সারা বিশ্বজুড়ে শত শত কোটি মানুষ বসবাস করে। প্রতিটি দেশ এবং অঞ্চলের আবহাওয়া, জীবনযাপনের যাত্রাও ভিন্ন ভিন্ন রকম। এমনকি মনোভাব প্রকাশের ভাষার মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক তফাৎ। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই কিছুটা ধারণা রয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন পৃথিবীর কোন দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশিদিন বাঁচে?
বিশ্বের এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে যে এলাকার মানুষজন অন্যান্য এলাকার মানুষের চাইতে বেশি দিন ধরে বেঁচে থাকে। এমনকি শারীরিক সক্ষমতা সুস্থতার হারও অনেক বেশি। এ নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সোসাইটির সহায়তায় মার্কিন একজন লেখক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। সেই আঙ্গিকে আমি আজকে আপনাদেরকে জানাবো পৃথিবীর কোন দেশের মানুষ বেশি দিন বাঁচে।
তালিকার প্রথমেই রয়েছে গ্রিস
গ্রিসে একটি ছোট দ্বীপ রয়েছে যেটির নাম হচ্ছে ইকারিয়া। এর আয়তন মাত্র ২৫৪ বর্গ কিলোমিটার। মোটামুটি বড় আকৃতির একটি জেলার মতন। সবচাইতে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ইকারিয়া দ্বীপের মানুষজনের গড় আয়ু হচ্ছে প্রায় ১০০ বছর। আমাদের দেশে যেখানে ৪০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে অনেক মানুষের জীবনকাল সেখানে গ্রিসে ৪৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুহার অনেক কম।
আপনার জন্য আরো অবাক হবেন যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে যে ভুলে যাওয়ার অভ্যাস হয় বা হয় সেটিও এ দেবের মানুষজনের মধ্যে নেই। আশা করি এখন আপনি অনেকটাই ধারনা লাভ করতে পেরেছেন যে বিশ্বের কোন দেশের মানুষ সবচাইতে বেশি দিন বাঁচে।
এখানকার মানুষের বেশি দিন বাঁচার মূল মন্ত্র হচ্ছে তাদের ঐতিহ্যবাহী ডায়েট। তাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন যাপনের কারণেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি, হ্রদরোগ, স্থূলতার সমস্যা ইত্যাদি থেকে সুস্থ থাকতে পারেন। সেইসঙ্গে এই দ্বীপের মানুষজন সবসময় পরিণত পরিমাণে মাংস এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন।
জাপানের মানুষ কতদিন বাঁচে
আপনি জাপান সম্পর্কে অবশ্যই এর আগে শুনেছেন। বলা হয়ে থাকে এরা সুখী দেশ। এমনকি বুদ্ধিমত্তার হারও জাপানে বেশি। এদেশের ছোট একটি দ্বীপ রয়েছে যেটির নাম হচ্ছে ওকিনাওয়া। এখানে নারীদের গড় আয়ু সবচাইতে বেশি। এরাও খাবারের দিক থেকে খুবই উন্নত। নিজেদের উৎপাদন করা আলু, হলুদ ইত্যাদি খাবার এরা খেয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনু এখানকার মানুষজন গড়ে ৮৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
বিশ্বের কোন দেশের মানুষ সবচাইতে বেশিদিন বাঁচে – আরো কিছু তথ্য
১। ইতালির একটি অঞ্চলের নাম সার্দিনিয়া। এখানকার পুরুষরা সাধারণত ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তবে এদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেও নিরামিষ অর্থাৎ শাকসবজির পরিমাণই বেশি। এরা খুবই কম পরিমাণে আমিষ খেযে থাকে এবং ৬৫ বছর পর্যন্ত খুবই শারীরিকভাবে সক্ষম থাকে।
২। কোন দেশের মানুষ বেশি দিন বাঁচে সেটি প্রশ্ন করলে অনেকেরই সবার আগে জানতে ইচ্ছে করে যুক্তরাষ্ট্রের কথা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঞ্চল লোমালিন্ডা শহরের মানুষ অন্যান্য এলাকার চাইতে গড়ে ১০ বছর বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকেন। এদের স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম মূলত এই গড় আয়ু বেশি গড় আয়ুর কারণ।
৩। আপনারা নিশ্চয়ই মোনাকো দেশের নাম শুনেছেন। ছোট এদেশের জনসংখ্যা মাত্র ৩৮ হাজার ৯৯৫ জন। কিন্তু জনসংখ্যা কম হলেও এদেশের মানুষ অনেকদিন বাঁচে। সাধারণ গড় আয়ু হচ্ছে প্রায় ৮৯ বছর।
৪। আরো একটি ছোট দেশ সিঙ্গাপুরে মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ৮৫ বছর ২ মাস। বলা হয়ে থাকে এদেশের মানুষের বেশি দিন বেঁচে থাকার কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এরা আগেভাগেই যেকোনো ধরনের রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে এই দেশের মানুষেরই গড় আইন সবচাইতে বেশি।
৫। ছোট আরো একটি রাষ্ট্র সান ম্যারিনো নাম শহরের জনসংখ্যা ৩৩ হাজার ৫৫৭ জন। তবে এদেশীয় জনসংখ্যা কম হলেও গড় আয়ুষ্কাল প্রায় ৮৩ বছর।
মূলত কোন দেশের মানুষ বেশি বাঁচে সেটি নির্ভর করে সেই দেশের মানুষের জীবন যাপনের উপর। আর এই জীবন যাপনের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস, চিকিৎসা সেবা, শারীরিক ব্যায়াম ইত্যাদি। যে দেশের মানুষ যত বেশি নিয়ম মেনে চলে তাদের বেশি দিন সুস্থ থাকার আরো তত বেশি। আমাদের দেশে সাধারণত ৬০ বছর বয়সের মধ্যে একজন মানুষের শারীরিক সক্ষমতা কমে যায়। আর গড় আয়ু দেশ কম। কোন দেশের মানুষ বেশি দিন বাঁচে সেটি জানার পাশাপাশি অন্যান্য মজার মজার তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।