতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় সেটির ব্যবস্থা আর হয়ে ওঠে না। তাইতো কিস্তিতে মোটরসাইকেল কেনার পন্থা অবলম্বন করে থাকে অনেকেই। এর মাধ্যমে এককালীন কিছু অর্থ প্রদান করে বাকি টাকা প্রতি মাসে মাসে প্রদান করে পরিশোধ করা যায়।
সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দ, আপনি যদি ভেবে থাকেন ব্র্যান্ড নিউ একটি মোটরসাইকেল কিস্তিতে কিনবেন তাহলে আজকের লেখাটি আপনার জন্য।
বাংলাদেশে কিস্তিতে মোটরসাইকেল কেনার আগে যা যা জানা প্রয়োজন
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক মোটরসাইকেল কোম্পানি ইনস্টলমেন্টের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি করছে। আপনি ইচ্ছা করলেই দেশীয় বাজার থেকে টিভিএস, বাজাজ, হিরো হোন্ডা ইত্যাদি ব্র্যান্ডের বাইক গুলি কিনতে পারবেন। কিন্তু অফিসিয়াল শোরুম থেকে এ সকল বাইক ইনস্টলমেন্টে নেওয়ার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে এবং তাদের দিকনির্দেশনা মানতে হবে। তো চলুন জেনে নেই ২০২৫ সালে আপনি কিভাবে কিস্তিতে একটি বাইক কিনতে পারেন।
তার আগে আপনার আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা দরকার। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিস্তিতে বাইক কিনলে আপনি কি কি অসুবিধা এবং সুবিধা পাবেন। নিম্নে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সুবিধা: প্রথমেই আসি এর সুবিধা সম্পর্কে। এর অন্যতম সুবিধা হল আপনাকে এককালীন কোন বড় অর্থ প্রদান করতে হবে না। শুধুমাত্র ডাউনপেমেন্ট দিয়ে পরবর্তী টাকা প্রতি মাসে আপনি আস্তে আস্তে শোধ করতে পারবেন।
অসুবিধা: এভাবে বাইক কেনার সবচাইতে বড় অসুবিধা হলো বর্তমান বাজার মূল্যের চাইতে আপনাকে বেশি অর্থ প্রদান করতে হবে। যেহেতু একটি বাইক কিনতে এক লক্ষ কিংবা তার অতিক টাকা খরচ হয়ে থাকে এবং আপনি সেটি ১ বছর কিংবা আরো বেশি সময় পরিশোধ করবেন তাই ইন্টারেস্ট বাবদ বাড়তে অর্থ গুনতে হবে।
আরও একটি বড় অসুবিধা হচ্ছে যদি কোন কারণে বাইকটি চুরি হয়ে যায় তার ক্ষতিপূরণো আপনাকে দিতে হবে। এমনকি আপনি যদি তাদের নিয়ম নির্দেশনা না মানে কিংবা যথাসময়ে কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে
যেহেতু তারা পুরো পেমেন্ট না নিয়েই আপনাকে বাইকটি প্রদান করবে তাই কিছু কাগজপত্র অবশ্যই জমা প্রদান করতে হবে। তবে এই কাগজপত্রের তালিকা এবং নিয়মাবলী কোম্পানী বেধে ভিন্ন হতে পারে। যেগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো
১। গ্রাহকের ভোটার আইডি কার্ড কিংবা পাসপোর্টের কপি
২। বাসার গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল কিংবা ঠিকানা প্রমাণের দলিল
৩। ব্যাংক স্টেটমেন্ট
৪। চাকরিজীবী হলে পে স্লিপ অথবা আইডি কার্ড
৫। ব্যবসায়ী হলে ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স / টিন সার্টিফিকেট
এ সকল কাগজপত্র ছাড়াও কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে আরো কিছু ডকুমেন্ট সাবমিট ও অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে হতে পারে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্যারান্টার প্রদান। গ্যারেন্টার হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি আপনার অবর্তমানে টাকা পরিষদের দায়িত্ব নেবেন। সাধারণত গ্যারেন্টারের ভোটার আইডি কার্ড ছবি নেওয়া হয়ে থাকে। সেই সাথে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরতা প্রদান করতে হয়।
বাংলাদেশে কোথায় থেকে কিস্তিতে বাইক কিনতে পারবেন
আমার পছন্দের বাইকের শোরুমে সরাসরি গিয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে নিবেন। এতে করে কোন কোন মডেল আপনি কিস্তিতে নিতে পারবেন কত টাকা খরচ হবে এবং কি কি লাগবে এ ব্যাপারে যাবতীয় দিক নির্দেশনা তিনি দিয়ে নিবেন।
তবে বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে জনপ্রিয় কিছু বাইকের ব্র্যান্ড হলো বাজাজ, হিরো হোন্ডা, ইয়ামাহা, টিভিএস, রানার ইত্যাদি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে এসেছে বিশ্ব বিখ্যাত রয়েল এনফিল্ড বাইক। যদিও এই বাইকটি কিস্তিতে প্রদানের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন ঘোষণা হয়নি। গ্রাহকরা অগ্রিম পেমেন্ট করেই বাইকটি অর্ডার করছেন।
৩৬ মাসের কিস্তিতে বাইক কেনার নিয়ম
অনেক গ্রাহকই আছেন যারা কিনা ৩৬ মাস অর্থাৎ তিন বছর মেয়াদের কিস্তিতে বাইক ক্রয় করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন। ৩৬ মাস একটি লম্বা সময় তাই এর জন্য সাধারণত ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সিটি ব্যাংক এই সুবিধা প্রদান করে থাকে।
এছাড়াও আপনি ৬ মাস ১২ মাস কিংবা ১৮ মাসে পর্যন্ত কিস্তিতে বাইক ক্রয় করতে পারবেন।
তবে আপনি যে শোরুম হতে এবং যে নিয়মের কিস্তিতে মোটরসাইকেল কেনার চিন্তা করেন না থাকেন না কেন আগে বাইকের মডেল নির্বাচন করুন। বাইকের মডেল যখন আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন তখন নির্ধারিত কোম্পানির শোরুমে গিয়ে সরাসরি ম্যানেজারের সাথে কথা বলে সবচাইতে ভালো। আবার আপনি শো রুম থেকে না নিয়ে সরাসরি কোন এনজিও কিংবা ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিয়ে সেটা দিয়েও বাইক ক্রয় করতে পারেন। এতে করে বাইক আপনি নগদ থেকে ক্রয় করবেন কিন্তু আপনি যে ব্যাংকিং বা এনজিও থেকে লোন নিয়েছিলেন সেখানে আপনাকে প্রতি মাসে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
আবার বর্তমানে এনজিও গুলো হতে গাড়ি কেনার জন্য আলাদা লোনের সুবিধা রয়েছে। আপনি চাইলে কিস্তিতে বাইক ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই পন্থা অবলম্বন করতে পারেন।