প্রকৃতিতে পানি দূষণের ১০টি কারণ কি কি

মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতি এবং পরিবেশকে নানাভাবে ব্যবহার করে। যার কারণে পৃথিবী জুড়ে পরিবেশের দেখা দেয় নানা ধরনের পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তন যখন ক্ষতির দিকে যায় তখন বলে থাকি পরিবেশ দূষণ। ঠিক তেমনিভাবে প্রকৃতিতে পানি দূষণ হয়ে থাকেন নানাভাবে।

বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে বড় সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। যা নিয়ে বিশ্ব পরিবেশ সংস্থা এবং নানা দেশ ইতিমধ্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই আলোকে আমি আজকে পানি দূষণের ১০টি কারণ সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। এ ধরনের প্রশ্ন গুলি মাধ্যমিক পর্যায়ে এসে থাকে এমনকি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও জানা থাকা অত্যন্ত জরুরী।

পরিবেশ দূষণের কারণ এবং এর প্রভাব

প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণে শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং গাছপালা নিধন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন কলকারখানা সচল রাখতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন হয় জ্বালানি। আর এই জ্বালানি গুলো উৎপাদন করে কার্বন ডাই-অক্সাইড যা প্রতিনিয়ত এই বাড়িয়া চলছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা।

এসব কিছুর পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের অন্যতম একটি কারণ। অতিরিক্ত জনসংখ্যার থাকার জন্য গাছপালা নিধন করে বাড়িঘর নির্মাণ তৈরি করতে হচ্ছে, এমনকি নানা ধরনের চাহিদা পূরণ করার জন্য নষ্ট করা হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ।

আবার এই পরিবেশ দূষণের প্রভাব সরাসরি আমাদের মানুষের জীবনে পড়ছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ধরনের রোগ ইত্যাদি। সেই সাথে বেড়ে চলেছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

পানি দূষণের ১০টি কারণ কি কি

বিভিন্ন কারণে খাল বিল নদী নালা সমুদ্রের পানি দূষিত হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে কারণ গুলি নিম্নে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো।

১। পুকুর কিংবা নদীর পানিতে যদি কোনো অসুস্থ রোগীর কাপড়চোপড় পায়খানা, প্রস্রাব ধোয়া হয় কিংবা কোন মৃত প্রাণীর দেহ ফেলা হয় তাহলে সেখান থেকে পানি দূষণ হতে পারে।

২। বিভিন্ন ধরনের কলকারখানা, প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পদার্থ যদি নদী, নালা কিংবা খাল বিলে গিয়ে পড়ে তাহলে সেখানকার পানি দূষিত হতে পারে। আমরা জানি ঢাকা শহরের নদীর পানি দূষণের অন্যতম হচ্ছে এ সকল কর্মকারখানার আবর্জনা।

৩। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাসে মানুষ, পশু পাখি ইত্যাদির মলমূত্র নদী কিংবা খালের পানির সাথে মিশে যায়। সেই সাথে পানি দূষিত হওয়ার পাশাপাশি বৃদ্ধি পায় পানি বাহিত রোগের পরিমাণ।

৪। পানি দূষণের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুকুর কিংবা নদীর পানিতে গবাদি পশু পাখি যেমন গরু, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদি গোসল করানো।

৫। পুকুর কিংবা নদীর পানিতে থালা বাসন ধোয়া এবং ময়লা কাপড়চোপড় পরিষ্কার করলেও পানি দূষণ হয়।

৬। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ কিংবা এমন কোন বস্তু যেগুলো পানির সাথে মিশে বিষাক্ত কোন কিছু তৈরি করতে পারে এমন কিছু নদী কিংবা পুকুরে ফেলে পানি দূষিত হয়ে থাকে।

৭। পুকুর, নদী, খাল বিল ইত্যাদিতে বিভিন্ন ধরনের আগাছা জন্মায়। পরবর্তীতে এই আগাছা গুলো পচে পানিতে মিশে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করতে পারে।

৮। অতিরিক্ত ভূমি ধস হওয়ার কারণে নদীর পানি দূষিত হয়ে থাকে।

৯। কৃষি জমিতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে বৃষ্টি কিংবা বন্যার পানিতে এই সকল রাসায়নিক উপাদান গুলি পুকুর খাল বিল এবং নদী ইত্যাদি জলাশয়ের পানিতে মিশে যায়। এভাবেও প্রকৃতিতে পানি দূষণ হয়ে থাকে।

১০। আমরা জানি অনেক এলাকায় টিউবলের পানিতে আর্সেনিক থাকে। এই আর্সেনিকযুক্ত পানি যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি নদীর কিংবা পুকুরের পানির সাথে মিশে দূষণের পরিমাণ বাড়াতে পারে।

প্রকৃতিতে পানি দূষণ আমরা কিভাবে রোধ করতে পারি

আমি উপরে ইতিমধ্য কারণ গুলি নিয়ে আলোচনা করেছি। যদি এই পানি দূষণের কারণ গুলো সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা যায় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায় তাহলে পানি দূষণ রোধ করা সম্ভব।

এর কারনে বিভিন্ন জলাশয় কিংবা পুকুরের পাশে বাথরুম, পায়খানা, প্রস্রাব ইত্যাদি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেই সাথে যে সকল জলাশয়ে মানুষ গোসল করে কিংবা কাপড়চোপড় পরিষ্কার করে সেখানে গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি ধোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

নদী কিংবা পুকুরের পানিতে কখনোই থালা-বাসন পরিষ্কার করা উচিত নয়। কিংবা রান্নার কাজে ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। তাই নলকূপের পানি রান্নাবান্না এবং খাওয়ার কাজে ব্যবহার করা সবচাইতে বেশি উত্তম।

প্রকৃতি পরিবেশ কিংবা বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে মানুষও অনেকটাই দায়ী। তাইতো পানি দূষণের ১০টি কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে অবশ্যই জানা থাকা উচিত। এমনকি এ সকল বিষয় গুলি পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং প্রতিবেশীদেরকেও জানানো প্রয়োজন। এতে করে সবাই সচেতন থাকতে পারবে এবং প্রকৃতি ও আগের থেকে সুন্দর হতে পারবে।

Leave a Comment