পাকা ও মিষ্টি তরমুজ চেনার উপায় কি

চলছে পবিত্র মাহে রমজান এবং শীতের শেষে বেশ কিছুটা গরমও পড়েছে। বাজার ভরে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং রসালো ফলে। তার মধ্যে পাকা ও মিষ্টি তরমুজ চেনার উপায় কি সেটি হয়তো বা অনেকেই জানেন না। অন্যান্য ফল গুলির গন্ধ শুঁকে কিংবা দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যায় যে কতটা মিষ্টি হবে। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি দেখে সেই উপায় আর নেই।

বিগত কয়েক বছর ধরেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে। বর্তমানে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে এটি সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে। তবে সঠিক অর্থাৎ পাকা একটি তরমুজ কিনতে না পারলে যেন আনন্দ টাই মাটি হয়ে যায়। আর বাইরে থেকে যেহেতু বোঝার উপায়ও তেমন নেই তাই অনেকেই কিনে প্রতারিত হয়ে থাকেন।

পাকা ও মিষ্টি তরমুজ চেনার উপায় কি

যদিও শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই তবুও আমি কয়েকটি কৌশল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। যার মাধ্যমে আপনারা মোটামুটি ভালো এবং মিষ্টির তরমুজ কিনতে পারেন।

তরমুজের গায়ের দাগ দেখুন

প্রায় সকল তরমুজে নিচের দিকে একটি দাগ থাকে। মাটির সংস্পর্শে বেড়ে ওঠার কারণে সাধারণত এর গায়ে একটি দাগের তৈরি হয়। খেয়াল করে দেখবেন এই দাগটি যদি হলুদ কিংবা ক্রিম রঙের হয় তাহলে বুঝতে হবে ফলটি ফাঁকা রয়েছে। আর যদি দাগটি ফ্যাকাসে কিংবা সাধারণের হয় তাহলে বুঝতে পারবেন এটি কাঁচা অবস্থায় রয়েছে।

তরমুজের খোসা পরীক্ষা করুন

যেকোনো তরমুজের খোসাটি খানিকটা মুসৃণ এবং শক্ত হয়ে থাকে। যদি এটি স্বাভাবিকের তুলনায় নরম হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে পারবেন অতিরিক্ত পেকে গেছে অথবা ভেতরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আবার যদি কোন ধরনের ফাটল কিংবা অসমতা থাকে তাহলে এটি কেনা থেকে বিরত থাকুন।

পাকা তরমুজ চেনার আরো কয়েকটি উপায়

• যদি ফলোর গায়ে ছোট ছোট দাগ বা চিহ্ন থাকে তাহলে বুঝতে পারবেন এটা খেতে বেশ মিষ্টি হবে। সাধারণত এই দাগ দ্বারা ভেতরে মিষ্টির পরিমাণ সম্পর্কে অনুমান করা যায়।

• আঙ্গুল বা হাত দিয়ে এর গায়ে টোকা দিন। যদি ভেতর থেকে গম্ভীর এবং গুরগুর শব্দ আসে তাহলে বুঝতে পারবেন এটা খেতে মিষ্টি হবে এবং অনেক পাকা। আর যদি ফাঁপা কিংবা ভোতা টাইপের শব্দ শুনে তাহলে ভিতরে নষ্ট অথবা মিষ্টি নাও হতে পারে।

• যেকোন শাক সবজি কিংবা ফলমূল অবশ্যই সতেজ দেখে কেনা প্রয়োজন। তাই ফলের ডাটার দিকে লক্ষ্য করুন। যে সকল তরমুজ দীর্ঘদিন রেখে পাকানো হয়েছে সেগুলো ডাটা মরে যায় কিংবা সাদা হয়ে যায়। আর যদি এটির রং অনেকটা হলুদ থাকে তাহলে বুঝতে পারবেন এটা পাকা এবং খেতেও বেশ ভালো হবে।

বাজারের সেরা তরমুজ কেনার টিপস

এ ধরনের ফলমূল সাধারণত আকারের তুলনায় অনেক বেশি ভারী হয়ে থাকে। ফলের যত বেশি ওজন তার মানে সেটি তত বেশি মিষ্টি এবং ভেতরে পানি রয়েছে।

আকৃতির দিকে লক্ষ্য করে দেখবেন এটা যেন চারিদিক থেকে সমান আকৃতি হয়। অনেক তরমুজ রয়েছে যেগুলো লম্বাটে কিংবা আকার সবদিকে সমান হয় না। পাকা তরমুজ চেনার উপায় সমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। যেটির আকৃতির সব দিক থেকে সমান হবে সেটি খেতে সবচাইতে ভালো হবে।

যে কোন পাকা এবং মিষ্টি ফলের গন্ধ বৃষ্টি হয়। যদি ভেতর থেকে কোন ধরনের গন্ধ না আসছে তাহলে ধরে নিতে পারেন ভেতরে সাদা অথবা খানিকটা কাছে থাকতে পারে। সেই সাথে কোনভাবেই নরম বা অতিরিক্ত দাগ যুক্ত ফল কিনবেন না। অনেক সময় গায়ের রং সবুজ হতে পারে তবে ভেতরটা ভালো থাকতে পারে।

শরীর আর্দ্র রাখার পাশাপাশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ফলটি আমাদের দেশে গরমের মৌসুমে পাওয়া যায়। এর মধ্যেও প্রায় ৯২% জলে উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তীব্র গরমে কিছুটা ঠান্ডা তরমুজ খেলে মন অনেকটাই প্রশান্তি লাভ করে।

কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় রমজান সহ বিভিন্ন মৌসুমে কেমিক্যালসহ কিংবা নিম্নমানের ফল বিক্রি করার চেষ্টা করে অধিক দামে। উপরের সতর্কতা গুলি অবলম্বন করলেই আপনি তাদের কাছ থেকে প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে।

আবার এখনকার সময়ে সব প্রায় বিক্রেতারা ভেতর থেকে কেটে দেখিয়ে দেয় যে এটি কতটা লাল। যদিও কৃত্রিম উপায়ে এর ভেতরের রঙের পরিবর্তন করা সম্ভব তবুও লাল রঙের কিছুটা অনুমান করা যায় এটি কতটা মিষ্টি হবে। সবচাইতে ভালো হয় কিছু অংশ খেয়ে দেখে নিতে পারলে। এতে করে আপনি নিশ্চিন্তে পরিবারকে একটি ভালো তরমুজ উপহার দিতে পারবেন।

প্রোটিনের পাশাপাশি এই বড় ফল দিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি এসিড যা আমাদের ত্বক এবং চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও এটির বিচিতে রয়েছে সেচুরেটেড এবং ফ্যাটি এসিড। যা আমাদের দেহ হতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আবার যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য উপকারী ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে এই ফলের বীজে।

তরমুজ খেলে কি হয়

যদি উপরে আমি এর বেশ কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে উপস্থাপন করেছে নিম্নে আরো কয়েকটি উপকারিতা তুলে ধরলাম। এই ফলের ভিতরে যে সুন্দর লাল রং দেখা যায় সেটি তৈরি হয় লাইকোপেন উপাদানের কারণে। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা কিনা ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এমনকি সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি হতেও আমাদের ত্বককে বাঁচায়।

আমাদের শরীরে প্রতিটি কোষের কার্যকরী তার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি। সাধারণভাবে একদিনে যদি আমরা প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পান করি তাহলে শরীর আস্তে আস্তে দুর্বল এবং ক্লান্ত বোধ করতে শুরু করে। তাই নিজেকে হার্টের রাখার একটি অন্যতম ফল হচ্ছে তরমুজ।

একটি মাঝারি সাইজের তরমুজের টুকরো ৯ থেকে ১১ শতাংশ ভিটামিন এ থাকে। যেটি আমাদের চোখে সুরক্ষিত রাখে।

অনেকের আবার অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রবলেম রয়েছে। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান। গ্রীষ্মকালীন এই ফলটিতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এমনকি অতিরিক্ত কোন কোলেস্টেরল এবং সোডিয়ামও নেই। তাই যারা ডায়েট করছেন তাদের জন্য অন্যতম একটি খাবার হতে পারে মৌসুমী মিষ্টি তরমুজ।

এছাড়া অন্যান্য বেশ কিছু উপাদান যেমন ফসফরাস আয়রন, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্কও রয়েছে। যাদের অতিরিক্ত ব্লাড সুগারের সমস্যা রয়েছে তা নিয়মিত এই ফলটি খেতে পারেন। আশা করি পাকা ও মিষ্টি তরমুজ চেনার উপায় গুলি এখন আপনারা জানতে পেরেছেন। যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তি এড়াতে ধীরে সুস্থ হয়ে বুঝে শুনে বাজার করুন।

Leave a Comment