আপনি কি কখনো ভেবেছেন একটি তিমির বমির দাম কত হতে পারে? সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের টেকনাফে ২১ কোটি টাকা মূল্যের তিমি মাছের বমি উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি। সেই সাথে আটক করা হয়েছে একজন পাচারকারীকে। বাংলাদেশে এধরনের ঘটনা এবারই প্রথম। আটকৃত শামসুল আলমের বাড়ি সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাবরাং ইউনিয়নে।
খবরটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। অনেকে একই সাথে অনেকে তিমি মাছের বমির দাম সম্পর্কেও জানতে চাচ্ছেন। টেকনাফের ঘটনায় মোট ৮ কেজি ৩৯৮ গ্রাম তিমি মাছের বমি উদ্ধার করা হয়। যেদিকে বলা হয় অ্যাম্বারগ্রিস। এই ৮ কেজি অ্যাম্বারগ্রিসের বাজার মূল্য প্রায় ২১ কোটি টাকা।
তিমি মাছের বমির দাম কত?
ধরুন আপনি সমুদ্র পাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন কিংবা নৌকায় করে পা দোলাচ্ছেন। এমন সময় পায়ের কাছে বড় আকৃতির একটা বস্তু ভেসে আসলো। জানতে পারলেন এটি আসলে তিমি মাছের বমি এবং এর দাম প্রায় কয়েক কোটি টাকা?
বিশ্বাস হচ্ছে না? এভাবেই আপনি যেকোনো সময় কোটিপতি হতে পারেন তিমির বমি বিক্রি করে। অত্যন্ত দামি এই বস্তুটিকে সারা পৃথিবীতে ফ্লোটিং গোল্ড কিংবা ভাসমান স্বর্ণ বলা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এর নাম হচ্ছে অ্যাম্বারগ্রিস। সারা বিশ্বজুড়ে এর চাহিদা প্রচুর রয়েছে।
এর আগে আমাদের পাশের দেশ ভারতে একটি পাচারকারী চক্রের কাছ থেকে ১৮ কেজি ওজনের অ্যাম্বারগ্রিস জব্দ করা হয়। সেই ১৮ কেজি তিমির বমির দাম ছিল বাংলাদেশের টাকায় প্রায ৪১ কোটি টাকা। বর্তমান দর অনুযায়ী প্রতি কেজি তিমির বমির দাম ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
তিমি মাছের বমি দিয়ে কি করা হয় (Ambergris Price)
ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী আসলে এগুলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয় পারফিউম এবং মেডিসিন। পৃথিবীর দামি দামি সব মেডিসিনের সতেজ রাখার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয় তিমি মাছের বমি। অর্থাৎ যেকোনো ধরনের পারফিউম দীর্ঘদিন সুবাস ধরে রাখার জন্য এবং সংরক্ষণ করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
পারফিউম তৈরি ছাড়াও এর চাহিদা রয়েছে মেডিসিন শিল্পে। অতীত প্রাচীনকাল থেকে চীনে মেডিসিন তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এটি। যার কারণে পৃথিবী জুড়ে এর ব্যাপক চাহিদা।
আবার কিছু কিছু স্থানে এটিকে খাবারের মসলা হিসেবে ব্যবহার করার কথাও শোনা যায়। যদিও এটি আসলে খাওয়ার কোন বস্তু নয়।
তিমি মাছের বমি কিভাবে তৈরি হয়?
মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত ইংরেজ বিজ্ঞানী ক্রিস্টেফার কেম্প তিমির বমি কীভাবে তৈরি হয় সেই সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন কিভাবে এটি তৈরি হয় এবং সমুদ্র পারে ভেসে আসে। এই বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন তিমির পাকস্থলীতে এই বস্তুটি উৎপন্ন হয় এবং এটি তৈরি হতে বেশ সময় লেগে যায়। স্পার্ম জাতের তিমি হাজার হাজার স্কুইট মাছ খেয়ে জীবন যাপন করে। খাওয়ার পর এসকল স্কুইট মাছের কিছু কিছু অংশ হজম হয় না।
হজম না হওয়ার স্কুইট মাছ গুলি পাকস্থলী এবং অন্ত্রের মাঝামাঝি জায়গায় আস্তে আস্তে স্তুপ হতে থাকে। তারপর দীর্ঘদিন বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া এসব স্কুইড তিমি মাছের বমি কিংবা অ্যাম্বার গ্রিসে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে তিমি মাছ সেটি বমির মাধ্যমে অর্থাৎ মুখ থেকে বের করে দেয়।
তিমির বমি সম্পর্কে বিজ্ঞানী ক্রিস্টেফার আরো জানান, প্রাথমিক অবস্থায় এটা যখন মাছের পেট থেকে বাহিরে আসে তখন মোমের মত পিচ্ছিল আকারের হয়। সেই সাথে অনেক দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। তারপর সমুদ্রের নোনা পানিতে ভাসতে ভাসতে এটির পিচ্ছিল ভাব এবং দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায় আস্তে আস্তে সুগন্ধে ছড়াতে থাকে। তারপর শুকিয়ে গেলে এটি পাথরের মত শক্ত হয়ে যায়।
সেই হিসেবে বিজ্ঞানী ক্রিস্টেফার অ্যাম্বারগ্রিসকে আসলে বমি বলতে রাজি নন। আমাদের পাকস্থলীতে কোন খাবার হজম না হয়ে যদি সেটি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায় তখন বলা হয় বমি। কিন্তু কোন কিছু খাওয়ার সাথে সাথেই সাধারণত বমি হয় না।
স্কুইড মাছ খাওয়ার পর তিমির পাকস্থলীতে এটি তৈরি হতে প্রায় কয়েক বছর সময় লেগে যায়। যার কারণে এটিকে বমি বলা যায় না। হাজার বছর ধরে সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার হয়ে আসা তিমির বমির দাম আকাশচুম্বী। যদিও ইদানিং সময় এটার ব্যবহার অনেকটাই কমে এসেছে।
অবশ্য এর পেছনে কারণ রয়েছে। এটি খুবই দুর্লভ বস্তু। এছাড়াও রয়েছে আইনি নানারকম ঝামেলা। পৃথিবীর অনেক দেশে এই ধরনের তিমি শিকারে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং অ্যাম্বারগ্রিস ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনেও রয়েছে কঠোর বিধান। তাই বর্তমানে এটি দুর্লভ বস্তু হিসেবেই বেশি বিবেচিত।
Ambergris Price
বাংলাদেশের কক্সবাজারে এই প্রথমবারের মতো তিমির বমির দাম শুনে আমারও জানতে আগ্রহ হয়েছিল এটি আসলে কিভাবে উৎপন্ন হয় এবং কেনই বা এত মূল্যবান। আশা করি এসকল প্রশ্নের উত্তর আপনারা পেয়ে গেছেন। টেকনাফে উদ্ধারকৃত অ্যাম্বারগ্রিস কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা প্রদান করা হয়েছে।