সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় হচ্ছে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল। শুধুমাত্র এই দেশেই নয় বরং সারা পৃথিবী জুড়েই এর সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। বলতে পারেন এক বিখ্যাত রাজকীয় গাড়ি এটি। এদেশে অফিশিয়াল ভাবে লঞ্চ হওয়ার সাথে সাথেই অগ্রিম বুকিং এর রীতিমত ভীড় জমে গিয়েছে। এমনকি গ্রাহকরা রীতিমতো লাইনে দাঁড়িয়ে প্রি বুকিং দিচ্ছেন।
গত একুশে অক্টোবর সোমবার থেকে দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে রয়্যাল এনফিল্ডের ৩৫০ সিসির বাইক। মডেল ভেদে এর দাম সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকার মধ্যেই। বাইক প্রেমীদের মতে বেশ কম মূল্যই রাখা হচ্ছে।
বিগত সময় গুলোতে এই মোটরসাইকেল বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করতে পারেনি কারণ ১৬৫ সিসির অধিক মোটরসাইকেলে বিধি নিষেধ ছিল। কিন্তু গত বছরে ৩৭৫ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের অনুমতি প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার। যার পরিপ্রেক্ষিতেই ইফাদ মোটরসের হাত ধরে বাংলাদেশের প্রবেশ করেছে বিখ্যাত royal enfield মোটরসাইকেল।
রয়্যাল এনফিল্ড কোন কোম্পানির?
বাংলাদেশের অনেক মানুষের মনে করেন এটি ভারতের ব্রান্ড। কারণ ভারত থেকেই এটি উৎপাদন করা হয় এবং এর সাথে জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। কিন্তু বিখ্যাত এই গাড়ির কোম্পানি বা উৎপত্তি হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। কোম্পানিটির যাত্রা শুরু হয় ১৯০১ সালে দুই ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের হাত ধরে। যাদের একজনের নাম হচ্ছে ওয়াকার স্মিথ এবং অপরজনের নাম হচ্ছে আলবার্ট এডি।
পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে তারা ভারতের আরেকটি মোটর কোম্পানির সাথে সংযুক্ত ভাবে কারখানা স্থাপন করে ভারতের চেন্নাই। যার পর থেকেই পুরো ভারত জুড়ে বিখ্যাত হয়ে ওঠে এই বাইকটি।
মূলত এর আকর্ষণীয় রূপ, শক্তিশালী ইঞ্জিনের কারণেই রাতারাতি জনপ্রিয়তা লাভ করে। সারা পৃথিবী জুড়ে বড় বড় তারকা, হলিউডের অভিনেতা, খেলোয়াড়দের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই রয়্যাল এনফিল্ড।
কিভাবে রয়্যাল এনফিল্ড নামকরণ করা হয়
এনফিল্ড নামক একটি শহরের একটি প্রতিষ্ঠান যার নাম হচ্ছে রয়্যাল স্মল আ-র্ম-স ফ্যাক্টরি। মূলত এই প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি তৈরির অর্ডার পান আলবার্ট এডি যেটি ১৮৯৬ সালের ঘটনা। পরবর্তীতে তারা একটি সাইকেল কোম্পানি ক্রয় করেন যেটির নাম ছিল এনফিল্ড সাইকেল কোম্পানি।
আস্তে আস্তে তারা মোটরসাইকেলের সব ধরনের যন্ত্রপাতি উৎপাদন শুরু করে। তখন সবেমাত্র সারা পৃথিবী জুড়ে এই গাড়িটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই দেখে তারাও সিদ্ধান্ত নেয় মোটরসাইকেল তৈরি করা।
কিভাবে বাজারে আসে এই বাইকটি
সাইকেল কোম্পানি থেকে ধীরে ধীরে চেষ্টার পর ১৯০১ সালের দিকে সর্বপ্রথম নিজেদের একটি বাইক বাজারে আনেন তারা। তখনকার ২৪৯ সিসির সেই মোটরসাইকেলটিতে ছিল ১১.২ এইচপি ক্ষমতা। কিন্তু এটি সবচাইতে বেশি সাফল্য পায় ১৯০৯ সালের দিকে। যেই royal enfield মডেলটির নাম ছিল ভি টুইন।
তারপর থেকে আস্তে আস্তে ব্যাপক চাহিদা শুরু হয় বাজারে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ হতে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ইত্যাদি দেশের সেনাবাহিনীকে মোটরসাইকেল সরবরাহ করে রয়্যাৱ এনফিল্ড।
কেন এত জনপ্রিয় রয়্যাল এনফিল্ড
মূলত অত্যন্ত শক্তিশালী এই বাইকটি বিশ্বস্ততার জন্য বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী লোকদের কাছে খুবই পছন্দনীয়। এমনকি ব্রিটিশ সরকারের সাথে চুক্তি করে মিলিটারি গ্রেডের জন্য স্পেশাল মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে এই কোম্পানিটি। যেগুলো ছিল মূলত ২৫০ এবং ৩৫০ সিসি সেইসাথে ৫৭০ সিসির ইঞ্জিনও ছিল। আপনি জেনে আরো অবাক হবেন যে ইনফিল্ডের ডব্লিউডি / আরআই মডেল গুলোকে প্লেন থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে সরাসরি নিচে ফেলা হতো।
আর তারপরে বাজারে আসে সেই বিখ্যাত মডেল বুলেট। এটি রাতারাতি বাইক প্রেমীদের মনে জায়গা করে নেয়। এটির দুটি ব্যারেল ছিল যার মধ্যে একটি ৩৫০ এবং অপরটি ৫০০ সিসি। পরবর্তীতে কোম্পানিটি বাজারে আনে ৭০০ সিসির সুপার মিডিয়ার এবং সুপার মিডিয়োর কন্সটেলেশন।
১৯৪৯ সালে সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বানানো করা হয় ৩৫০ সিসির বুলেট বাইক। ভারতের সামরিক বাহিনীতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। সীমান্ত পাহারা দেওয়ার জন্য অর্ডার দেয়া হয় ৮০০ ইউনিট royal enfield বাইক।
কোথায় উৎপন্ন হয় রয়্যাল এনফিল্ড
ভারতের মাদ্রাজ মোটরসের সাথে চুক্তি করে এই বাইক উৎপাদন প্রতিষ্ঠানটি। যাই উদ্যোগে চেন্নাইয়ের একটি সংযোজন কারখানা শুরু করা হয়। প্রথমদিকে এখানে শুধু বিভিন্ন পার্টস এনে অ্যাসেম্বলিং করা হতো। পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৬২ সাল থেকে পুরোপুরি ভাবে সকল যন্ত্রাংশ সহ পুরোটাই উৎপাদন শুরু করে চেন্নাইয়ের এই প্রতিষ্ঠানটি।
পৃথিবীর ৫০ টিরও অধিক দেশে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে রয়্যাল এনফিল্ড। এটির জনপ্রিয়তা অন্যতম কারণ আমি আগে একবার বলেছি। অত্যন্ত টেকসই এবং গুণগত মান অনেক ভালো।
প্রতিটি যুবকের অন্যতম শখ থাকে একটি মোটরসাইকেলের। বর্তমানে শহরের মেয়েরাও সমানভাবে বাইক চালিয়ে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেলের কারণে দাম কমতে পারে অন্যান্য গাড়ির। আবার কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন যে যেহেতু রাস্তায় এখনো নামেনি তাই বাজার কেমন হবে সেটা সম্পর্কে আগেই স্পষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।