ভূমিকম্প হলে কি করবেন | তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ

বিগত কয়েক মাসের মধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের কথা আমরা শুনেছি। ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়টি আমাদেরকে মাঝে মাঝেই ভাবায়। তাইতো ভূমিকম্প হলে কি করবেন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা সহ নানা বিষয় জেনে রাখুন। এতে করে আপনার ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচতে পারে।

অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হওয়ার আগে আমরা দেশ পূর্বাভাস পেয়ে থাকি। এমনকি আবহাওয়ার সংবাদেও বারবার সতর্ক করে দেওয়া হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, টর্নেডো ইত্যাদির মতো পূর্বাভাস দিয়ে সাধারণত ভূমিকম্প হয় না। এমনকি নির্দিষ্ট কোন সময় হবে সেটা সম্পর্কেও জানাবে মুশকিল। তাই এ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকা জরুরী যাতে করে আপনি এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটি মোকাবেলা করতে পারেন।

আর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগটি তৈরি হয় সাধারণত ভূমির কম্পনের মাধ্যমে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে এখনো উত্তপ্ত রয়েছে। এর বিভিন্ন অংশ ঠান্ডা হয়ে সংকুচিত হয়ে গেলে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। তারপর আশেপাশে এলাকা থেকে সে ফাঁকা জায়গা পূরণ করার জন্য শিলাস্তর গুলি যখন নিচে নেমে আসে তখনই পৃথিবীর উপরিভাগে বিরাট কম্পনের তৈরি হয়।

ভূমিকম্প হলে কি করবেন বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা

এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়ে থাকে। আর এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পুরো একটি শহরে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

যেকোনো দুর্যোগে প্রতিকার করার চাইতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সবচাইতে উত্তম। তাই বসবাসের বাড়িঘর এমনভাবে নির্মাণ করা উচিত যাতে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেটি ভেঙে না পড়ে।

আর যদি আপনি বুঝতে পারেন এটি শুরু হয়েছে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব বাইরে গিয়ে খোলা কোন স্থানে আশ্রয় নেয়া উচিত। এমন জরুরী পরিস্থিতিতে অবশ্যই শান্তভাবে আপনাকে ভাবতে হবে। ঘরের ভেতর কিংবা বিল্ডিং এর নিচে যদি থাকেন তাহলে চেষ্টা করবেন বাইরে গিয়ে খোলা মাঠে দাঁড়ানোর জন্য। আর যদি সেটি সম্ভব না হয় তাহলে চেষ্টা করুন হাটের নিচে অথবা টেবিল এর নিচে আশ্রয় নেওয়ার।

যেত এ সময়টাতে বিল্ডিং প্রচণ্ড জোরে নড়ে ওঠে তাই কাচের জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। তা না হলে ঢাকায় এ সকল জিনিস আপনার উপর এসে পড়তে পারেন এবং আহত হতে পারেন।

বিভিন্ন বড় বড় কলকারখানা কিংবা আবাসিক ভবন গুলোতে এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য আলাদা একটি খোলা স্থানের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে করে অত্যন্ত দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া যায়। এমনকি ভূমিকম্প হলে কি করবে সে সম্পর্কে আগে থেকেই যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

তবে খেয়াল রাখবেন কোনোভাবেই গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদির কাছাকাছি না থাকার জন্য। আর এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি মাথায় রাখবেন। যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস এবং বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করলে দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়।

প্রতিটি বাসার সাথে ফায়ার সার্ভিস এবং জরুরী সেবার নম্বর টানিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন। যাতে করে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে যে কেউ এই নম্বরে ফোন দিয়ে সাহায্য চাইতে পারে।

লিফট ব্যবহার

কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে লিফট ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ আপনি লিফটে প্রবেশ করলেন এবং সেই সময়েই বিদ্যুৎ সংযোগ চলে গেল তাহলে আটকা পড়ে যাবেন এবং জীবন হুমকির মধ্যে পড়বে। সেই সাথে বারান্দা থেকে লাফ দেওয়ার চিন্তাভাবনাও করবেন না। ঠান্ডা মাথায় কোথাও আশ্রয় নিন। মোবাইল থাকলে আপনার অবস্থানের কথা বাইরের কাউকে জানিয়ে রাখুন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে সতর্ক থাকা

এখন মোবাইল এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় আমরা খুব সহজে আবহাওয়া সংবাদ পড়তে পারি। ঝড়-বৃষ্টি, কোন এলাকায় কখন ভূমিকম্প হচ্ছে সে সম্পর্কে নিয়মিত খবর জেনে রাখুন।

কারণ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস খুব সহজে অনুমান করা যায় না। এমনকি কোন প্রযুক্তিও এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি যেটি দ্বারা এর পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। অনেকে দাবি করে থাকেন এ ব্যাপারে তবে সেগুলোর বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই।

আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার যে দাবি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে করা হয় তা সঠিক ছিল না।

তবে যে কোন দেশের ভূপৃষ্ঠ এবং তার অভ্যন্তরে অঞ্চলের গঠন বিশ্লেষণ করে কিছুটা অনুমান করা যায়। সেখানকার শিলার স্তর কি অবস্থায় আছে এবং কবে ভেঙে পড়তে পারে সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে অনুমান করা হয় যে বছরের কোন সময়ে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।

এখানে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে বিভিন্ন প্রাণী এবং পাখিরা কিভাবে এই পূর্বাভাস বুঝতে পারে সে সম্পর্কে গবেষণা চলছে। এতে করে হয়তোবা ভবিষ্যতে আমরা সঠিক সময় জানতে পারবো এবং ভূমিকম্প হলে কি করব সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করাও আমার জন্য আমাদের জন্য সহজ হবে।

Leave a Comment