আর কিছুদিন পরেই রমজানের ঈদ। বিভিন্ন ছুটিতে আমরা নানা জায়গায় বেড়াতে যেতে চাই। আর যদি পরিবার-পরিজন নিয়ে পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান যেতে চান তাহলে আজকে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। সময় স্বল্পতা এবং বিভিন্ন কারণে আমরা অনেকেই দূরের কোন পর্যটন স্থানে যেতে পারি না। আবার যারা রাজধানীতে বসবাস করেন তাদের জন্য যানজট সহ নানার কারণে দূরে যাওয়াও খুব একটা সম্ভব হয় না।
তাইতো আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে জানাবো একদিনের মধ্যে কিভাবে পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান করে আসতে পারেন।
অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষ বাংলাদেশের পাওয়া দুষ্কর। উনবিংশ শতাব্দীতে নির্মাণ হওয়া এটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। মূলত এর অসাধারণ স্বৈল্পিক এবং স্থাপত্য নিদর্শনী এটির জনপ্রিয়তা কারণ। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের বুড়িগঙ্গা নদীর পাশেই এটি অবস্থিত।
প্রতিনিয়ত এই দেশ-বিদেশ বিভিন্ন জায়গা হতে এখানে অসংখ্য পর্যটক করতে আসেন। এক সময় রাজাদের বসবাসের জায়গা ছিল এটি। তবে বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে এটি পরিচালিত হয়ে আসছে। পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান আহসান মঞ্জিল এর দুইটি অংশ রয়েছে। যার মধ্যে পূর্ব পাশে একটি রয়েছে যেটাকে বলা হয় প্রসাদ ভবন কিংবা রংমহল।
আবার আহসান মঞ্জুলের পশ্চিম পাশে অংশটিকে বলা হয় অন্দরমহল বা জানানা। এই অংশটি আবাসিক ভবন নামেও পরিচিত। এমনকি হিন্দুস্তানি কয়েকটি ঘর সহ বেশ কয়েকটি আবাসিক ক্রমও রয়েছে। আহসান মঞ্জিলের নিচের তলার পূর্ব দিকে রয়েছে ডাইনিং হল বিলিয়ার্ড এবং কোষাগার।
এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের বড় ফুলদানি, সিন্দুকসহ নবাবদের ব্যবহার নানা ধরনের জিনিসপত্র দেখতে পারবেন। এমনকি দক্ষিনে রয়েছে প্রাকৃতিক দৃশ্য
কিভাবে ও কখন যাবেন আহসান মঞ্জিলে
যাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে শনিবার থেকে বুধবারের মধ্যে হয়ে যেতে হবে। এইবার গুলিতে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত পর্যটকদের প্রবেশের জন্য খোলা থাকে আহসান মঞ্জিল। শুধুমাত্র শুক্রবার বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এটি পর্যটকদের প্রবেশের জন্য অনুমতি দেওয়া থাকে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
আপনি বাংলাদেশের যে কোন এলাকা থেকে প্রথমে আসবেন গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে। এই অঞ্চল থেকে আপনি রিক্সা, সিএনজি, অটো এমনকি ঘোড়ার গাড়িতে করেও আহসান মঞ্জিলায় পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়াও পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থানে আহসান মঞ্জিলে যেতে আপনি ভিক্টর ক্লাসিক কিংবা আজমেরী বাসে উঠতে পারেন।
আর্মেনিয়াম চার্চ ঘুরে আসুন
তুলনামূলকভাবে নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ খুঁজতে চাইলে অবশ্যই আপনি এই স্থানটিতে যেতে পারবেন। এটি মূলত দুই শতকের বেশি পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী গির্জা। যেটি নির্মাণ করেছিলেন জোহান্স কারু পিয়েতে ১৭৮১ সালে। মূলত এখানে গেলে আপনি আর্মেনিয়ামের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং তাদের কারো কাজ সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। এমনকি তৎকালীন সময়ের সবচাইতে বৃহৎ আকারের ঘন্টা ছিল এই চার্চে রাজধানীর মোটামুটি সব এলাকা থেকে শোনা যেত। তবে ১৯৮০ সালে এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত যেকোন সময় আপনি এটি ভিজিট করতে যেতে পারেন।
বাহাদুরশাহ পার্ক পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান
রাজধানীর সদরঘাটের কাছেই এটির অবস্থান। মূলত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে এটি রয়েছে। এর আগের নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক। মূলত ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের যে সকল বীর শহীদ হন তাদের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় এই বাহাদুর শাহ পার্কটি।
লালবাগ কেল্লা
ঢাকা স্থানের মধ্যে আরো একটি জনপ্রিয় জায়গা হচ্ছে লালবাগ কেল্লা। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এটি প্রতিষ্ঠিত হয় মূলত ১৬৭৮ সালে। তবে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ চলতে থাকে। এখানে গেলে আপনি বিভিন্ন ধরনের মসজিদ, দুর্গ ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে পারবেন। যারা কিনা প্রাচীনকালের স্থাপত্যশীল দেখতে পছন্দ করেন এবং ভালবাসেন তাদের জন্য উপযোগী একটি জায়গা।
রোজ গার্ডেন
গোপীবাগ এলাকায় অবস্থিত রোজ গার্ডেন পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সম্ভবত ১৯৩০ সালে তৎকালীন জমিদার এটি গড়ে তোলেন। সম্পূর্ণ বাগানটি ২২ বিঘা জমির উপর নির্মিত হয়। নবাব সেই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে দুর্লভ সব গোলাপ গাছ এনে এখানে লাগিয়েছিলেন। যার কারণে এটি অন্য সকল বাগান থেকে বেশ আলাদা ছিল।
উপরে উল্লেখিত স্থান গুলি ছাড়াও আরো রয়েছে লালকুঠি, রুপলাল হাউস, তারা মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, কার্জন হল, পরী বিবির মাজার ইত্যাদি। এখানে কার্জন হল বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের কথা বোঝানো হয়েছে। যেহেতু এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান তাই অনেকেই এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। ছেলে আপনিও পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন একদিন।