২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের জন্য এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ধার্যকৃত নতুন মূল্যে ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমেছে মাত্র ১ টাকা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা পর্যায়ে নতুন মূল্য ১৪৫৫ টাকা। গত ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার বিইআরসি ভবনে এই ঘোষণাটি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলারিটি কমিশনের চেয়ারম্যান নতুন এই মূল্য গুলি ঘোষণা করেছেন। এর আগ অক্টোবর মাসের ২ তারিখে ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় ৩৫ টাকা বৃদ্ধি করে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪৫৬ টাকা।
১ টাকা দাম কমলো ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসে
তার আগে সেপ্টেম্বর, আগস্ট এবং জুলাই মাসেও সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এর পাশাপাশি অটো গ্যাসের দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে এর দাম রাখা হচ্ছে প্রতি লিটার ৬৬ টাকা ৮৪ পয়সা।
আমরা জানি ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাস সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা হয় বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আবাসিক এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ প্রদান করা বন্ধ রয়েছে। যার কারণে শহর, মফস্বল এমনকি গ্রাম এলাকায়ও ব্যাপকভাবে এই গ্যাস মানুষ কিনে থাকে। অন্যান্য ঝামেলা না থাকায় রান্না করা খুবই সহজ এই সিলিন্ডার গ্যাসের মাধ্যমে।
রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও বিভিন্ন চায়ের দোকান এবং হোটেল গুলোতেও এর চাহিদা রয়েছে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডার গ্যাস পাওয়া যায়। সরকার নির্ধারিত দাম যাই হোক না কেন কোম্পানি ভেদে ভোক্তা পর্যায়ে দাম কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। তবুও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে এটি।
বিগত কয়েক মাস থরে দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর চলতি মাসের ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমেছে মাত্র ১ টাকা।
বাসা বাড়িতে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের সতর্কতা
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৬০ লাখের বেশি মানুষ রান্না ও অন্যান্য কাজে এই গ্যাস কিনে থাকে। শহরের তুলনায় গ্রাম অঞ্চলের গ্রাহক সংখ্যা বেশি। এমনকি সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠা মিলিয়ে বাজারে রয়েছে অন্তত ২ কোটি সিলিন্ডার।
আমরা সাধারণত বাসায় রান্নার কাজে যেটা ব্যবহার করি সেটি যথেষ্ট নিরাপদ। কারণ ভেতরে গ্যাস যে চাপ তৈরি করে তার তুলনায় সিলিন্ডারটি অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু তারপরও আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। অনেকেই অবশ্য এই নিয়ে ভয়ে থাকে। তবে সবসময় সচেতনতা অবলম্বন করলে আপনিও থাকতে পারবেন সব সময় নিরাপদ।
প্রতিটি সিলিন্ডারের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। যেটা সাধারণত সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত হয়। তাই দোকান থেকে ক্রয়ের আগে এর মেয়াদ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। এছাড়াও সিলিন্ডারের সেফটি ক্যাপ, রাবারের রিং, রেগুলেটর ইত্যাদি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেগুলো নিয়মিত যাচাই করুন।
বাংলাদেশের উৎপন্ন ১২ কেজি এলপিজি গ্যাস গুলোর সিলিন্ডার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। কিন্তু অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল এবং নিম্নমানের যন্ত্রাংশ বাজারে বিক্রি করার চেষ্টা করছে। তাই কেনার আগে এর কোয়ালিটি যাচাই করে নিবেন।
• এছাড়াও বাসায় ব্যবহার করার সময় এটাকে কখনোই উপর বা কাত করে রাখা যাবে না। গ্যাস সিলিন্ডারের দুর্ঘটনা এড়াতে সব সময় এটিকে সোজা করে রাখুন। সবচাইতে ভালো হয় সে সিলিন্ডার এবং গ্যাসের চুলা সমতল মেঝে বা মাটি থেকে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি উপরে রাখলে।
• গ্যাস সিলিন্ডারের দুর্ঘটনা এড়াতে এটিকে চুলা থেকে যথেষ্ট দূরে রাখুন। এর জন্য বড় পাইপ ব্যবহার করতে পারেন।
• রান্নার পরিবেশ সব সময় খোলা রাখুন। যাতে করে পর্যাপ্ত আলো, বাতাস ঘরের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারে।
• যখন সিলিন্ডার গ্যাসটি পরিবর্তন করবেন তখন চুলাটি ভালোভাবে বন্ধ আছে কিনা যাচাই করে নেয়।
• গ্যাস সিলিন্ডারের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এর উপর ভারী কোন বস্তু রাখবেন না। প্রতিবার রান্না শুরু করার আগে দরজা জানালা সব খুলে দেন।
• আমরা খবরের পত্রিকায় সিলিন্ডার সংক্রান্ত বিভিন্ন দুর্ঘটনা দেখে থাকি। এগুলোর বেশিরভাগই ঘটে বাসা বাড়ি তালা দিয়ে কিছুদিন কোথাও থেকে ঘুরে আসার পর। কোন কারণে যদি সিলিন্ডার কিংবা চুলায় লিকেজ তৈরি হয় তাহলে পুরো ঘর গ্যাসে ভরে যায়। তাই দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসার পর সকল জানালা দরজা খুলে দিয়ে ভালোভাবে যাচাই করুন কোন লিকেজ হয়েছে কিনা।
• এটি ব্যবহার করার সময় কোনভাবে ঝাকানো যাবেনা। এতে করে ভেতরে অনেক বেশি চাপ তৈরি হয় এবং করতে পারেন দুর্ঘটনা।
• সাইকেল বা মোটরসাইকেলে এই ধরনের জিনিস বহন না করাই ভালো। এতে অনেক বেশি ঝাঁকি লেগে দুর্ঘটনা করার সম্ভাবনা বের হয়ে যায়।
নভেম্বর মাসের জন্য ১২ কেজি সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম কমেছে ১ টাকা। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই বস্তুটি কেনার সময় অবশ্যই উপরিক্ত সচেতনতা গুলো অবলম্বন করবেন। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় অবশ্যই আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত। এজন্য বাসায় গ্যাস ডিটেক্টর যন্ত্র কিংবা কম্বলের মতো মোটা কাপড় রাখা প্রয়োজন। কারণ এগুলো দ্বারা সিলিন্ডার গ্যাসের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।