দেশের অনুকূল আবহাওয়া এবং অসংখ্য জলাশল থাকায় মুক্তা চাষ পদ্ধতি আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এমনকি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় একটি শিল্প হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তবে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর ভালো এবং বড় বাজার না থাকায়। যদিও বিভিন্ন চাষিরা পাশের কয়েকটি দেশে এটি বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে শত শতর কৃষককে এ ব্যাপারে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তারা আবার নিজেরা সফল হওয়ার পাশাপাশি আরো মানুষকে শেখাচ্ছেন।
মুক্তা কি এবং এটি কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়
সারা পৃথিবী জুড়ে অত্যন্ত মূল্যবান ধাতু হিসেবে এটি পরিচিত। আমরা জানি ঝিনুক থেকে মুক্তা তৈরি হয়ে থাকে। ঝিনুক একটি শান্ত স্বভাবের প্রাণী এবং জলাভূমিতে এরা বসবাস করে। তবুও মুক্তার উৎপাদনের জন্য এটি প্রাচীনকাল থেকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে চাষ করা হয় এবং এর অর্থনৈতিক ইতিবাচক দিক রয়েছে অনেক।
মূল্যবান ধাতু হিসেবে এটি বিভিন্ন ধরনের গহনা অলংকার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
মুক্তা চাষ কিভাবে করা হয়
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মুক্তা উৎপাদনের জন্য ৫ ধরনের ঝিনুক পাওয়া গিয়েছে। এমনকি এক একটি ঝিনুক থেকে সর্বোচ্চ ১২টি পর্যন্ত মুক্তাও পাওয়া যেতে পারে। দামের ক্ষেত্রে এদের রং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের বাজারে উৎপাদিত চারটি রংয়ের এই মূল্যবান ধাতুটি পাওয়া যায়।
মুক্তা চাষীদের কাছ থেকে জানা যায় প্রথমে ঝিনুক সংগ্রহ করতে হয়। তারপর সেগুলোর জন্য বিশাল একটি ডাইস তৈরি করতে হয়। নিউক্লিয়াস পদ্ধতিতে টিস্যু প্রতিস্থাপন করে ঝিনুক গুলোকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয় পানিতে।
এটি সেগুলো যখন প্রতিস্থাপন করা হয় তখন সেখানে অন্য ধরনের ডিজাইন বা নকশা করা যায়। তারপর কয়েক মাসের মধ্যেই ওই নকশার মতোই মুক্তা তৈরি করা যায় বলে তারা জানিয়েছেন।
তবে এর জন্য উপযুক্ত এবং সুস্থ সবল ঝিনুকগুলোকে প্রথমে বেছে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তারপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে এর মধ্য নিউক্লিয় উপাদান গুলি প্রবেশ করানো হয়। এটি বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া তাই এর জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। আপনি যদি এটা চাষে আগ্রহী থাকেন তাহলে মৎস্য ইনস্টিটিউট বা সংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন।
মুক্তা চাষ পদ্ধতিতে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়
যারা এই চাষ পদ্ধতি ছাড়া জড়িত আছেন তাদের সাথে কথা বলার জন্য গিয়েছে যে নিউক্লিয়াসটি অপারেশন করে প্রবেশ করা হয় সেটি বাইরের দেশেতে আনতে হয়।
যদি ভিয়েতনাম থাইল্যান্ড কিংবা চীন থেকে ভাল জাতের ঝিনুক এনে ব্রিডিং করা যায় তাহলে এগুলো থেকে অনেক বেশি টাকা আয় করা সম্ভব।
মুক্তা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
এশিয়ার বিভিন্ন জায়গার তথ্য সংগ্রহ করে জানা গিয়েছে যে বিভিন্ন চাষিরা ১ হেক্টর খামারে মাছের সাথে ঝিনুক ও মত উৎপাদন করে তিন বছরে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পেরেছেন। এর মধ্যে দেশের গোলাপি এবং চোড় মুক্তা খুবই উন্নত মানের এবং বাইরে দেশগুলোতে এর যথেষ্ট কদর রয়েছে।
প্রাকৃতিক মুক্তার আবাসস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয় বঙ্গোপসাগরকে। এছাড়া মহেশখালী এর জন্য খুবই জনপ্রিয়।। কৃত্রিম এই পদ্ধতিতে একটি ঝিনুক থেকে পাঁচ মাসে দুই থেকে তিন মিলিমিটার সাইজের মতো উৎপাদন করা যায়। প্রাচীন পদ্ধতিতে একই আকারের ঝিনুক থেকে এই মুক্তা পেতে সময় লাগতো কমপক্ষে ১ থেকে ২ বছর।
আন্তর্জাতিক বাজারে পাশাপাশি দেশীয় বাজারে মুক্তা চাষ পদ্ধতির জনপ্রিয় হচ্ছে এবং এর চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা তরুণ উদ্যোক্তা রয়েছেন কিংবা নিজেরা কিছু করতে চান তারা এই পেশাটিকে বেছে নিতে পারেন। নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।