পবিত্র মাহে রমজানের করণীয় ও বর্জনীয় কি কি

যেহেতু সামনে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই তাই রমজানের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে আমাদের এখন থেকেই জানা প্রয়োজন। সিয়াম পালনকারী একজন ব্যক্তির প্রতিটি মুহূর্তে খুবই মর্যাদা পূর্ণ। এমনকি মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের এই মাসের আমল ও সওয়াবকে বহুগুন বৃদ্ধি করে দেন। সুস্থ ব্যক্তির জন্য এই মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেই সাথে বিশেষ কিছু আদবও রয়েছে।

বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত

এই মাসে নাযিল হয়েছিল মুসলমানদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন। বিভিন্ন হাদিসে আসা ফজিলতগুলো সম্পর্কে জেনে আমরা অন্তত এটা বুঝতে পারি যে এই মাসে কুরআন তেলাওয়াত করা খুবই উত্তম। বিভিন্ন মসজিদেও তারাবি নামাজের মাধ্যমে খতম দেওয়া হয়ে থাকে। হাদিস দ্বারা বর্ণিত হয়েছে যে এই মাসে জিব্রাইল (আ.) রমজানের শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাকে কোরআন শুনাতেন। (বুখারী, হাদিস:১৯০২)

বেশি বেশি দান করা

রমজানের করনীয় ও বর্জনীয় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বেশি বেশি দান সদকা করা। এটি সর্বাবস্থায় সর্বোৎকৃষ্ট একটি আমল। আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) ও অনেক দানশীল ছিলেন।

তারাবি নামাজ আদায় করা

রমজান মাসের প্রতিটি রোজার পূর্বে আমরা তারাবির নামাজ আদায় করি। মহান আল্লাহ তাআলার রহমত এবং মাগফিয়াত লাভ করার জন্য এই নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে যে ব্যক্তি ঈমান এবং সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ পড়বে মহান আল্লাহ তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।

রমজানের করনীয় ও বর্জনীয় কাজগুলো কি কি

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন এই মাসে শয়তানগুলোকে বন্দী অবস্থায় রাখা হয়। এই অবস্থায় আল্লাহর নিকট বেশি বেশি নফল ইবাদত এবং প্রার্থনার মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন করা যায়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ এবং সংশ্লিষ্ট নফল ছাড়াও বেশি বেশি ইশরাক, চাশতের এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা প্রয়োজন।

কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা

আমাদের সমাজ পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের জন্য এমন অনেক কর্মকান্ড রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এ ধরনের কল্যাণমূলক কাজ নৈতিকতা বৃদ্ধি করে ও সমাজে অনেক উন্নতি বয়ে আনে।

দোয়া প্রার্থনা করা

বরকতের এই মাসে যত বেশি দোয়া করবো তত বেশি জান্নাতের কাছাকাছি যেতে পারবো। তাই নিজের অতীত ভুল এবং সমস্ত পাপ কর্মকান্ডের অনুশোচনা করে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন।

ইতিকাফে অংশগ্রহণ করা

পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.)। (বুখারী, হাদীস, ২০২১). প্রতিটি এলাকা থেকেই মসজিদে ইতিকাফে অংশগ্রহণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। এমনকি আমরা জানতে পারি যে কোন এলাকার কিংবা মহল্লার কোন ব্যক্তি যদি ব্যক্তিকে ধ্বংস গ্রহণ না করে তাহলে তার দায়ভার পুরো মহল্লার মানুষের উপর বর্তায়।

অন্যকে ইফতার করানো

একজন রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো অনেক বেশি সওয়াবের কাজ। এ ব্যাপারে আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) বলেছেন যদি কোন ব্যক্তি একজন রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করা হয় তাহলে সে তার রোজার সমপরিমাণ সওয়াব অর্জন করবে। তারপরেও কারো সওয়াব থেকে বিন্দু পরিমান হ্রাস পাবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৩৫৭)

রমজান মাসের কোন কাজ থেকে বিরত থাকবেন

এতক্ষণ তো আমরা জানলাম রমজানের করণীয় কাজগুলো সম্পর্কে। এবার চলুন কি কি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নেই।

সকল ধরনের অশ্লীল ও বেহায়াপনা কাজ

ঝগড়া, মারামারি, বিবাদ, অশ্লীল কথা, বেহায়াপনা, গীবত, গান-বাজনা, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইলের টিকটক ইত্যাদি থেকে সবার আগে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই ধরনের কর্মকান্ড কখনোই একজন মুমিন মুসলিমের হতে পারে না। এতে করে মানুষ বিপথে ধাবিত হয় এবং মনের ভিতর কু-চিন্তা চলে আসে।

আমরা রমজান সিয়াম পালন করে সংযমের উদ্দেশ্যে। এই সময় যেকোনো ধরনের গর্হিত তো কাজ থেকে বিরত থাকা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। এমনকি কেউ যদি আপনার উপর ইচ্ছে করে ঝগড়া করতে চায় তাহলেও তাকে এড়িয়ে চলতে হবে। এটাই যেকোনো সময়ের জন্যই প্রযোজ্য। দিয়ে বাজে বকা কিংবা গালি দেওয়া যাবে না।

অযথা কথাবার্তা থেকে এড়িয়ে চলা

শুধুমাত্র খাবার পানাহার থেকে বিরত থাকলেই সিয়ামের ফজিলত পূর্ণ হয় না। বরঞ্চ অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, গীবত ইত্যাদি থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে। আর মিথ্যাকে তো সকল পাপের জননী বলা হয়। আপনি রোজা পালন করছেন ঠিকই কিন্তু মিথ্যা কথা বলছেন এমনটি করার কোন প্রয়োজন নেই। কৃত্রিম পানাহারের ফলে আপনি রমজানের ফজিলত অর্জন করতে পারবেন না।

লোক দেখানো ইবাদত করা

আমরা অনেক সময় এমন সকল কর্মকান্ড করে থেকে যেগুলো শুধুমাত্র মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে। রমজানের করনীয় এবং বর্জনীয় গুলোর মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ধরনের ইবাদত শুধুমাত্র এই মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই করা উচিত। কিন্তু মনে মনে নিয়ত যদি শক্ত না থাকে অর্থাৎ শুধুমাত্র মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে রোজা পালন করেন কিংবা নামাজ আদায় করেন এতে করে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবেন না। তাই নিজের নিয়তকেও ঠিক করা খুবই জরুরী।

আমরা যারা বাসায় বসে থাকি তাদের রমজান মাসে পানাহার থেকে বিরত থাকার কারণে সময় কাটাতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। এর জন্য অনেকেই মুভি সিরিয়াল ইত্যাদি দেখে থাকেন। আর বেশিরভাগ মুভি সিরিয়ালে যেহেতু অশ্লীল এবং নানা ধরনের গর্হিত কর্মকাণ্ড দেখানো হয় তাই আমাদের সিয়াম বা আমলের উপরও সেটির বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই এ সকল কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করে কোরআন তেলাওয়াত নফল ইবাদত এটা লিখেছে নিজেকে নিয়োজিত করুন।

প্রাপ্তবয়স্কদের সবাই প্রায় কোন কোন চাকরি কাজ কিংবা ব্যবসার সাথে জড়িত। কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে থাকার কারণে হয়তোবা নামাজ আদায়ের সহ অন্যান্য আমল গুলো ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এদিকেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এর কারণ এই মাসের ইবাদত অন্যান্য মাসের ইবাদতের চাইতে বহুগুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই এই সুযোগ আমাদের ছেড়ে না দিয়ে কাজে লাগানো প্রয়োজন। হয়তোবা পরবর্তী রমজান মাস আমাদের জীবনের আবার নাও আসতে পারে।

যাদের একদিনের বেশিরভাগ সময়ই অতিরিক্ত চা, কফি, বিড়ি, সিগারেট, পান ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস আছে তারাও এটি এই মাসে ত্যাগ করতে পারেন। এতে করে আপনার স্বাস্থ্যের দিকে অনেক উন্নতি হবে। আশা করি আপনারা রমজানের করণীয় এবং বর্জনীয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন।

Leave a Comment