অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষ সাধারণত বিজনেসকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তারপরেও বাংলাদেশের কোন চাকরির বেতন বেশি তা জেনে আপনি কিছুটা অবাক হতে পারেন। কারণ এমন কিছু জব বা সার্ভিস রয়েছে যাতে প্রতিমাসের স্যালারি মোটামুটি একটি ভালো বিজনেস থেকে ইনকামের সমান। তাই চলুন সঠিক ক্যারিয়ার বাছাই করতে জেনে নেই খুঁটিনাটি বিষয়।
আমি যেই জব গুলোর কথা বলবো সেগুলোর সবই বেসরকারি জব। কারণ সরকারি চাকরিতে তুলনামূলকভাবে বেতন কিছুটা কম হয়ে থাকে। তবে পেনশন, চাকুরীর নিশ্চয়তা, ছুটি, বিভিন্ন ভাতা ইত্যাদি দিক থেকে গভার্মেন্ট সার্ভিসও অনেক বেশি এগিয়ে। এ নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করব।
কোন চাকরির বেতন সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে
বিদেশের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন প্রদান করে থাকে। শুরুতেই বলে রাখি উচ্চ বেতনে চাকরি করতে গেলে আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণে অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থাকা জরুরী।
গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন পদে চাকরি
আপনি নিশ্চয়ই গার্মেন্টসের জিএম, পিএম ইত্যাদি পদের কথা শুনেছেন। এছাড়াও রয়েছেন মার্চেন্ডাইজিং, মার্কেটিং, এডমিন ইত্যাদি ডিপার্টমেন্ট। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গার্মেন্টস সেক্টরে বেশ ভালো বেতন প্রদান করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলতে গেলে একটি ভালো এবং বড় মানের ফ্যাক্টরের জিএম এর বেতন ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এমনকি মার্কেটিং এ যারা জব করে অথবা কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের তো ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রতি মাসে বেতন হয়। তবে শুনতে অনেকটা ভালো লাগলেও এ সকল পদে যেতে অনেক কাটখড় পোড়াতে হয়। পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, প্রচুর পরিশ্রম, ধৈর্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি থাকলে কেবলমাত্র এ সকল পদে চাকরি করা যায়। আপনার ধারনার জন্য জেনে রাখা ভালো যে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির প্রোডাকশন জিএম হতে মোটামুটি ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়।
সফটওয়্যার এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার
আপনি যদি জানতে চান অল্প সময়ে কোন চাকরির বেতন বেশি তাহলে তার উত্তরে বলব আইটি সেক্টর। একজন দক্ষ এবং ট্যালেন্ট সফটওয়্যার বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মাত্র কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন পেতে পারে। এর সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে একই সাথে এক বা একাধিক জবও করা যায়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে রিমোট জব অথবা অনলাইনে জবের সুবিধা। বাংলাদেশের অনেক দক্ষ আইটি এক্সপার্ট আছে যারা কিনা ঘরে বসে পৃথিবীর বিভিন্ন কোম্পানিতে জব করছে এবং মাসে লক্ষ-লক্ষ টাকা বেতন পাচ্ছে। মোটামুটি ৫ থেকে ৬ বছরের অভিজ্ঞতার সম্পন্ন একজন সফটওয়্যার বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মাসে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ওর বেতন তুলতে পারেন।
চিকিৎসা পেশা ডাক্তার
সবদিক থেকে বিবেচনা করলে এই পেশাটি তালিকার সবার উপরে রাখা উচিত। কারণ চিকিৎসা বা ডাক্তার শুধুমাত্র একটি পেশা নয় বরং মানুষের সেবা প্রদান করার একটি সুযোগ। একজন বেসরকারি ডাক্তার বড় বড় হসপিটালে উচ্চ বেতনে চাকরির পাশাপাশিও বাইরে রোগী দেখেও প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারেন। সরকারি বা বিসিএস ক্যাডার ডাক্তার স্যালারির পাশাপাশি নানা ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ সার্জনরা দেশ বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে লক্ষ লক্ষ টাকা বেতনে চাকরি করার সুযোগ পান।
পাইলট ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার
আমি এই দুই পেশাকে একত্রে উপস্থাপন করছি। আপনি নিশ্চয়ই জানেন একজন পাইলটের কাজ হচ্ছে বিমান চালনা করা এবং একজন মেরিন ইন্জিনিয়ারিং এর কাজ হচ্ছে জাহাজ পরিচালনা করা। বর্তমানে এই পেশার চাহিদা আরো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্স এবং জাহাজে লক্ষ লক্ষ টাকা বেতনের পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা।
ব্যাংক এবং এনজিও প্রতিষ্ঠানে চাকরি
বেসরকারি চাকরি গুলোর মধ্যে ব্যাংকের চাকরি বেতন বেশ ভালো। পাশাপাশি বাংলাদেশের অনেক এনজিও পজিশন যেমন ব্রাক, আশা, এসএসএস, গ্রামীণ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানেও বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশের প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতে সাধারণত এক্সিকিউটিভ, জুনিয়র অফিসার পদেই ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া যায়। পরবর্তীতে প্রমোশনের পাশাপাশি এই বেতনও বাড়তে থাকে।
মার্কেটিং এর ক্যারিয়ার
কোন চাকরির বেতন বেশি আশা করি সে সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা ধারণা হয়েছে। অনেকেই হয়তোবা মার্কেটিং এর ক্যারিয়ারের কথা শুনলেই শুধুমাত্র পরিশ্রমের কথাই মাথায় আসে। তবে আপনি কি জানেন অন্যান্য ডেস্ক জবের তুলনায় মার্কেটিং এর বেতন বেশ ভালো। ভালো ভালো কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ের একজন ফ্রেশার যোগদান করলে শুরুতেই ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারে। ভবিষ্যতে এরিয়া ম্যানেজার, জোনাল ম্যানেজার ইত্যাদি পদে প্রমোশন পেলে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া যায়।
আইনজীবী বা কর্পোরেট ল’ ইয়ার
আপনার নিশ্চয়ই মনে করেছেন আইনজীবী শুধুমাত্র কোর্টে গিয়ে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের মামলা পরিচালনা করা। কিন্তু এর বাইরেও আইনজীবী বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা বা কর্পোরেট ল ইয়ার হিসেবে চাকরি করেন। এর বিনিময়ে মাসে মাসে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে বেতন দেওয়া হয়। ভালো প্রতিষ্ঠানে একজন কর্পোরেটরের বেতন আনুমানিক প্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
কোন চাকরির বেতন সবচেয়ে বেশি সে সম্পর্কে আমি কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে উপরের তো খাত গুলো ছাড়াও আরো অনেক সেক্টর আছে যেখানে ও ভালো সেলারি পাওয়া যায়। যার মধ্যে রয়েছে ডাটা সাইন্টিস্ট, বিজনেস এনালিস্ট, এইচআর ডিপার্টমেন্ট ইত্যাদি। তবে শুধুমাত্র বেতন নয় বরং আপনার কোন কাজটি করতে ভালো লাগে সেটা বিবেচনা করে ক্যারিয়ারে প্রবেশ করা প্রয়োজন। এতে করে আপনি ক্যারিয়ারে অনেক দ্রুত উন্নতি করতে পারবেন।