উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় | হাই ব্লাড প্রেসারের কারণ

হাই ব্লাড প্রেসার আজকাল অনেক মানুষের সাধারণ অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি বয়স্ক মানুষদের পাশাপাশি তরুণরাও তাদের জীবনের বিভিন্ন মানসিক এবং শারীরিক চাপের কারণে এই সমস্যায় ভুগছেন। তাইতো আজকে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় এবং এর কারণ গুলি নিয়ে আপনাদেরকে সচেতন করব। কারণ যদিও এটি সাধারন একটি সমস্যা তবুও যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ব্লাড প্রেসারের স্বাভাবিক পরিসীমা হল ১২০/৮০। আর যদি এই পরিসীমা ১৪০/৯০ কিংবা এর বেশি হয়ে যায় তাহলে এটিকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। প্রতিনিয়তই প্রেসারের সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে পরবর্তীতে এই সমস্যাটি আরো বেশি গুরুত্ব হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ গুলি কি কি

• যেকোনো ধরনের কিডনিজনিত সমস্যা আমাদেরকে হাই ব্লাড প্রেসারের কারণ হতে পারে। সুতরাং যারা ইতিমধ্যে কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদেরও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে।

• ডায়াবেটিস কিংবা রক্তে বেশি পরিমাণে শর্করা উচ্চ রক্তচাপের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম। যারা ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরও ভবিষ্যতে হাই ব্লাড প্রেসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

• আমাদের দেহের হার্ট, কিডনি এবং অন্যান্য প্রধান অঙ্গ গুলি সঠিকভাবে যাদের কাজ করতে পারে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খাদ্য। আর আমরা যদি প্রতিনিয়তই লবণ, মসলা এবং চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খেতে থাকে তাহলেও এটি উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত অল্প বয়সে যারা হাই ব্লাড প্রেসারে আক্রান্ত হন তাদের খাদ্যাভ্যাসে মূল কারণ।

• উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় গুলো জানার জন্য অবশ্যই কারণ গুলিও খুঁজে বের করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব এবং অলস জীবনযাপনও বর্তমানে তরুণ তরুণীদের উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করছে। যারা কোন ধরনের বিরতি ছাড়াই দীর্ঘশ্বক্ষণ বসে থাকেন কিংবা শুয়ে থাকেন তারা এই ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারেন।

• অনেক সময় এন্টিবায়োটিক এবং ব্যথা নাশক ওষুধের অতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে লিভার এবং কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। যেটি উচ্চ রক্তচাপের কারণ গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ।

আবার বংশগতভাবেও এটি অনেকের হয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে পিতা-মাতার থেকে শিশুদের মধ্যেও সহজে সংক্রমিত হতে পারে।

হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলো কি কি

আপনি আসলেই হাই ব্লাড প্রেসার সমস্যায় ভুগছেন কিনা সেটা জানার জন্য নিজের লক্ষণ গুলি ভালোভাবে জেনে নিন।

• উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলোর মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাথা ব্যথা। এমন কেউ সময় সময় মাথা ঘুরাতে পারে এবং চোখের উপরে অতিরিক্ত চাপ অনুভব হতে পারে।

• হঠাৎ করেই হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে এবং দুর্বল, ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।

• যখন ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায় তখন পায়ে ব্যথা হাতে ব্যথা এমনকি ব্যক্তি দাঁড়াতে অক্ষম হতে পারেন।

• যদি ব্লাড প্রেসারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং নিয়মিত সমস্যাটি দেখা যায় তাহলে নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে।

এছাড়া উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বুকে ব্যথা করে বুকের মধ্যে অস্বস্তি অনুভব করা এবং দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি কি

একজন মানুষ কিছু শয়তানতা অবলম্বনের মাধ্যমে সুস্থ থাকতে পারে এবং রক্তচাপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আজকে আমি এমন কিছু প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব যার মাধ্যমে আপনারা নিজেরাই প্রচেষ্টার মাধ্যমে হাই ব্লাড প্রেসারকে কন্ট্রোল করতে পারেন।

১। যদি আপনার হাই ব্লাড প্রেসার থেকে থাকে তাহলে খাবারে অবশ্যই অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে পিংক সল্ট ব্যবহার করার সবচাইতে বেশি নিরাপদ। আপনি যেকোন ই-কমার্স সাইট থেকে পিংক সল্ট অর্ডার করতে পারবেন কিংবা বাজার থেকেও কিনতে পারবেন।

২। পরিণত পরিমাণে পানি পান করা আমাদের রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসেবে একজন ব্যক্তি দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ক্লাস পানি পান করতে পারেন। তবে চাহিদার অতিরিক্ত পানি খাওয়ার চেষ্টা গোপনে করা উচিত নয়

৩। নিয়মিত ব্যায়াম করা, হাঁটাচলা করা, সাঁতার কাটা, লাফানো, ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি খেলাধুলা করা প্রতিটি মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। এর মাধ্যমে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৪। মানসিক চাপ কমানো, রাগ নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি স্বাভাবিক ভাবে আমাদের ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই যত সম্ভব নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখুন এর জন্য বিনোদনমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

৫। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি, ফল ইত্যাদি সুষম জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। এতে করে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ঠিক তেমনিভাবে রক্তচাপ ও ভালো থাকে।

৬। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার, চা, কফি ধূমপান, ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন। বিভিন্ন ধরনের ওমেগা- ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার আমাদের হার্টের সুস্থতা বজায় রাখে এবং রক্তচাপ ভালো থাকে।

যেকোনো বয়সেই মানুষের জন্য সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে পরিণত পরিমাণে ঘুম। তাই রাতের বেলা যত সম্ভব ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং মোবাইল ল্যাপটপ এটাতে ডিভাইসের ব্যবহার করুন।

আর যদি উপযুক্ত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ না করে কোনভাবেই ব্লাড প্রেসার এর উন্নতি না হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তবে মনে রাখবেন সঠিক জীবন যাপন এবং খাদ্যা বাসের মাধ্যমেই উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় নিহিত।

Leave a Comment