বিবাহের মাধ্যমে একজন নারী এবং পুরুষের মধ্যে সম্পর্কের বৈধতা প্রদান করা হয়ে থাকে। মানুষের জৈবিক চাহিদা অর্থাৎ সহবাসের পর গোসল না করে নামাজ, সেহরি ইত্যাদি কাজে অংশগ্রহণ করা যাবে কিনা এ ব্যাপারে নানা মনের নানা প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই হয়তো চক্ষুলজ্জা কিংবা কারো সাথে শেয়ার করার সুযোগ পান না। তাদের জন্য আমি এ ব্যাপারে ইসলামিক আলেমদের মতামতেে প্রেক্ষিতে আলোচনা করছে।
নামাজ এমন একটি ইবাদত যেটি দৈনিক ৫ ওয়াক্ত আদায় করতে হয়। আলেম-ওলামাদের মতে মৃত্যু ছাড়া আর কোন অবস্থাতেই এই সালাত মাফ হয় না। এমনকি গুরুতর শারীরিরিক অবস্থাতেও বসে কিংবা শুয়ে নামাজ পড়তে বিধান বা হুকুম দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার মানুষের প্রতি দয়া করে ৫ ওয়াক্ত নামাজের বিধান করেছেন এবং এটি ফরজ ইবাদত। তাই আমাদেরকে সবসময় সালাতের ব্যাপারে অধিক সতর্ক এবং যত্নবান হতে হবে।
সহবাস করে গোসল না করে ওযু করা যায় কিনা বা নামাজ পড়া যায় কিনা
ইসলামিক বিধি-নিষদের মতে স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার পর অবশ্যই ফরজ গোসল করতে হবে। ফরজ গোসল সম্পন্ন হলে নামাজ পড়া যাবে। কিন্তু এই ফরজ গোসল ছাড়া কোন অবস্থাতে সালাত আদায় করার কোন সুযোগ নেই। কারণ নাপাক বা অপবিত্র অবস্থায় নামাজ কবুল হয় না। নামাজ কবুল হওয়ার অন্যতম একটি পূর্ব শক্ত হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন করা। সহবাস করার পর যদি এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয় যে গোসল করতে গেলে দেরি হয়ে যাবে কিংবা ওয়াক্ত চলে যাবে এমন আশঙ্কা থাকলেও আগে গোসল করতে হবে। এরপর নামাজে বিলম্ব করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
সহবাসের কতক্ষন পর ফরজ গোসল করতে হয়
এর জন্য নির্ধারিত কোনো সময় সীমা নেই। তবে আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) এর আমল এবং সালফে সালেহীনের আমল মতে স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ফরজ গোসল সম্পন্ন করাটাই হচ্ছে সুন্নাহ। অর্থাৎ আপনি যত দ্রুত পারেন তত দ্রুতই গোসল করে নেবেন।
সহবাস ছাড়াও যে সকল কারণে আমাদের গোসল ফরজ হয়
• বীর্যপাত, সপ্নদোষ হলে
• মেয়েদের হায়েজ নিফাস হলে
• নব মুসলিম বা অন্য ধর্ম হতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে
ফরজ গোসল করার নিয়ম কি
সহবাসের পর গোসল করার বিষয়টা নিয়ে এখন আপনারা জেনে গিয়েছেন। এবার চলুন এই গোসলটির সঠিক নিয়ম এবং পদ্ধতি গুলো জেনে নেই।
১। সবার আপনার আগে আপনাকে মনে মনে নিয়ত করতে হবে এই গোসলের জন্য। তারপর দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ভালোভাবে ৩ বার ধুতে হবে।
২। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান এবং এর আশেপাশে ধৌত করবেন বাম হাত ব্যবহার করে। তাছাড়া যদি দেহের অন্য কোন জায়গায় আরো কোন নাপাকি কিংবা বীর্য লেগে থাকে তাহলে সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর বাম হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন.
৩। ওযুর মতো করে এবার অজু করতে হবে তবে পা ধুতে হবে না। মাথায় ৩ বার পানি ঢালুন।
উপরোক্ত ধাপ গুলো শেষ হলে আপনার পুরো শরীর ধোয়ার জন্য ৩ বার ডানে এরপর ৩ বার বামে পানি ঢেলে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। গোসল করার সময় খেয়াল রাখতে হবে শরীর কোন অংশ এমনকি একটি লোম যেন শুকনা না থাকে। এর জন্য শরীরে বিভিন্ন অংশ ভাঁজ কিংবা কুচকানো জায়গায় ভালোভাবে পানি পৌঁছাতে হবে।
তারপর পুরো ফরজ গোসল শেষ হলে অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। নারীদের ক্ষেত্রে মাথার চুল এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে দাড়ি, চুল ইত্যাদি ভালোভাবে ধুতে হবে। আলেম-ওলামাদের মতে এই নিয়মে গোসল করলে পরবর্তীতে আর অজু করার প্রয়োজন নেই যদি না অন্য কোন কারণে অজু ভেঙ্গে যায়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে যদি ফরজ বিলম্ব হওয়ার কারণে নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে আপনাকে গুনাহগার হতে হবে। এক্ষেত্রে কোন অযুহাত বা ওজর গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়াও আপনি যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজেকে পবিত্র করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত অপবিত্র অবস্থায় থাকতে হবে। মুসলমান হিসেবে আমাদের সার্বক্ষণিক নামাজের পরিস্থিতি অথবা পবিত্র অবস্থায় জীবন যাপন করা উচিত। তাই সব আসার পর ফরজ গোসল করতে বিলম্ব করা উচিত নয়।