লাল চন্দন গাছগুলি কেন এত দামি হয়ে থাকে

সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে আল্লু আর্জুনের বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা পুষ্পা ২ দ্যা রুল। এই সিনেমার প্রথম পার্টি মুক্তি পেয়েছিল আজ থেকে ৩ বছর আগে। মূলত লাল চন্দন গাছকে কেন্দ্র করে এই নির্মিত হয় এই সিনেমার কাহিনী।

আমরা এর আগে পুষ্পা সিনেমায় দেখেছি কিভাবে কাঠ পাচার করে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করে নায়ক। তবে কাহিনী যাই হোক না কেন সিনেমাটি দেখতে গিয়ে অনেকের মনের প্রশ্ন জেগেছে লাল চন্দন গাছের এত দামী কেন। কি এমন বিশেষত্ব আছে এই গাছের কাঠের।

এই গাছটিকে আবার লাল সোনা বলে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ রেড গোল্ড। কারণ গোল্ডের মতোই মূল্যবান এই গাছটি। লাল চন্দন গাছ খুবই বিরল প্রজাতির। মূলত পুষ্পা সিনেমাটিতে যে জঙ্গলের দেখানো হয়েছে সেটি অবস্থিত ভারতের দক্ষিণ শেষা চলম পাহাড়ে। আর একমাত্র সেখানেই পাওয়া যায় লাল চন্দন কাঠ।

গাছগুলোর উচ্চতা হয়ে থাকে সাধারণত ৮ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত। এমনকি বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন পর্বতের আবহাওয়া।

লাল চন্দন গাছে এত দামি হয় কেন

এই গাছটিকে বলা হয় এনডেমিক স্পিসিস। এনডেমিক স্পিসিস তাদেরকে বলা হয় যারা কিনা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ ওই ভৌগোলিক এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও এটিকে আর পাওয়া যায় না।

যেহেতু ওই এলাকা ছাড়া আর অন্য কোথাও এই লাল চন্দন পাওয়া যায় না তাই এর দামও প্রায় আকাশ ছোঁয়া। কারণ আপনি চাইলে এর বিকল্প উৎস খুঁজে পাবেন না

লাল চন্দন গাছ মূলত ২ ধরনের হয়ে থাকে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে সাদা এবং অপরটি হচ্ছে লাল। সাদা রঙের গাছটির সুগন্ধ থাকলেও লাল রংয়ের কাছে নেই কোন গন্ধ। তবে এই কাঠের রয়েছে বিশেষ কিছু গুণ। যার কারণে পুরো বিশ্বজুড়েই রয়েছে প্রচুর চাহিদা এবং পাচারও হয় বিপুল পরিমাণে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতির সংরক্ষণ সংঘের পক্ষ থেকে এ গাছকে প্রায় বিলুপ্ত শ্রেণীর তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কাঠ চোরাকারবারীরা এই কাঠ এত পরিমাণে পাচার করেছে এবং কেটেছে যে সারা বিশ্বে আর মাত্র ৫ শতাংশই গাছ অবশিষ্ট রয়েছে।

লাল চন্দন গাছের কাঠ কি হিসাব দিয়ে কি করা হয়

এটির ব্যবহার সবচাইতে বেশি রয়েছে ওষুধ এবং আয়ুর্বেদিক শিল্পে। ডায়রিয়া, আমাশয়, হজম সহ বেশ কিছু রোগের চিকিৎসা ব্যবহার করা হয় লাল চন্দন কাঠ। অনেকেই মনে করে থাকেন আমাদের দেহের রক্ত পরিষ্কার করার কার্য করে থাকে রক্ত চন্দন। নানা ধরনের ওষুধের চাহিদা থাকে আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ব্যাপক কদর।

এসব ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পূজা, অর্চনা এবং প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করা হয় এটি থেকে। রক্ত চন্দন গাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের নির্যাস ব্যবহার করে তৈরি করা হয় দামী দামী কসমেটিক্স। প্রাকৃতিকভাবে আগুন প্রতিরোধ করতে অসংখ্য এই গাছটি। কারণ সহজে আগুনে পোড়েনা এই গাছের কাঠ।

লাল চন্দন গাছের দাম কত

আমি আগে বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছি এটি বেশ দামী একটি গাছ। আন্তর্জাতিক বাজারে এই গাছের প্রতি কেজি কাঠ বিক্রি হয় ৩০০০ এরও বেশি টাকায়। ভারতে এটি কাটা কিংবা পাচার করা আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ। এমনকি এটির পাচার রোধ করার জন্য বিশেষ অ্যান্টি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজার, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর সহ বিভিন্ন লাল চন্দন এবং রক্ত চন্দনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উপরে উল্লেখিত বিষয় গুলি ছাড়াও আসবাবপত্র তৈরি, ঘর সজ্জা, বাদ্যযন্ত্র তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় এই গাছের কাঠ।

Leave a Comment