আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন তা না থাকে। ছোটবেলায় হাওয়াই বিমানে করে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়ে আমাদের জানার আগ্রহ করে পাইলট হওয়ার যোগ্যতা কি বা কম খরচে কিভাবে পাইলট হওয়া যায়। ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনার জন্য অনেক পাবলিক, প্রাইভেট, সরকারি ইউনিভার্সিটি রয়েছে।
কিন্তু পাইলট হওয়ার জন্য কোথায় ভর্তি হতে হবে কিংবা কোথা থেকে কোর্স করতে হবে সে ব্যাপারে তেমন কোন ধারনা আমাদের নেই। একটি ফ্লাইট যখন এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়ন করে তখন এর মূল দায়িত্ব থাকে একজন ক্যাপ্টেন বা যাকে আমরা বলে থাকি চিফ পাইলট। ক্যাপ্টেনকে সাহায্য করার জন্য আবার থাকে কো পাইলট। এটি কত উচ্চতা দিয়ে উঠবে কতদূর যাবে বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়া ও পরিস্থিতির সামাল দেওয়া ইত্যাদি কাজ সামলে যাত্রীদেরকে নিরাপদে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে পাইলটের প্রধান দায়িত্ব। অন্যান্য সাধারণ যানবাহনের মতো শুধুমাত্র একটি কোর্স করেই উড়োজাহাজ চালানো যায় না। এর জন্য প্রয়োজন বেশ ভালো সময় ধরে পড়াশোনা যথাযথ প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।
পাইলট হওয়ার জন্য লাইসেন্স
এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি আগেই বলে রাখছি। কম খরচে পাইলট হওয়ার উপায় জানার আগে অবশ্যই এর লাইসেন্সের ধরণ সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা উচিত। বেসামরিক বিমান চালানোর জন্য আলাদাভাবে একটি লাইসেন্স প্রদান করা হয় যেটি পাওয়ার জন্য আপনাকে কোর্স করতে হবে।
Student Pilot License (SPL)
এই লাইসেন্সের আবার কয়েকটি ক্যাটাগরি রয়েছে। যার প্রথম থেকে বলা হয় স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্স বা এসপিএল (SPL)। এটিকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের লার্নার লাইসেন্সের সাথে তুলনা করতে পারেন। আবার বৈমানিক হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ফ্লাইং ক্লাবের মেম্বার হতে। তারপর সেই ক্লাবের অনুমতি নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে হেলথ টেস্ট করাতে হবে। আপনি যদি শারীরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তবেই এসপিএল ক্যাটাগরির লাইসেন্স বা সার্টিফিকেট পাবেন।
এসপিএল সার্টিফিকেট পাওয়ার পর আপনার প্রশিক্ষণ হবে একজন ইনস্ট্রাক্টরের অধীনে।
Private Pilot License (PPL)
এরপরে আসি PPL বা প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স সম্পর্কে। এই লাইসেন্সটি পাওয়ার জন্য আপনাকে ন্যূনতম ৪০ ঘন্টা ফ্লাইং কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। সেই সাথে অভিজ্ঞতায় যুক্ত করতে হবে কমপক্ষে ১৫০ নটিক্যাল মাইল বা এর অধিক দূরত্বের একটি কান্ট্রি ফ্লাইট ট্রিপ। যারা এই ধরনের লাইসেন্স নিয়ে থাকেন তারা বিভিন্ন ওজন অর্থাৎ ওজন নিয়ে বিমান চালাতে পারবেন কিন্তু যাত্রীবাহী বিমান চালাতে পারবেন না।
Commercial Pilot LIcense (PPL)
যাত্রীবাহী বিমান চালানোর জন্য প্রয়োজন সিপিএল বা কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। এটি প্রদান করার আগে ক্যান্ডিডেটের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। একা একা ১০০ ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে। আর কান্ট্রি ফ্লাইটের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে কমপক্ষে ৩০০ নটিক্যাল মাইল।
Transport Pilot License (TPL)
এরপরে আসি টিপিএল যেটিকে ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স বলা হয়। এটি সর্বোচ্চ স্তরের লাইসেন্স। যারা বিমানের ক্যাপ্টেন হতে পারবেন। এই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য শারীরিকভাবে ফিটনেস থাকার পাশাপাশি একা একা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে কমপক্ষে ২৫০ ঘন্টা।
কম খরচে পাইলট হওয়ার উপায় কি
আমরা ইতিমধ্যে লাইসেন্সের ধরন এবং ক্যাটাগলি সম্পর্কে কিছুটা জানালা করতে পেরেছি। এবার চলুন কম খরচে কিভাবে এই কোর্স সম্পন্ন করতে পারেন। যেহেতু এই জবটি অনেক কঠিন এবং দায়িত্বশীল একটি জব তাই ভেবেচিন্তে এই পেশায় আসা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমী এই ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এর জন্য গ্রাউন্ড অর্থাৎ তাত্ত্বিক কোর্সের খরচ পড়বে ৬০ হাজার টাকা। প্রতি ঘন্টা ফ্লাইটের জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে ১২,০০০ টাকা। একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ১৫০ ঘন্টার ফ্লাইং সম্পন্ন করতে হয়। তাছাড়া ভর্তি যোগ্যতা হিসেবে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে। যারা ইতিমধ্যে স্নাতক পড়ছেন তাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা সর্বোচ্চ হতে পারবে ২৭ বছর।
এই কোর্সটির জন্য এবং আরো বিস্তারিত জানার জন্য আপনি নিম্নোক্ত ঠিকানা যোগাযোগ করতে পারেন
বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি এন্ড জেনারেল এভিয়েশন লিমিটেড
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
আরো একটি ফ্লাইং একাডেমির ঠিকানা
galaxy Flying Academi
House-20, Lake Drive Road, Uttara Model Town, Sector 7, Dhaka
বিনা খরচে পাইলট হওয়ার সুযোগ
বেশ কিছুদিন আগে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের খরচ ছাড়াই পাইলট হওয়ার সুযোগ প্রদান করেছে। এজন্য একজন প্রার্থীকে এসএসসি ও এইচএসসি বিভাগের অন্যতম জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পদার্থ, সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত, ইংরেজি বিষয়ে জিপিএ-৫ থাকতে হবে। চলতি বছরে যারা ইতিমধ্যে অনার্স এ ভর্তি হয়েছেন অর্থাৎ লেখাপড়া করেছেন তারাও আবেদন করতে পারবেন।
আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কে অবশ্যই শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে সর্বনিম্ন ১৭ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর। মেয়েদের জন্য উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং ছেলেদের জন্য নূন্যতম উচ্চতা পাসপোর্ট ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। ভর্তি করানোর আগে ক্যাডেট পাইলটদের যথাযথ সাইকোমেট্রিক, মেডিকেল এবং বিভিন্ন ধরনের টেস্ট নেওয়া হবে। কম খরচে পাইলট হওয়ার এটি সবচাইতে বেস্ট একটি উপায়।
অন্যান্য মাধ্যমে কিভাবে একজন বৈমানিক হতে পারেন
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে ফ্লাইং কোর্সে প্রতি বছরই জনবল নিয়োগ প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে আপনি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন এবং এয়ার ফোর্সে একজন পাইলট হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার করতে পারবেন।
এই সংক্রান্ত জব সার্কুলার যখন দেয়া হয় তখন আমাদের ওয়েবসাইটে আমরা প্রকাশ করব। সেখান থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন। কম খরচে পাইলট হওয়ার উপায় হিসেবে বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স এবং ইউএস বাংলা সবচাইতে বেশি সুবিধা প্রদান করছে। আর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান কিংবা দেশের বাইরে থেকে এই ধরনের কোর্স সম্পন্ন করতে গেলে মোটামুটি বাজেট রাখতে হবে ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা।